|
|
|
|
আঙুল তৃণমূলের দিকে |
টোলকর্মী নিয়োগে জট, সঙ্কটে মুম্বই রোড সম্প্রসারণ |
নুরুল আবসার • কলকাতা |
কর্মী নিয়োগকে কেন্দ্র করে ‘তৃণমূলের বাধায়’ ধুলাগড় ও ডেবরা টোলপ্লাজায় টোল আদায় বন্ধ হয়ে রয়েছে। একই কারণে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজেও সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ছ’নম্বর জাতীয় সড়ক, অর্থাৎ মুম্বই রোডের ডানকুনি থেকে খড়্গপুর পর্যম্ত ১৩০ কিলোমিটার অংশ চওড়া করে ছ’লেনের করা হচ্ছে। প্রকল্পটি রূপায়িত হবে ‘বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার’ (বিওটি) পদ্ধতিতে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) সূত্রের খবর: দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থাটি এই কাজে খরচ করবে ১৬০০ কোটি টাকা। মোট ১৭টি উড়াল-সেতু, অসংখ্য সাবওয়ে ও ফুটপাথ তৈরি হবে। এনএইচএআইয়ের সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, পরবর্তী ২৫ বছর ধরে টোল আদায়ের মাধ্যমে সেই টাকা তারা তুলে নেবে, উপরন্তু বছরে এনএইচএআই-কে দেবে ১২৬ কোটি টাকা। পঁচিশ বছর পরে তারা রাস্তাটিকে ফিরিয়ে দেবে এনএইচএআই-কে। |
|
ধুলাগড় টোলপ্লাজা। ছবি: হিলটন ঘোষ |
কথা রয়েছে, আগামী ১ মার্চ ধুলাগড় ও ডেবরা টোলপ্লাজা এনএইচএআইয়ের তরফে ঠিকাদার সংস্থাটির হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুক্তিটি কার্যকর হবে। সে দিন থেকে পরবর্তী আড়াই বছরের মধ্যে শেষ হবে সম্প্রসারণের কাজ। কিন্তু পুরো প্রকল্পটাই ‘ভেস্তে’ যেতে বসেছে কর্মী নিয়োগ ঘিরে বিবাদের জেরে। কী রকম?
এনএইচএআইয়ের খবর: ২০০৬ থেকে দু’টো টোল প্লাজায় তারাই টোল আদায় করত, বেসরকারি নিরাপত্তা এজেন্সির মাধ্যমে। এবং তৃণমূল দু’জায়গাতেই প্লাজাকর্মীদের নিজেদের ইউনিয়নের ছাতার তলায় নিয়ে আসে বলে দলীয় সূত্রের খবর। গত নভেম্বরে এনএইচএআই নিলাম ডেকে প্লাজাগুলোর দায়িত্ব ঠিকাদার সংস্থাকে দেয়। ধুলাগড়-ডেবরার দায়িত্ব পায় মুম্বইয়ের এক সংস্থা। তারা প্লাজায় নিজেদের কর্মী রাখতে চাইলেও বেঁকে বসে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরনো কর্মীদেরই বহাল রাখার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন দুই তৃণমূল বিধায়ক সাঁকরাইলের শীতল সর্দার ও ডেবরার রাধাকান্ত মাইতি।
তাঁদের শর্ত মানতে রাজি হয়নি সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি। যার জেরে নভেম্বরের পরে দু’টি প্লাজার টোল আদায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্ষতি হচ্ছে দৈনিক প্রায় দশ লক্ষ টাকা। বীতশ্রদ্ধ হয়ে মুম্বইয়ের সংস্থাটি ইতিমধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। সম্প্রতি মুম্বই রোড সম্প্রসারণ তথা টোল আদায়ের বরাত পেয়েছে দিল্লির যে সংস্থাটি একই সমস্যায় পড়েছে তারাও। তারা নিজস্ব কর্মী নিয়োগের পাশাপাশি অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে টোল আদায়ের লক্ষ্যে প্লাজা দু’টির সংস্কার করছে। কিন্তু তৃণমূল ফের একই দাবিতে নেমে গিয়েছে আন্দোলনে।
ফলে এখন সংশয়, দু’টি টোলপ্লাজার পুরো দায়িত্ব আগামী ১ মার্চ থেকে ঠিকাদার সংস্থাটি পাবে কি না। সংস্থাটির বক্তব্য: ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন ঋণদাতা সংস্থাকে দেওয়া তাদের প্রকল্প-রিপোর্টে বলাই রয়েছে যে, রাস্তা তৈরির খরচ তোলা হবে টোল প্লাজা থেকে। সেখানে ‘দক্ষ ও পেশাদার’ কর্মী নিয়োগ করা হবে। সেই মতো লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে তারা লোক নিয়েছে। সংস্থাটির যুক্তি, আগের কর্মীদের মধ্যে যে সব প্রাক্তন ফৌজি ছিলেন, তাঁদের রাখতে হলে বেতন অনেক বেশি দিতে হবে। এতে প্রকল্পটি তাদের পক্ষে লাভজনক হবে না।
কী বলছে তৃণমূল? শীতলবাবু বলেন, “এত দিন যাঁরা কাজ করছিলেন, তাঁরা যাবেন কোথায়? তবে ওই সংস্থার সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, ক’দিনের মধ্যে জট কাটবে।” রাধাকান্তবাবুর বক্তব্য, “ডেবরার প্লাজায় ১৩০ জন কাজ করতেন। আমরা চাই, কেউ যেন কাজ না-হারান।” হাওড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি, তথা রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায়েরও সাফ কথা, “সংস্থাটিকে আমরা বলেছি, ধুলাগড় প্লাজায় কাজ করতেন, তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মী নিয়োগ করা যাবে না। আমরা মানব না।”
এই পরিস্থিতিতে ঠিকাদার সংস্থাটি পড়েছে ঘোর অনিশ্চয়তায়। সংস্থার পক্ষে মোহিত কর বলেন, “সাঁকরাইলের এমএলএ-র সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। আবার বসব। দেখা যাক, কী হয়। ডেবরার সমস্যা নিয়ে তমলুকের এমপি শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলব।” সংস্থার এক কর্তার আক্ষেপ, “রাজ্যের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ মন্ত্রকে চিঠি লিখেছি। এমনকী, এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য এনএইচআইয়ের তরফেও হাওড়ার জেলাশাসক আর এসপি’কে অনুরোধ করা হয়েছে। তবু জট কাটেনি।”
আর এই টানাপোড়েনের জেরে সংস্থার কর্তাদের একাংশের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বিবাদ না-মিটলে প্রকল্প থেকে তাঁরা হাত গুটিয়েও নিতে পারেন বলে যাঁরা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে কোলাঘাটে অসম্পূর্ণ একটি সেতু শেষ করার কাজ শুরু করেছে সংস্থাটি। এই খবর দিয়ে এক কর্তা বলেন, ‘‘আগেভাগে সরে গেলে সামান্য ক্ষতির উপর দিয়ে বাঁচা যাবে।”
ব্যাপারটা কি রাজ্য সরকারের নজরে আছে? মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, “আছে। আমরা খতিয়ে দেখছি।” |
|
|
|
|
|