বড়সড় কোনও মিছিল নেই। দু’এক জায়গায় রাস্তা অবরোধ ছাড়া পিকেটিংয়ের চিত্রও বিশেষ চোখে পড়েনি। সরকারি অফিস-কাছারি খোলা। কিন্তু লোকজন কম থাকায় কর্মীদের মধ্যে ছুটির মেজাজ। অনেক জায়গায় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও কিছু ব্যবসায়ী ঝাঁপ খোলা রেখেছিলেন। তবে ক্রেতার দেখা না মেলায় অলস দিন কাটালেন তাঁরাও। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল এবং গ্রামীণ বর্ধমানের অনেক জায়গাতেই সিপিএমের ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধে দেখা গেল এমন দৃশ্য।
কাটোয়া ও দাঁইহাট শহরে এ দিন দোকানপাট বন্ধ ছিল। ও দিকে, মঙ্গলকোটের নতুনহাট ও কেতুগ্রামের কান্দরায় সব দোকানই খোলা ছিল। সব সরকারি অফিসই খোলা ছিল। কাটোয়া ও দাঁইহাট পুরসভার গেটে সিপিএম দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেয়। এটিএম কাউন্টারও বন্ধ করে দেয় তারা। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) দেবীপ্রসাদ করণম বলেন, “বেশ কিছু জায়গায় পঞ্চায়েত অফিস খোলা ছিল। সরকারি অফিসগুলিতে প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মী উপস্থিত ছিলেন।”
মঙ্গলকোটের নতুনহাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারের প্রায় সব দোকানই সকাল থেকে খোলা ছিল। সিপিএমের পক্ষ থেকে বন্ধের প্রচারও করা হয়নি। তবে কাটোয়া ও দাঁইহাটে সিপিএম মিছিল করে বন্ধ সফল করার আহ্বান জানায়। সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সর বলেন, “ভয় দেখিয়ে দোকানপাট খুলতে বাধ্য করেছিল তৃণমূল।” তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। |
এ দিন কালনা শহরে বন্ধের প্রভাব পড়েছে। তবে সিপিএমের পক্ষ থেকে বন্ধের সমর্থনে তেমন কোনও প্রচার চোখে পড়েনি। এক মাত্র সিমলনের কাছে অল্প সময়ের জন্য রাস্তা অবরোধ করা হয়। দু’এক জায়গায় পিকেটিং হলেও, পুলিশের হস্তক্ষেপে তা স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকায় অফিস যেতে অসুবিধায় পড়েননি কর্মীরা। কিন্তু হাজিরা কম থাকায় ছিল ছুটির মেজাজ। চলেনি বেসরকারি বাস। সিপিএমের কালনা জোনাল কমিটির সম্পাদক করুণা ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবে নৃশংস ঘটনাটির প্রতিবাদ করুক। তাই এ বার পিকেটিং-মিছিল করিনি। বনধ্ সফল হয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর অবশ্য দাবি, “কালনা শহরে মিছিল বা পিকেটিং করার ক্ষমতা সিপিএমের নেই। ব্যবসায়ীরা ছুটি পান না। তাই কোনও দল বন্ধ ডাকলেই তাঁরা ছুটি কাটান।” মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “দু’একটি ছোট ঘটনা ছাড়া কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
দুর্গাপুরে সকালের দিকে দোকানপাট আংশিক খোলা ছিল। তবে ক্রেতার দেখা বিশেষ মেলেনি। সকালে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ট্রাঙ্ক রোড ডিপো থেকে বাস বের করতে বাধা দেন বন্ধ সমর্থকেরা। আইএনটিটিইউসি নেতা উত্তম মুখোপাধ্যায় জানান, সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয়। তার পরে থেকে সারা দিন সরকারি বাস চলাচল করেছে স্বাভাবিক ভাবেই। প্রান্তিকা থেকে এ-জোন ও বি-জোন রুটে একটি মিনিবাসও চলেনি। মিনিবাস বন্ধ ছিল ৮বি রুটেও। পুলকার না চলায় পড়ুয়ার অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। মহকুমাশাসক আয়েষা রানি এ জানান, সরকারি অফিসে হাজিরার হার ছিল সন্তোষজনক। ডিএসপি-তে হাজিরা প্রায় স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে। আইএনটিইউসি-র কারখানা ইউনিটের সহ-সম্পাদক দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “দিনের পর দিন বন্ধ ডেকে সিপিএম এ রাজ্যের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এখন আর মানুষ তা সইবেন না। তাই বন্ধে তেমন সাড়া মেলেনি।” সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “বন্ধে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছেন।”
আসানসোলে সকালের দিকে বেশ কয়েকটি রুটে মিনিবাস চলতে দেখা গিয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাসের সংখ্যা কমেছে। অফিস-কাছারি খোলা ছিল। বরাকর বাজার ও বার্নপুরে বন্ধের বিশেষ প্রভাব পড়েনি। তবে কুলটি, রূপনারায়ণপুর, চিত্তরঞ্জন, সামডিতে আংশিক প্রভাব পড়েছে। কুলটিতে বন্ধ সমর্থকেরা অটো চলাচলে বাধা দিলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। শিল্পাঞ্চলে বেসরকারি খনি ও কারখানাগুলিতে কাজ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ বন্ধ ছিল। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বন্ধের বিরোধিতা করে আসানসোলে মিছিল করে আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত পরিবহণ কর্মী সংগঠন। |
আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী বলেন, “খনি ও শিল্প কারখানাগুলিতে পালিতে কাজ করেন শ্রমিকেরা। তাই ১২ ঘণ্টার বন্ধের ক্ষেত্রে সেগুলিকে আওতার বাইরে রাখা হয়। তবে ওই সব জায়গায় দু’ঘণ্টার বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়েছে।” সিপিএমের আসানসোল জোনাল কমিটির সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, এ দিন তাঁরা সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আশা করেছিলেন, তা তাঁরা পেয়েছেন।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান চন্দ্রশেখর বর্ধন জানান, যে দু’একটি ছোট গণ্ডগোল হয়েছিল, পুলিশ তা আয়ত্তে এনেছে। কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি।
বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকার অন্যত্রও একই চিত্র চোখে পড়েছে। সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক, ডাকঘরগুলি খোলা থাকলেও গ্রাহকদের তেমন দেখা মেলেনি। পড়ুয়া না থাকায় বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ। একই পরিস্থিতি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়েও। পুলিশ জানায়, বিক্ষিপ্ত কিছু ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া বড় গণ্ডগোল হয়নি।
|