টলমল পায়ে হাঁটার দিন বোধহয় শেষ। বিপদে পড়লে আর খুঁজে নিতে হচ্ছে না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং মনোজ তিওয়ারির বিশ্বস্ত দুটো ব্যাট। বিপক্ষ অধিনায়ক যদি প্রশ্ন তোলেন, ‘ওদের তো মনোজ নেই। ব্যাটিংটা দুর্বল হয়ে গেল না?’ পরিচিত গুটিয়ে যাওয়া ভঙ্গির বদলে পাল্টা জবাব আসে, ‘তাই নাকি? মাঠেই দেখা যাবে কে দুর্বল আর কে শক্তিশালী!’
প্রথম বক্তা সৌরভ তিওয়ারি। ঝাড়খণ্ড অধিনায়ক। যাঁর মুখে এ দিন দুপুরে বারবার উঠে এল মনোজ ‘ফ্যাক্টর’। আর দ্বিতীয় জন, ঋদ্ধিমান সাহা। অধিনায়ক নন, কিন্তু বাংলার ব্যাটিংয়ের অন্যতম নিউক্লিয়াস। বৃহস্পতিবারের বারবেলায় বাংলা ড্রেসিংরুমে এমন বদলে যাওয়া চিত্রনাট্যেরই খোঁজ পাওয়া গেল। দেখে কে বলবে, গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন দল, বিজয় হাজারের গত বারের চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলা? প্রতিপক্ষকে প্রাপ্য সম্মান দেওয়া আছে, কিন্তু অহেতুক সমীহ নেই। উল্টে যে আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের খোঁজ পাওয়া গেল সেটা এ রকম: সম্ভব হলে দশ উইকেটে ঝাড়খণ্ডকে উড়িয়ে দিয়ে বোনাস পয়েন্ট তুলে নাও। বিপক্ষের সৌরভকে আটকে রাখার টোটকা খুঁজে বের করো। |
শুক্রবারের গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে বাংলা শিবির কতটা টগবগে, তার নমুনা হিসেবে ঋদ্ধিমানের দু’একটা মন্তব্যই যথেষ্ট। বিপক্ষের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাট প্রসঙ্গে ঋদ্ধির কাঁটাছেড়া এ রকম: “সৌরভ তিওয়ারির ব্যাটিং ধরন টিমের সবাই খুব ভাল জানে। এর আগে অনেক বার ওর বিরুদ্ধে খেলেছি। আমাদের বোলাররা জানে কী ভাবে ওকে সামলাতে হবে।” বরুণ অ্যারন না থাকায় বাংলার সুবিধে হচ্ছে না? ঋদ্ধি মাথা নাড়েন, “উল্টোটাও তো হতে পারত। ওর বলে আমরা রান করতে পারতাম!” এ দিন অনুশীলনে অশোক দিন্দার পায়ে চোট পাওয়া কিংবা ওড়িশার বিরুদ্ধে তিন উইকেট পাওয়া স্পিনার ইরেশ সাক্সেনার হাল্কা জ্বর নিয়েও চিন্তিত হওয়ার কোনও লক্ষণ ঋদ্ধির মধ্যে দেখা গেল না। বদল বলতে সম্ভবত একটাই। অরিন্দম ঘোষের জায়গায় হয়তো শ্রীবৎস গোস্বামী।
ঝাড়খণ্ড অধিনায়কও মানছেন, ঘরের মাঠে বাংলার মহড়া নেওয়া খুব সহজ হবে না। যতই তাঁর দল ত্রিপুরার বিরুদ্ধে বুধবারের ক্লোজ ম্যাচ জেতার আত্মবিশ্বাসে ডুবে থাক। যতই দুই ঝাড়খণ্ডি ব্যাটসম্যান ইশাঙ্ক জাগ্গি আর দীপক চৌগুলে রানের মধ্যে থাকুন। সৌরভ বনাম সৌরভের ম্যাচে শুক্রবার খানিকটা পিছিয়ে থেকেই শুরু করতে চলেছেন সৌরভ তিওয়ারি। “বাংলার হোমগ্রাউন্ডে ম্যাচ, তাই আমাদের উপর চাপ থাকবে। আমাদের ফিল্ডিং নিয়ে আরও খাটতে হবে,” স্বীকারোক্তি তাঁর। বিপক্ষ শিবিরে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপস্থিতির সৌজন্যে বাড়তি চাপ তো থাকছেই।
এ দিন অনুশীলনে আসেননি বাংলার সৌরভ। সহারার সঙ্গে বৈঠক করতে শহরের বাইরে ছিলেন অধিনায়ক। ফিরলেন রাতের ফ্লাইটে। তবে সৌরভের অনুশীলনে না থাকাই শুধু নয়, তিনি সাত তাড়াতাড়ি ফিরে গেলে বা মনোজ তিওয়ারি না থাকলেও আর সে ভাবে হেরফের হচ্ছে না বাংলার স্কোরবোর্ডে। ঋদ্ধি তো বলেও দিচ্ছেন, “এখন আর অত অসুবিধা হয় না। টিমের বাকি ব্যাটসম্যানরাও এখন ধারাবাহিক ভাবে রান পায়। আমি, শুভময়, অনুষ্টুপ সবাই। মনোজ বা সৌরভ যদি তাড়াতাড়ি আউট হয়েও যায়, তা হলেও আমরা বড় রান তুলতে পারি। দেশের যে কোনও টিমের বিরুদ্ধে।”
তা হলে ইডেনে সৌরভের সামনে দাদার টিমের নির্যাস কী দাঁড়াল? ‘একা’ নয়, এই বাংলা এখন ‘কয়েকজন’। |