সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলদের এক জন প্রথমে বললেন, সমকামিতা অনৈতিক এবং সামাজিক রীতির বিরোধী। আবার শুনানি চলাকালীনই আদালতের বাইরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক উল্টো সুরে জানাল, এ বিষয়ে কেন্দ্রের কোনও অবস্থানই নেই। আদালতেও শুনানির শেষ পর্যায়ে একই বক্তব্য জানালেন আর এক অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল। সব মিলিয়ে এক-এক বার এক-এক কথা বলে সমকামিতা মামলায় চরম অস্বস্তিতে পড়ল কেন্দ্র। শুধু তা-ই নয়, আদালতে এ ভাবে পরস্পরবিরোধী অভিমত জানানোয় সুপ্রিম কোর্ট এ দিন ভর্ৎসনা করে কেন্দ্রকে।
সমকামিতাকে অপরাধের তকমা থেকে মুক্ত করে দিল্লি হাইকোর্ট ২০০৯ সালে যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে করা আবেদন নিয়ে শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তথা কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। এ দিন সেই শুনানিতেই নাটকীয় ভাবে অবস্থান বদল করতে থাকে কেন্দ্র। প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে আজ অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পি পি মলহোত্র বলেন, “সমকামিতা অনৈতিক এবং ও সামাজিক রীতিনীতির বিরোধী।” বিচারপতি জি এস সিঙ্ঘভি এবং বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চকে মলহোত্র বলেন, “সমকামিতা অনৈতিক। ওই কাজে এড্স-এর মতো রোগ ছড়ানোরও সম্ভাবনা থাকে।” এই বক্তব্য শুনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, “খোঁজ নিয়ে দেখুন ভারতে কত জন এড্স রোগী সমকামী।”
অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতেই শুরু হয় বিতর্ক। তখনই আচমকা আসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতি। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের ওই বক্তব্য থেকে সরে এসে বিবৃতি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। জানানো হয়, ‘সমকামিতাকে অপরাধের তকমা মুক্ত করতে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতা করছি না। এই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সমকামিতা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কোনও অবস্থান নেই। যদি অন্য কোনও আবেদনকারী এই মামলায় যুক্ত হতে চান, তখন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল সুপ্রিম কোর্টকে এই বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন।’
দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতা করে পি পি মলহোত্র কোর্টকে জানিয়েছিলেন, “আমাদের সংবিধান অন্য রকম। আমাদের নীতি বোধ এবং সামাজিক মূল্যবোধও অন্য দেশের থেকে আলাদা। তাই আমরা অন্য দেশের নিয়ম অনুসরণ করতে পারি না। এটা অস্বাভাবিক, এর কোনও সামাজিক স্বীকৃতি নেই। তাই সমকামিতাকে অপরাধ বলা যেতেই পারে।” মলহোত্রের বক্তব্য শেষ হতেই আর এক জন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মোহন জৈন শীর্ষ আদালতে জানান, সমকামিতা নিয়ে কেন্দ্রের কোনও অবস্থান নেই। কেন্দ্রের তরফে তাঁকে এই বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু জৈনের শেষ মুহূর্তের এই বক্তব্য শুনতে চায়নি বেঞ্চ। জৈনকে বলা হয়, “আদালতে এমন মন্তব্য করবেন না। এতে আপনারাই বিব্রত হবেন। সমকামিতা নিয়ে আগেই কেন্দ্রের যুুুক্তি শুনেছি। এখন আপনার কথা শুনব না।” পরবর্তী শুনানি ২৮ ফেব্রুয়ারি। |