নামটা ঠিক বলছেন তো?
শ্রীনগর থেকে সেনাবাহিনীর এক অফিসার যখন ফোন করে বসিরহাটের গোলদারপাড়ার বাড়িতে জানান যে, সুবেদার মহাদেব গায়েন (৪৫) কাশ্মীরে তুষারধসে মারা গিয়েছেন, সে কথা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তাঁদের পরিবারের লোকজন। মাত্র এক মাস আগে ছুটি নিয়ে বসিরহাটের হরিশপুর গোলদারপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন মহাদেববাবু। দিন পনেরো থেকে ফিরে যান কর্মস্থলে। বৃহস্পতিবার সকালে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে যখন ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পেলেন তাঁর বড়দা মধুসূদনবাবু, তখন বার দু’য়েক ওই অফিসারকেই জিজ্ঞাসা করেছেন, নামটা ঠিক মহাদেব গায়েনই তো? তার পর যখন জানলেন, পরিচয়পত্র দেখে তাঁর ভাইয়ের দেহ শনাক্ত করা হয়েছে, তখন আর স্থির থাকতে পারেননি মধুসূদনবাবু। গোটা পরিবারই শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
|
মহাদেব গায়েন। নিজস্ব চিত্র। |
তাঁদের পরিবার-সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাদেববাবু সেনাবাহিনীতে আছেন প্রায় ২৬ বছর। বিভিন্ন জায়গায় সুনামের সঙ্গেই কাজ করেছেন। বর্তমানে কাশ্মীরের গুরেজে ৫২৩১ নম্বর ব্যাটেলিয়নে সুবেদার পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। মধুসূদনবাবু জানান, তাঁরা ছয় ভাই। তাঁর আরও দুই ভাই সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ছোট ভাই মহাদেব স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে হরিয়ানায় থাকতেন। বসিরহাটে গ্রামের বাড়িতে তাঁরা পাঁচ ভাই থাকেন। ছোট ভাইয়ের বড় মেয়ে পর্ণা বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে প্রীতিকা পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। তিন দিন আগে বউমা হঠাৎ তাঁকে ফোন করে জানান, মহাদেব যে ছাউনিতে কর্মরত ছিলেন, অতিরিক্ত তুষারপাতে সেই ছাউনির সকলে বরফে চাপা পড়েছেন। তার পরে থেকে স্বামীর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারছেন না। এই খবর পাওয়ার পরে মধুসূদনবাবু সঙ্গে সঙ্গে শ্রীনগরে ভাইয়ের ব্যাটেলিয়নের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ দিন মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার আগে পর্যন্ত ভাইয়ের খোঁজে বারবার ফোন করে গিয়েছেন। কিন্তু কোনও খোঁজই দিতে পারেননি সেনা কর্তৃপক্ষ। তবু আশা ছিল, মহাদেববাবু নিশ্চয়ই বেঁচে রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এ দিন সকালে সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তুষারধসে বরফ-চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন মহাদেববাবু-সহ চার জন সেনাকর্মী। তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়েছে। মহাদেববাবুর দেহ দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার বিকেলের উড়ানে তাঁর দেহ কলকাতায় পাঠানো হবে। গ্রামের মানুষ জানান, মিশুকে ছিলেন মহাদেববাবু। যখন ছুটিতে আসতেন, সেনাবাহিনীতে কাজের নানা অভিজ্ঞতার কথা শোনাতেন। এ বার ছুটিতে এসেও অনেক গল্প করেছেন। এ ভাবে যে তিনি মারা যাবেন, সেটা এখনও মানতে পারছেন না প্রতিবেশীরা।
|