সাগর দত্ত হাসপাতাল
ফেরানো হচ্ছে রোগীদের, দেখে গেল এমসিআই
রিকাঠামোর অভাব যে রয়েছে, সেই তথ্য সামনে এসেছিল আগেই। কিন্তু অভাবের মাত্রা কতটা, তা এ বার ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-র পরিদর্শকদের সামনে বেআব্রু হয়ে গেল।
বৃহস্পতিবার সকালে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমসিআই-এর পরিদর্শকেরা যখন ঘুরছেন, তখন ওই হাসপাতালেই ন্যূনতম চিকিৎসার অভাবে ইমার্জেন্সি থেকে একে একে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। অল্প দিনের মধ্যেই এই মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের ‘ক্লিনিক্যাল ক্লাস’ শুরু হবে। জটিল রোগের চিকিৎসা দূরে থাক, যেখানে সাধারণ রোগের চিকিৎসাই না-করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, সেখানে মেডিক্যাল পড়ুয়ারা কী শিখবেন, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চিকিৎসক সংগঠন ‘হেল্থ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক হীরালাল কোনারের মন্তব্য, “এই নেই-রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ চালু করায় আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গ বেশ কিছু অসম্পূর্ণ চিকিৎসক পেতে চলেছে। যা সমাজের পক্ষে নিঃসন্দেহে ভয়াবহ।” রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, “সবাই সব কিছু শিখে বেরোয় না। শেখায় যেটুকু অভাব থাকবে, সেটা কাজ করতে করতে শিখে নিতে হবে।”
এই ‘অভাব’টা কোন পর্যায়ে, এ দিন মালুম হল ইমার্জেন্সিতে। বেলা তখন ১১টা। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছিল সাড়ে তিন বছরের প্রবাল। বুকে, হাত-পায়ে গরম তেল পড়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। তাকে নিয়ে তার মা ছুটতে ছুটতে ইমার্জেন্সিতে এসেছেন। কিন্তু কোথায় কী? এ সব ক্ষেত্রে সাধারণ কোনও হাসপাতালে গেলেও যে প্রাথমিক চিকিৎসা মেলার কথা, সেটা দিতেও কেউ এগিয়ে এলেন না। বেশ কিছুক্ষণ কাকুতি-মিনতির পরে তাকে টিটেনাস দেওয়া হল। তারও কিছু পরে বরফ ঘষা হল পোড়া জায়গায়। ব্যস, এটুকুই। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানালেন, পোড়ার চিকিৎসায় যে বিশেষ ‘প্যাক’ প্রয়োজন, তা তাঁদের কাছে মজুত নেই। তাই চিকিৎসা সম্ভব নয়।
ষাটোর্ধ্ব এক মহিলার কান দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে। সঙ্গী আর এক মহিলা কাতর হয়ে চিকিৎসকদের ডাকাডাকি করছেন। কিন্তু কারও দেখা নেই। কর্তব্যরত নার্স পাশের ঘরে যেতে বললেন। সেখানে একটি অপরিচ্ছন্ন খাটে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে ওই বৃদ্ধার ক্ষতস্থান সেলাই করতে এলেন এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। চিকিৎসক কেন আসবেন না? সেই প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারেননি।
শুধু এই দু’জন নয়। আউটডোরে আসা রোগীরাও জানিয়েছেন, সাধারণ জ্বর, পেটখারাপ ছাড়া অন্য কোনও রোগে এই হাসপাতালে চিকিৎসা মেলে না বললেই চলে। অধিকাংশ প্রেসক্রিপশনেই একটা শব্দ লেখা ‘রেফার’।
অথচ, এই মেডিক্যাল কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে ছ’মাস হল। পড়ুয়া ৯৬ জন। তবু অ্যানাস্থেশিওলজি, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলজি, ফরেন্সিক বিভাগ চালুই হয়নি। পড়ুয়ারা হাতেকলমে কী শিখবেন? পরিকাঠামো নেই এই অভিযোগ তুলে সদ্য পদত্যাগ করেছেন অধ্যক্ষ তাপস ভট্টাচার্য। তিনি বললেন, “অগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইট-সিমেন্টের কাজ ছাড়া পরিকাঠামোগত কোনও পরিবর্তন হয়নি। এমসিআই-পরিদর্শনের কথা ভেবে কয়েক জন শিক্ষক-চিকিৎসক নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি পরিকাঠামো না-থাকলে পড়ুয়ারা শিখবে কী?” মুখ খুলতে চাননি নতুন অধ্যক্ষ দেবব্রত সর্বপল্লি। তাঁর বক্তব্য, “সাত দিন হল দায়িত্ব নিয়েছি। এখনই কোনও মন্তব্য করব না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.