মমতার ‘সহায়তা’ ভুলে যাননি ফুলবাগানের ধর্ষিতা
পেশাগত পরিচয়ে তিনি এক জন সাফাইকর্মী। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ওই মহিলাকে প্রায় সবাই এক ডাকে চেনেন। কারণ, কুড়ি বছর আগের একটি ধর্ষণের ঘটনা।
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড নিয়ে আজ যেমন তোলপাড় চলছে, তেমনই তোলপাড় তুলেছিল ফুলবাগান থানার ব্যারাকে ঘটা সেই ধর্ষণ-কাণ্ড। যার শিকার হন ওই মহিলা। তাঁর নামটিও প্রকাশ্যে এসে যায় (সেই নাম পুনরায় লেখা হল না)। সে দিন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে ‘শক্তি’ জুগিয়েছিলেন কেন্দ্রে তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের প্রতিমন্ত্রী এবং আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তিনি রাজ্য যুব কংগ্রেসের সভানেত্রীও ছিলেন।
সেই মহিলা
খবর পেয়ে দ্রুত দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে মমতা গিয়েছিলেন ফুলবাগান থানার লাগোয়া ফুটপাথের ঝুপড়িতে। যেখান থেকে থানার ব্যারাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ২৭ বছরের ওই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। তার পরে লালবাজারে গিয়ে মমতা দেখা করেছিলেন ওই মহিলার সঙ্গে। পিঠে হাত রেখে সমবেদনা জানিয়েছিলেন। সহায়তা করেছেন নানা ভাবে। আজ পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের খবরে সেই সব কথা ফের মনে পড়ছে ওই মহিলার।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে তিনি বলেন, “মমতাদি না-থাকলে সে দিন আমি শেষ হয়ে যেতাম। আমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়েছিল খুব। তখনকার বড় পার্টির (সিপিএম) দাদারা জোর করতেন। হাতে ন’হাজার টাকা ধরিয়ে গ্রামে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিল সেই পার্টির লোকজন। কিন্তু দিদি আমায় লুকিয়ে রাখেন। বাসন্তীতে আমার গ্রামের বাড়িতে দিদি নিজে গিয়ে সেই সময়ে কংগ্রেস পার্টিকে বলেছিলেন, আমায় পাহারা দিয়ে রাখতে। আজ কাজ করে দু’বেলা খেতে পাই। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। দিদি না-থাকলে এ সব কোনও কিছুই হত না।”
এখন তাঁর বয়স ৪৭। ১৯৯২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার পরে ’৯৩ সালের ১৮ অক্টোবর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফাইকর্মীর চাকরি পান তিনি। মাঝের এক বছর বহু আন্দোলন চলেছিল তাঁর সামাজিক নিরাপত্তার দাবিতে। মহিলার মনে আছে, ‘‘ওই যে বাড়িটায় জ্যোতি বসু বসতেন (মহাকরণ), সেখানে আমাকে কংগ্রেসের লোকেরা নিয়ে যান, একটা বড় হলঘরে। কয়েক জন অফিসার এসে বলেন, সরকার আমাকে চাকরি দেবে।” সেই চাকরিই করছেন তিনি। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই সাফাইকর্মীদের কোয়ার্টার্সে। তবু পার্ক স্ট্রিটের ঘটনা শুনে পুরনো আতঙ্ক যেন ফের তাড়া করছে তাঁকে। জানালেন, স্বামী সওগত লস্করের অনুপস্থিতিতে রাতে কোনও প্রয়োজনে ঘরের দরজা খুলতে হলে রীতিমতো শিউরে উঠছেন।
তিনি জানেন, ফুলবাগানের ধর্ষণ-কাণ্ডে দোষী পুলিশ কনস্টেবল নীলকমল ঘোষের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগকারিণীর সঙ্গে থানার পুলিশ যে ‘দুর্ব্যবহার’ করেছে, সে কথাও তাঁর অজানা নয়। কী বলবেন? মহিলা বলেন, “পুলিশ ওই রকমই। আমার উপরে অত্যাচারের পরে আমাকেই ছুরি দেখিয়ে বলেছিল, কাউকে কিছু না জানাতে। কিন্তু এলাকার লোকজনের চাপে থানার বড়বাবু শেষ পর্যন্ত ডায়েরি নিয়েছিলেন।” পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাতেও পুলিশ অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ‘চাপে’ পড়ে। ফুলবাগানের ঘটনার পরে সে দিনের বিরোধী নেত্রী মমতা যেমন ধর্ষিতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে এখনও তেমন কিছু হয়নি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বা তাঁর কোনও প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা না-হওয়ায় অভিযোগকারিণী নিজেই বলেছেন, তিনি ‘হতাশ’। তুলনাটি সামনে আসতেই ফুলবাগানের ঘটনায় নির্যাতিতা ওই মহিলা জানিয়ে দিলেন, এ প্রসঙ্গে একটি কথাও তিনি বলবেন না। তাঁর পাশে তখন তৃণমূলের দুই ইউনিয়ন নেতা। তৃণমূল-পরিচালিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সদস্য-খাতায় নামও লিখিয়েছেন ওই মহিলা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.