|
|
|
|
মা-ছেলেকে বেঁধে লুঠপাট দুই মাইলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বেসরকারি ব্যাঙ্কের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক এবং তাঁর মাকে বেঁধে, আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না, নগদ টাকা নিয়ে পালাল ডাকাত দল। বুধবার গভীর রাতে ভক্তিনগর থানার দুই মাইল লাগোয়া জ্যোতিনগরে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাচক্রে তিনতলা বাড়িটির দোতলায় পুলিশের ভক্তিনগর এলাকার ট্রাফিকের ওসি সুবীর দত্ত থাকেন। ঘটনার সময় তিনিও কিছু টের পাননি। পরে ওই পুলিশ অফিসার থানায় ফোন করেন। ততক্ষণে দুষ্কৃতী দলটি পালিয়ে যায়। প্রশিক্ষিত পুলিশ কুকুরও তদন্তে নামে। দুষ্কৃতীরা বাড়ির পিছনের অংশের একটি মাঠ দিয়ে ইস্টার্ন বাইপাসের দিকে পালিয়েছে বলে পুলিশ মনে করছে। পুলিশ জানিয়েছে, মা রাধাদেবীকে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে সুরজ ছেত্রী নামের ওই ব্যাঙ্ক কর্মীর বাঁ হাতে এবং কাঁধে ধারাল অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। ঘটনার সময় মা ও ছেলেও কেবলমাত্র বাড়িতে ছিলেন। সুরজবাবুর বাবা কিশোরবাবু এলাকায় তাঁদের আরেকটি বাড়িতে ছিলেন। সুরজবাবুর স্ত্রী সুনীতাদেবী শহরের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। গত সোমবারই তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সুরজবাবু বছর খানেক ধরে মেঘালয়ের শিলং-এ কর্মরত। সন্তানের জন্ম এবং বাড়ির তিনতলা অংশের কাজের জন্যই সম্প্রতি তিনি ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। সুরজবাবুর আত্মীয়েরা জানিয়েছেন, শাশুড়ি এবং পুত্রবধূর প্রায় ১৫ ভরি সোনার গয়না ছাড়াও বাড়িতে নগদ প্রায় ২ লক্ষ টাকা রাখা ছিল। এছাড়াও দুটি ক্যামেরা এবং একটি ডিভিডি নিয়ে গিয়েছে ডাকাত দলটি। সমস্ত কিছু জানার পরেই দলটি হানা দিয়েছে বলে ওই পরিবারের অনুমান। |
|
ডাকাতির পরে লন্ডভন্ড বাড়ি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
পাশাপাশি, বাড়িতে এক পুলিশ অফিসার ভাড়া থাকলেও তাঁর আসা যাওয়ার সময় দলটি অজানা নয় বলেই মনে করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। এলাকাটি শিলিগুড়ি পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে পড়লেও জলপাইগুড়ি জেলার অধীন। ঘটনার পর জলপাইগুড়ির ডিএসপি হরিপদ শী-সহ জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা তদন্তে আসেন। ডিএসপি শুধু বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতেই মাটিগাড়ার কলমজোতে একইভাবে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে একটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনার পিছনে কোনও একটি দলের হাত রয়েছে কী না তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ঘটনার পর গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া ফ্ল্যাট এবং জনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় ভক্তিনগর পুলিশের নজরদারির অভাবেই ঘটনাটি ঘটেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। সুরজবাবুর মা রাধাদেবী জানান, রাত আড়াইটা নাগাদ কিছুর খোলার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। পাশের ঘরে ছেলে ছিল। তখনও বুঝিনি ৮ জনের দলটি বাড়ির মূল দরজার তালা, লক ভেঙে ঘরে ঢুকে পড়েছে। ঘরের দরজা খুলতেই অন্ধকারে ওরা চেপে ধরে। ধাক্কাধাক্কি করে মাথায় রিভলবার ঠেকায়। ছেলে টের পেয়ে আসতেই ওঁকে ধারাল কিছু দিয়ে আঘাত করে। দু’জনকে চাদর, টাওয়েল দিয়ে বেঁধে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে বাড়ির দুটি আলমারির চাবি নিয়ে নেয়। জোরে সিলিং ফ্যান চালিয়ে আলো জ্বালিয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক লুঠপাট চালায়। বাইরে সম্ভবত আরও কয়েকজন ছিল। রাধাদেবীর বাপের বাড়ি লাগোয়া এলাকাতেই। তাঁর দুই ভাই প্রদীপ শর্মা এবং দীপক শর্মা জানান, দুষ্কৃতীরা যাওয়ার সময় ভাগ্নের মোবাইলটি খুলে ব্যাটারি নিয়ে যায়। দিদির মোবাইল কোনও ভাবে বালিশের কভারের ঢুকে গিয়েছিল। কোনওক্রমে দিদি ও ভাগ্নে মোবাইলটি বার করে আমাদের মিস কল দেয়। তারপরেই মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। বিপদ টের পেয়ে দু’জনকে উদ্ধার করে পুলিশ অফিসার সুবীরবাবুকে তিন তলায় ডেকে তুলি। সুবীরবাবু বলেন, “রাত ১২টা পর আমি শুতে গিয়েছি। কোনও আওয়াজ পাইনি। বাড়ির গেট অকেজো থাকায় দলটির সুবিধা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|