ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য গত ২ ফেব্রুয়ারি ৯৩ বছরের চিকিৎসক এবং ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মণি ছেত্রীকে জামিন দিয়েছিল আলিপুর আদালত। এ বার জামিন পেলেন ওই হাসপাতালের পরিচালন কমিটির অন্য চিকিৎসক-প্রতিনিধি প্রণব দাশগুপ্তও। বৃহস্পতিবার আলিপুর জেলা ও দায়রা আদালত আমরির প্রণববাবুর জামিন মঞ্জুর করায় অগ্নিকাণ্ডের মামলায় ওই হাসপাতালের পরিচালন বোর্ডে থাকা দুই চিকিৎসক-প্রতিনিধি আপাতত মুক্ত। মণিবাবু ও প্রণববাবুকে গত ২৭ জানুয়ারি তাঁদের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে। সেই মামলায় আমরি-কর্তাদের মধ্যে তিন জন জামিন পেলেন। অন্য জন রাধেশ্যাম অগ্রবাল। কলকাতা হাইকোর্ট তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল। হাইকোর্ট অবশ্য আমরির অন্য চার ডিরেক্টর রাধেশ্যাম গোয়েনকা, প্রশান্ত গোয়েনকা, রবি তোদি ও মণীশ গোয়েনকার জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। জামিনের জন্য তাঁদের এখন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাতে হবে। আমরির অন্য তিন কর্তা এখনও ফেরার।
এ দিন জেলা ও দায়রা বিচারক অনিন্দ্য ভট্টাচার্য আমরির অন্যতম ডিরেক্টর প্রণববাবুকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ, প্রণববাবুর পাসপোর্ট আমরি মামলার তদন্তকারী অফিসারের কাছে জমা রাখতে হবে। সপ্তাহে দু’দিন করে তাঁকে হাজিরাও দিতে হবে থানায়। বিচারক আরও জানান, আদালতের নির্দেশ ছাড়া কলকাতা পুলিশের এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না আমরির অন্যতম ডিরেক্টর প্রণববাবু। অগ্নিকাণ্ডের সময় ওই অভিযুক্ত কলকাতায় ছিলেন না বলে এ দিনের নির্দেশে মন্তব্য করেছেন বিচারক।
প্রণববাবুর জামিনের আবেদন জানিয়ে তাঁর আইনজীবী এস কে কপূর আদালতে বলেন, ঘটনার সময় তাঁর মক্কেলে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। ওই সফর পূর্বনির্ধারিত ছিল। ১৫ ডিসেম্বর তিনি এ শহরে ফেরেন। আইনজীবী দাবি করেন, তাঁর মক্কেল আমরিতে শুধু চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ই দেখতেন। তাঁর উপরে প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল না। হাসপাতাল থেকে কোনও টাকাও পেতেন না তিনি। ২০১১ সালে মার্চে আমরির ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স’-এর একটি বৈঠকেই সামিল হয়েছিলেন তিনি। ঢাকুরিয়ায় ওই হাসপাতালে তাঁর আলাদা কোনও অফিসও ছিল না।
জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী শক্তি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, এটি কোনও চিকিৎসায় গাফিলতির মামলা নয়। প্রণববাবুকে চিকিৎসক বা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সভাপতি হিসেবে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি গ্রেফতার হয়েছেন আমরির এক জন ডিরেক্টর হিসেবে। অভিযুক্ত পক্ষও তা স্বীকার করে নিয়েছে। শক্তিবাবু বিচারককে বলেন, ওই হাসপাতালের বেসমেন্টে গ্যারাজের বদলে ফার্মাসি থাকার কথা জানতেন প্রণববাবু। সেখানে দাহ্য পদার্থ মজুত থাকার কথাও তাঁর অজানা ছিল না। বেসমেন্টটি বন্ধ থাকার কথা জানতেন বলেই ওই হাসপাতালে গেলে রাস্তায় গাড়ি রাখতেন তিনি। শক্তিবাবুর কথায়, “সব জেনেশুনেও চোখ বন্ধ করে ছিলেন আমরির ওই ডিরেক্টর।” |