খেয়া বন্ধ, ঘাটেই পড়ে অসুস্থ বৃদ্ধ
নিরুদ্দিন শেখ। বাড়ি নদিয়ার দেবগ্রামে। সকাল ৮টায় দিল্লি থেকে বর্ধমান স্টেশনে এসে পৌঁছন। যানবাহন সব বন্ধ ছিল। বাসভাড়া যেখানে ২৫ টাকা, সেখানে তিনি চারশো টাকা খরচ করে মোটরভ্যানে করে এসে পৌঁছন কাটোয়ায়। নৌকা করে শেষমেশ বাড়ি পৌঁছন তিনি।
আজিজুল শেখ, লালন শেখেদের বাড়ি মুর্শিদাবাদের হরিহর পাড়ায়। গিয়েছিলেন বিহারের চম্পারণে। রাত ৩টেয় বর্ধমান স্টেশনে নামেন। সেখান থেকে ৫৮ কিলোমিটার পথ সাইকেলে চেপে পৌঁছন কাটোয়া। সেখান থেকে নৌকা করে বাড়ি ফেরেন।
তাপস মিশ্র কলকাতার একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মী। কর্মসূত্রে যাচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদের মোরগ্রামে। কাটোয়ায় এসে কিছু না পেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে।
শুধু এঁরাই নন। দুই সিপিএম নেতা খুনের প্রতিবাদে বর্ধমানে ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে বৃহস্পতিবার এ ভাবেই দিনভর নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ।
কালনা খেয়াঘাটে ভ্যানে করে নৌকায় তোলা হচ্ছে বৃদ্ধকে।
বর্ধমানে যে বন্ধ চলছে, নদিয়ার বহু বাসিন্দারই তা জানা ছিল না। ফলে এক দিকে বর্ধমানের কালনা খেয়াঘাট এবং অন্য দিকে নদিয়ার নৃসিংহপুর খেয়াঘাটে এসে তাঁদের অনেককেই সমস্যায় পড়তে হয়। ভোর হতেই প্রতি দিন দুই খেয়াঘাটে যাত্রী নিয়ে নৌকা পারাপার শুরু হয়ে যায়। যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার জন্য থাকে ৮টি নৌকা। এছাড়াও মালবাহী যানবাহন পারাপারের জন্য একটি বার্জ। বন্ধ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ নৌকার কর্মীই কিন্তু কাজে আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন তাঁরাও আর নৌকা চালাতে চাননি। অগত্যা সকাল থেকেই অচল হয়ে যায় খেয়া পারাপার।
তখন বেলা ১টা। কালনা হাসপাতাল থেকে অসুস্থ অবস্থায় খেয়াঘাটে নিয়ে আসা হয় সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ গোপাল সাহাকে। দিন তিনেক আগে নদিয়ার নৃসিংহপুর এলাকার এই বৃদ্ধকে তাঁর বাড়ির লোকজন কালনা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। বন্ধের কথা জানা ছিল না তাঁদের। খেয়াঘাটে এসে নৌকা চলাচল বন্ধ দেখে অসুস্থ বৃদ্ধকে একটি সাইকেল ভ্যানে দীর্ঘক্ষণ শুইয়ে রাখতে বাধ্য হন তাঁরা। শুরু হয় নৌকার খোঁজ। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে খবর পৌঁছয় ঘাট মালিকদের কাছে। এর পরে জরুরি ভিত্তিতে তাঁরা একটি নৌকার ব্যবস্থা করে দিলে কোনও মতে সমস্যা মেটে ওই পরিবারের। গোপালবাবুর স্ত্রী মিনতিদেবীর কথায়, “হাসপাতালে ওঁকে রক্ত দিতে হয়েছে। বন্ধে যে এ ভাবে বিপদে পড়ব বুঝিনি।”
খেয়া পারাপার বন্ধ থাকায় মাছ ধরা, বালি তোলার প্রয়োজনে যে সব নৌকা ঘাটে বাঁধা থাকে, সেগুলিই এ দিন যাত্রী পারাপারের কাজে নামে। তবে তাদের ভাড়া ছিল নির্ধারিত ভাড়ার থেকে চড়া। অন্যান্য দিন এপার-ওপার করতে যাত্রীদের যেখানে মাথাপিছু ২ টাকা লাগে, এ দিন সেখানে তিন থেকে চার টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, বেশি ভাড়া দিয়েও সময়ে নৌকা মেলেনি। অন্যান্য দিন মোটরসাইকেল ভাড়া থাকে ১০ টাকা। এ দিন নেওয়া হয়েছে ১৫-২০ টাকা।
ভরসা ট্রেনই। বৃহস্পতিবার কাটোয়া স্টেশনে।
কাটোয়ার দাঁইহাটের বাসিন্দা দেবীপ্রসাদ সাহা প্রথমে ট্রেনে এসে পৌঁছন কালনা স্টেশনে। জরুরি প্রয়োজনে শান্তিপুরে বোনের বাড়ি পৌঁছনোর কথা ছিল তাঁর। কালনা খেয়াঘাটে এসে তিনি জানতে পারেন, খেয়া-পারাপার বন্ধ। তাঁর কথায়, “অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটি নৌকা যেতে রাজি হয়। তবে তার শর্ত ছিল, নৌকা ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত সে যাবে না।” নদিয়ার বাবলারি এলাকার সব্জী ব্যবসায়ী মনোতোষ ঘোষ বলেন, “কালনার বিভিন্ন পাইকারি বাজারে রোজ সকালে সব্জী দিই। বৃহস্পতিবার সব্জী এনে জানতে পারি, খেয়া পারাপার বন্ধ। অগত্যা মালপত্র নিয়ে বাড়ি ফিরে যাই।”
অন্য দিকে, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া থেকে দুর্গাপুর গামী বাসগুলি দামোদর ব্যারাজে (ডিভিসি) বাঁকুড়ার দিকে এসেই থেমে যায়। বাস থেকে সেখানেই নেমে পড়তে হয় যাত্রীদের। তার পরে তাঁরা ভ্যান, রিকশা করে দুর্গাপুর স্টেশনে পৌঁছন। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় ট্রেনের যাত্রীদের অবশ্য ততটা অসুবিধা ভোগ করতে হয়নি। কিন্তু যাঁরা কোনও কাজে দুর্গাপুর শহরে এসেছিলেন তাঁরা বিপাকে পড়েন। চড়া ভাড়া গুণতে হয়েছে তাঁদের।

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.