|
|
|
|
ফেরার প্রধান, পঞ্চায়েতের কাজে সমস্যা রিষড়ায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রিষড়া |
জাল শংসাপত্র চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ খুঁজছিল তাঁকে। দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দিয়েছেন রিষড়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান। যার জেরে পঞ্চায়েতের স্বাভাবিক কাজকর্ম লাটে উঠেছে। ব্যাহত হচ্ছে পরিষেবা। বিপাকে পড়েছেন পঞ্চায়েত এলাকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।
একটি নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেয়ে জানুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ রিষড়া পঞ্চায়েতে হানা দেয়। ওই পঞ্চায়েতের কর আদায়কারী অস্থায়ী কর্মী কৃষ্ণচন্দ্র মল্লিককে পুলিশ গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় পঞ্চায়েতের বেশ কিছু কাগজপত্র। সেই সব কাগজপত্র খতিয়ে দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়, ওই চক্রে শুধু পঞ্চায়েতের ধৃত কর্মীই নন, প্রধান-সহ অন্যান্য কর্মীদের ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, যে শংসাপত্র পুলিশ উদ্ধার করেছে, তাতে পঞ্চায়েত প্রধান ঊষা দুলের সই রয়েছে। কোনও কিছু না জেনেই প্রধান সই করেছেন, তা হতে পারে না। এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হতেই পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রেফতারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ঊষাদেবী পরিস্থিতি আঁচ করে তার আগেই পালান।
তদন্তকারী অফিসারেরা জানিয়েছেন, জন্মের জাল শংসাপত্র মোটা টাকার বিনিময়ে রিষড়া পঞ্চায়েতের একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরেই দিয়ে আসছিল। প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জেলা গোয়েন্দা দফতর সম্প্রতি এক আবেদনকারীর পাসপোর্ট সংক্রান্ত নথি পরীক্ষা করতে গিয়ে সন্দেহ হয়। শ্রীরামপুরের প্রভাসনগর এলাকার ওই বাসিন্দার পাসপোর্টের জন্য জমা দেওয়া নথির সাপেক্ষে রিষড়া পঞ্চায়েতের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে যান তদন্তকারীরা। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কোনও নথিই পঞ্চায়েতের সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মীরা দেখাতে পারেননি। তখন তাঁদের সন্দেহ দৃঢ় হয়। গ্রেফতার করা হয় পঞ্চায়েতের কর্মীকে।
তদন্তকারী এক পুলিশ কর্তা জানান, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ পাসপোর্টের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। জন্মের জাল শংসাপত্রের বিনিময়ে যদি ভুলবশত কোনও ভাবে পাসপোর্ট দেওয়া হত, তা হলে জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত লোকজনের হাতেও তা চলে যাওয়া অসম্ভব নয়। কতগুলি নির্দিষ্ট কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরেই পঞ্চায়েত বা পুরসভা জন্মের শংসাপত্র দিতে পারে। হাসপাতাল বা নার্সিংহোম, যেখানে শিশুটি জন্মেছে সেই সংক্রান্ত নথি দেওয়া যেতে পারে। যে ক্ষেত্রে আয়া বা দাইমা-র হাতে শিশুর জন্ম হয়, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে বিষয়টি নথিভুক্ত করা হয়। এই সব ছাড়া যদি কোনও শিশুর জন্ম হয়, সে ক্ষেত্রে মহকুমাশাসকের বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে পুরসভা বা পঞ্চায়েত জন্মের শংসাপত্র দিতে পারে। রিষড়া পঞ্চায়েত কোনও নথিই তদন্তকারীদের দেখাতে পারেনি।
বস্তুত, ওই ঘটনার জেরে রিষড়া পঞ্চায়েতের কাজকর্ম চূড়ান্ত ব্যাহত হচ্ছে। প্রধান না থাকায় পঞ্চায়েতে নতুন প্রকল্প অনুমোদনের কাজ থমকে গিয়েছে। চূড়ান্ত হয়রান হচ্ছেন নানা কাজে পঞ্চায়েতে আসা মানুষজন। ট্রেড লাইসেন্স, রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট পেতেও মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। জন্ম এবং মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার কাজ সেই থেকেই বন্ধ হয়ে রয়েছে। এলাকার উন্নয়নের কাজ পুরোপুরি বন্ধ বলে দাবি করেন পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য শেখ রসিদ। তিনি বলেন, “মানুষ ভোট দিয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় এনেছে। কিন্তু তাঁদেরই নাজেহাল হতে হচ্ছে প্রতি পদে পদে। পঞ্চায়েতের কাজকর্ম নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই কর্তাদের। যে যার আখের গোছাতে ব্যস্ত।”
প্রধান না থাকায় পঞ্চায়েতের কাজকর্ম যে ব্যাহত হচ্ছে, তা অবশ্য মানতে নারাজ পঞ্চায়েতে তৃণমূলের উপ-প্রধান শেখ আজিজুল হক। তিনি বলেন, “জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। তা ছাড়া পঞ্চায়েতের সদস্যদের অনুমতি সাপেক্ষে সব কাজ ঠিকই চলছে। ট্যাক্স আদায়কারী ধরা পড়ায় নতুন লোক চাওয়া হয়েছে।” এই বিষয়ে শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের বিডিও শ্রাবন্তী দাস বলেন, “প্রধানের কাজ চালিয়ে যেতে উপপ্রধানকে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জন্ম এবং মৃত্যুর শংসাপত্রের বিষয়টি অবশ্য আদালতের বিবেচনাধীন।” |
|
|
|
|
|