শূন্যপদ-পূরণে প্রায় ১০ হাজার কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সে-সব শূন্যপদে বেকারদের নিয়োগের পরিকল্পনা নেই সরকারের। অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদেরই ফের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ওই সব শূন্যপদে। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় এ সংক্রান্ত নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে। আর তার পরেই কর্মচারী সংগঠনগুলি বেকারদের বঞ্চিত করার অভিযোগে সরব হয়েছে।
রাজ্য সরকারের প্রতিটি দফতরেই প্রচুর পদ শূন্য। কর্মী-অপ্রতুলতার কারণে বহু দফতরের অবস্থাই সঙ্গিন। সে-সব শূন্যপদের কিছুটা পূরণ করতেই চুক্তির ভিত্তিতে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার। নির্দেশিকা অনুযায়ী যে ৯ হাজার ১৪৩টি পদে নিয়োগ হবে, তার বেশির ভাগই জেলা কালেক্টরেট, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে। কিন্তু কেন বেকার যুবক-যুবতীদের নিয়োগ না করে অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত, সেই প্রশ্ন তুলেছে বামপন্থী কো-অর্ডিনেশন কমিটি-সহ একাধিক কর্মচারী সংগঠন। কো-অর্ডিনেশনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক গঙ্গাধর বর্মন বলেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছি। বেকাররা কী দোষ করল? তাঁদেরও না-হয় প্রথমে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করানো যেত। যাঁরা উপযুক্ত প্রমাণ হতেন, ভবিষ্যতে তাঁদের স্থায়ী করা যেত। বহু পরিবারের কষ্ট লাঘব হত।”
অ-বাম সংগঠনগুলিও পুনর্নিয়োগের বিরুদ্ধে। তবে তারা এখনই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটতে চাইছে না। তাদের যুক্তি, রাজ্য সরকার এখন প্রবল আর্থিক সঙ্কটে। তাই এখনই প্রতিবাদ ‘সঙ্গত নয়’। স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের জেলা সম্পাদক সুব্রত সরকার বলেন, “বর্তমানে চরম আর্থিক সঙ্কট চলছে। কিন্তু কাজের জন্য লোক প্রয়োজন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু দিনের জন্য হয়তো অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগ হচ্ছে। এই পদ্ধতি বহাল থাকলে তখন নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করব। না হলে নতুন প্রজন্ম চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।” স্টেট গভনর্র্মেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনে (ইউনিফায়েড) জেলা সম্পাদক অরুণ প্রতিহারেরও বক্তব্য, “রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে পুনর্নিয়োগ মেনে নিতে হচ্ছে। তবে এই নিয়োগ হচ্ছে স্বল্প সময়ের জন্য। যাতে পরবর্তী ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মই চাকরি সুযোগ পায়, সে জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করব।”
রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের অনুমোদিত সচিব পদ রয়েছে ৩৩৫১টি। তার মধ্যে ৩৮৮টি পদ শূন্য। নির্মাণ-সহায়কের পদও রয়েছে ৩৩৫১টি। ৭০০ পদ শূন্য! এ ছাড়াও জেলা কালেক্টরেট, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর-সহ একাধিক দফতরে প্রচুর পদ শূন্য। এই অবস্থায় নির্মাণ-সহায়ক পদে মাসিক ১২ হাজার টাকা এবং পঞ্চায়েত সচিব পদে মাসিক ১০ হাজার টাকার বেতন-চুক্তিতে ৬০ থেকে ৬৪ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।
১৫টি বা তার বেশি ব্লক রয়েছে, এমন জেলাগুলিতে ২০০ জন করে কর্মী নেওয়া হবে। ১৫ ব্লকের কম জেলায় ১২০ জন করে নিয়োগ করা হবে। বড় জেলায় ১০০ জন কালেক্টরেটে, ১০০ জন ভূমি দফতরে, ছোট জেলায় ৬০ জন কালেক্টরেটে এবং ৬০ জন ভূমি দফতরে নিযুক্ত হবেন। সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র, আমিন, ব্লক ওয়েলফেয়ার অফিসার, পঞ্চায়েত ডেভলপমেন্ট অফিসার, খাদ্য দফতরের সাব ইন্সপেক্টর, অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচার এক্সটেনশন অফিসার, রেভিনিউ ইন্সপেক্টর, ড্রাফটসম্যান মিলিয়েও ৪৫১০ জনকে নিয়োগ করা হবে। পদ অনুযায়ী যাঁদের মাইনে হবে ১০ হাজার, ১২ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা। জেলা প্রশাসন কমিটি তৈরি করে শীঘ্রই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। |