আবার হুমকি-ফোন আসা শুরু হয়েছে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলার অভিযোগকারিণীর কাছে। মঙ্গলবার রাতে তিনি ওই ফোন পেয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিন গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসার বলেন, “ফোনটা এসেছিল মঙ্গলবার রাত ১২টা নাগাদ। ওই মহিলা আমাদের সে কথা জানিয়েছেন। ওঁকে অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন ধরতে বারণ করা হয়েছে।” এ বিষয়ে এর চেয়ে আর বেশি কিছু বলতে রাজি নয় পুলিশ। ফের হুমকি-ফোন আসায় গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাদের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এখনও গোয়েন্দাদের নাগালের বাইরে থেকে যাওয়া প্রভাবশালী একটি চক্র অভিযোগকারিণীকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে বলে মনে করছে পুলিশ। তাদের ধারণা: কলকাতার অপরাধ-জগতের ঘনিষ্ঠ কোনও দুষ্কৃতী এখনও অভিযুক্তদের বাঁচাতে মহিলাকে ফোন করে চলেছে, যাতে তিনি ভয় পেয়ে পিছু হটেন।
কে হতে পারে সেই দুষ্কৃতী? লালবাজারের কর্তাদের কাছে এর স্পষ্ট উত্তর নেই। যে-গাড়িতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে, সেটি যে চালাচ্ছিল সেই সুমিত বজাজ, রুমান খান ও নাসিরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ধরতে না-পারলেও কাদের ও জনি নামের এক যুবককে পুলিশ চিহ্নিত করেছে। তাদের খোঁজ চলছে। পুলিশের দাবি, ধৃত তিন জনই ধর্ষণের দায় কাদেরের ঘাড়ে চাপিয়েছে। কিন্তু এখনও কিছু বিষয় অভিযুক্তেরা চেপে যাচ্ছে বলে পুলিশের সন্দেহ। এবং টিনটিন-ছাঁট চুলের একটি যুবককে আড়াল করার চেষ্টা চলছে বলেও মনে করছে পুলিশ। তাকে হিসেবের মধ্যে ধরলে অভিযুক্তের সংখ্যা ছয়। হুমকি-ফোনের পিছনে ওই যুবকের হাত থাকতে পারে, এমনটাই সন্দেহ পুলিশের।
কে এই যুবক? চওড়া কপাল, টিনটিন-ছাঁট চুল, মাঝারি গড়ন! বছর পঁয়ত্রিশের দোহারা চেহারার ওই যুবকের নাম রাশেদ ওরফে আলিভাই বলে পুলিশ জেনেছে। কিন্তু হন্ডা সিটি গাড়িতে অভিযোগকারী মহিলা ও ছ’জন অভিযুক্ত কখনওই একসঙ্গে ছিল না বলে পুলিশের ধারণা। গাড়ি নিয়ে পার্ক স্ট্রিটে নাইট ক্লাব থেকে বেরনোর পরে অভিযুক্তেরা নিজেদের মধ্যে বার কয়েক জায়গা বদল করে এবং কেউ এক জন পরে ওই গাড়িতে ওঠে বলে পুলিশের সন্দেহ। অভিযোগকারিণী এর সবটা মনে করতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ওই মহিলাও বলেছেন, “গাড়িতে কেউ উঠছিল বা নামছিল কি না, সবটা খেয়াল করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমি প্রাণপণে নিজের উপরে মারধর ও অত্যাচার ঠেকানোর চেষ্টা করছিলাম।” পুলিশের বক্তব্য, আলিভাইকে ধরতে পারলে তদন্তের কয়েকটি অস্পষ্ট দিকের জবাব মিলবে। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “আলিভাইয়ের দাদার সঙ্গে দক্ষিণ শহরতলির অপরাধ জগতের চাঁই শেখ বিনোদের দহরম-মহরম রয়েছে। বিহারের মজফ্ফরপুরের এক অস্ত্র-কারবারির সঙ্গেও তারা ঘনিষ্ঠ। পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা ওই যুবকদের চামড়ার ব্যবসা।” পুলিশ সূত্রের খবর, কাদের-নাসিরদের পরিবারের সঙ্গেও আলিভাইয়ের আত্মীয়তা রয়েছে। রুমান-কাদের-সুমিত-নাসিরদের সঙ্গে সপ্তাহান্তে নাইট ক্লাবের ফুর্তিতে ওই আলিও নিয়মিত মুখ ছিল। |