প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পর দিনই ফরাক্কায় গাফিলতির সূত্র খুঁজতে তৎপর হল কেন্দ্র।
গত কাল বৈঠকের পরেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ১৩ এবং ১৬ নম্বর স্লুইস গেট দু’টি মেরামতের কাজ শুরু করে দিয়েছে। মার্চের মধ্যেই গেট দু’টি মেরামত করা হবে। আর আজ জলসম্পদ মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই গেট দু’টি কী ভাবে অকেজো হল তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের চেয়ারম্যান আর সি ঝা। পনেরো দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন তিনি।
জলসম্পদ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ওই কমিটি ফরাক্কা গিয়ে তদন্ত করার পাশাপাশি মার্চের মধ্যে যাতে মেরামতির কাজ শেষ হয় তা-ও দেখবে। পাশাপাশি রাজ্য এখন চাইছে ফরাক্কা ব্যারাজের অন্য গেটগুলির কী অবস্থা, তা-ও খতিয়ে দেখুক কেন্দ্র। মন্ত্রক জানিয়েছে, সেই দাবিও বিবেচনাধীন।
গত কাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে মমতা বিশদ ভাবে ফরাক্কার সমস্যাটি তুলে ধরেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, গত আট মাস ধরে স্লুইস গেট দু’টি অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কেন্দ্র দৃষ্টিপাতও করেনি। ফলে ফরাক্কার জলের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ দিনের পর দিন বঞ্চিত হয়েছে। মমতা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, চুক্তি অনুযায়ী যেখানে বাংলাদেশে ৩৩ হাজার কিউসেক জল যাওয়ার কথা, সেখানে ৮২ হাজার কিউসেক জল ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে।
তিনি এই অভিযোগও জানিয়েছিলেন যে, জাহাজ মন্ত্রকের (যার প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায়) পক্ষ থেকে জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছে সমস্যাটি জানিয়ে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। ফলে শুধু ভারতের প্রাপ্য জল যে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে তা নয়, ভাগীরথী-হলদি নদীও শুকিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই নামতে শুরু করেছে জলের স্তর। মমতার কথায়, এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে চলেছে। জাহাজ চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। টান পড়ছে রাজ্যের পানীয় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জলে।
গোটা বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র এবং রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা ফিরে এসে যে রিপোর্ট দেন, তাতে ঘটনার পিছনে কোনও ব্যক্তির ‘হাত’ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়। প্রকৃত ব্যপারটি সর্বসমক্ষে আনতে বিষয়টি একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি দিয়ে তদন্ত করে দেখতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন মমতা। সে ব্যাপারে কালই মমতাকে আশ্বাস দেন মনমোহন। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, আজ সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রী দফতরের নির্দেশে সক্রিয় হয়ে ওঠে জলসম্পদ মন্ত্রক। আর তার জেরেই এই তদন্তের নির্দেশ। |