স্বীকৃতি ফেরাবে ‘ডাইন’ বাবাকে, আশা কবিপুত্রের
খন তিনি মাত্র সাত বছরের শিশু। ডাইন অপবাদে বাবাকে গ্রামছাড়া হতে হয়েছিল। সেটা প্রায় পঁচিশ বছর আগেকার কথা। তার পর থেকেই বাবাকে খুঁজে বেরিয়েছেন আদিত্য মান্ডি। বাবা ফিরে আসেননি। কিন্তু বাবার জন্য লেখা কবিতা আজ তাঁকে এনে দিয়েছে সাহিত্যের অন্যতম সেরা পুরস্কার।
সাঁওতালি ভাষায় কবিতা লিখে এ বছরের সাহিত্য অকাদেমি পেয়েছেন আদিত্য মান্ডি। বইয়ের নাম ‘বাঁচাও লড়হাই’। ১৯০ পাতার বইয়ে মোট ১১৪টি কবিতা। আদিত্যর আদি বাড়ি বাঁকুড়ার একটি গ্রামে। “গ্রামের লোকজন আমার বাবাকে যখন ডাইন অপবাদ দিল, তখন আমি মাত্র সাত। লজ্জা আর অপমানে বাবা গ্রাম ছাড়লেন। সেই থেকে আর কোনও দিন বাবাকে দেখিনি। খালি ভাবতাম বাবা আসবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর দেখা পাইনি।” বলছিলেন আদিত্য। সেই থেকে বাবাকে খুঁজে বেড়িয়েছেন তিনি। আর বাবার কথা ভাবতে ভাবতেই এক সময় কবিতা লেখার শুরু। ‘বাঁচাও লড়াই’-এর বেশির ভাগ কবিতাই তাঁর বাবার স্মৃতিতে লেখা।
১৯৯২ সালে সিআইএসএফ-এ জওয়ানের চাকরি পান আদিত্য। বর্তমানে তিনি মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় এনটিপিসি-তে কর্মরত। সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়ে যারপরনাই উত্তেজিত আদিত্য। বললেন, “বাবাকে যে সারা জীবন খুঁজে এসেছি, এই পুরস্কারটা বোধহয় তারই একটা প্রতিফলন। বাবার জন্য আমার খোঁজ। আমি বিশ্বাস করি, বাবা বেঁচে আছেন। আমি এত বড় একটা সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি শুনলে হয়তো বাবা আমার কাছে ফিরে আসবেন।” বললেন বত্রিশ বছরের যুবক।
‘বাঁচাও লড়াই’ আসলে আদিত্যর সেই ছোট্টবেলা থেকে নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গল্প বলে। আর বলে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা আর মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে সাঁওতালদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা। আদিত্যর কথায়, “ছোটবেলা থেকে দেখেছি, মা আমাকে মানুষ করার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। সব ঝড় থেকে আমাকে বাঁচিয়েছেন। এই বইটা আমি লিখেছি সাধারণ মানুষকে শিক্ষিত করতে। উজ্জীবিত করতে। কারণ আমি চাই, আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যেন আর কারও সঙ্গে না হয়। মানুষের উচিত মানুষকে শ্রদ্ধা করা। কুসংস্কারের বশে কারও জীবন যেন আমার মতো নষ্ট না হয়।”
তবে সাহিত্য অকাদেমি আদিত্যর জীবনের প্রথম পুরস্কার নয়। এর আগেও তাঁর লেখা নানা কবিতা প্রশংসিত হয়েছে। সাঁওতালির সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি আর হিন্দিতেও সাবলীল আদিত্য। সাহিত্য অকাদেমির বিচারকমণ্ডলী আদিত্যর কবিতাকে সাঁওতালি ভাষার একটি উল্লেখযোগ্য অবদান বলে মনে করছেন। আর আদিত্যর জন্য গর্বিত তাঁর সহকর্মীরাও। “ওঁর প্রতিভা যাতে আরও সমৃদ্ধ হয়, তার জন্য আমরা সব রকমের সাহায্য করব। আমাদের বাহিনীর জন্য আদিত্য এক জন তারকা।” বলেছেন সিআইএসএফ-এর এক সিনিয়র অফিসার।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে নিজের খাকি উর্দিটা পরেই পুরস্কার নিতে এসেছিলেন আদিত্য মান্ডি। স্বীকৃতি পেয়েছে তাঁর পঁচিশ বছরের লড়াই। ‘বাঁচাও লড়াই’। আসলে বাঁচার লড়াই!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.