সংঘাতের আবহেই বন্ধ কাটল বর্ধমানে, ধৃত ৫১
বন্ধেও শাসকেরাই বিরোধী। আগামী মঙ্গলবার সাধারণ ধর্মঘটের আগেই বন্ধ ঘিরে শাসক ও বিরোধী দলের ‘সংঘাতের’ আবহ দেখল বর্ধমান। দলীয় দুই নেতা খুনের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার বর্ধমান বন্ধের ডাক গিয়েছিল সিপিএম। বন্ধ সফল করতে তাদের এবং বন্ধ ব্যর্থ করতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কয়েক জায়গায় ‘গায়ের জোর দেখানো’র অভিযোগ উঠেছে। পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়ায় হয়েছে সংঘর্ষও। তবে যে দেওয়ানদিঘিতে বুধবার ওই জোড়া খুন হয়েছিল, সেই এলাকা এ দিন সুনসানই ছিল। টহলদার পুলিশ ছাড়া, লোকজনও বিশেষ চোখে পড়েনি।
জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “বন্ধ নিয়ে বিক্ষিপ্ত ঘটনায় এ দিন ৫১ জনকে ধরা হয়েছে। বড় অপ্রীতিকর ঘটনার খবর মেলেনি।”
তবে এই ছোটখাটো সংঘর্ষেই ‘অশনি সংঙ্কেত’ দেখছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের আশঙ্কা, সাধারণ ধর্মঘটের দিন এই ‘স্ফুলিঙ্গ’গুলোই বড় আকার নেবে।
জামুড়িয়ার বীজপুরে সংঘর্ষে জখম গ্রামবাসী। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
পাণ্ডবেশ্বর থানার শ্যামলা ৩ নম্বর কোলিয়ারি এলাকায় সিটু অফিসের কাছে একটি রাস্তায় বন্ধের সমর্থনে পিকেটিং করছিলেন সিপিএমের লোকজন। সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্তের অভিযোগ, “সকাল ১০টা নাগাদ তৃণমূল কর্মীরা আচমকা সেখানে গিয়ে চেয়ার ভাঙচুর করেন। সিটু অফিসেও ভাঙচুর চালানো হয়।” তৃণমূলের প্রদেশ কমিটির সদস্য মুকুল বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “বন্ধের বিরোধিতায় আমাদের কর্মীরা ওই এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিল করেছেন। কেউ সিটু অফিসে হামলা করেনি।”
সকাল ১০টা নাগাদই জামুড়িয়ার বীজপুর গ্রামের কাছে জামুড়িয়া-রানিগঞ্জ রাস্তায় সিপিএম এবং তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে মারপিট বাধে। সিপিএমের অজয় জোনালের সম্পাদক মনোজবাবুর অভিযোগ, “আমাদের কর্মীরা বন্ধের সমর্থনে প্রচার করছিলেন। এমন সময়ে বীজপুরে জোর করে দোকান খোলার চেষ্টা করে তৃণমূলের লোকজন। প্রতিবাদ করায় আমাদের এক কর্মীকে মারধর করা হয়।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা সুজিত তফাদারের পাল্টা দাবি, এ দিন বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নামা সিপিএম কর্মীরা গাড়ি চালকদের থেকে ‘তোলা’ আদায় করছিলেন। তৃণমূলের লোকেরা তার প্রতিবাদ করায় গণ্ডগোল বাধে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “দু’টি ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।”
কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পরিচালিত কুলটি ও আসানসোল পুরসভায় স্বাভাবিক কাজকর্ম হলেও এ দিন বন্ধ ছিল বামেদের দখলে থাকা রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া পুরসভা। তৃণমূলের লোকজন পুরসভার কর্মীদের জোর করে অফিস খোলানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রানিগঞ্জের সিপিএমের পুরপ্রধান অনুপ মিত্রের। তাঁর অভিযোগ, “এ দিন অধিকাংশ পুরকর্মীই আসেননি। যাঁরা এসেছিলেন, অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তৃণমূলের কয়েকজন এসে তাঁদের অফিস খোলার জন্য চাপ দিচ্ছিল। পুলিশকে বিষয়টি ফোনে জানানো হলে তারা পালিয়ে যায়।” তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কংগ্রেস পরিচালিত কাটোয়া পুরসভাও অবশ্য এ দিন বন্ধই ছিল।
কাটোয়ায় মহকুমাশাসকের অফিস ও কাটোয়া ২ ব্লক অফিসে কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৪৭ জন বন্ধ সমর্থককে আটক করে পুলিশ। পানাগড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বন্ধ সমর্থকেরা। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। কাঁকসার কুলডিহায় এক তৃণমূল সমর্থকের খড়ের গাদায় বন্ধ সমর্থকেরা আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। বিকেলে পানাগড় রেল কলোনি এলাকায় সিপিএমের একটি শাখা অফিসে তালা লাগানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানেনি।
বর্ধমান শহরে এ দিন বেসরকারি বাস চলেনি। ট্রেন স্বাভাবিক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছিল। বড় জোর ৩০-৪০ শতাংশ পড়ুয়া এসেছিলেন। তবে জেলার কলেজগুলিতে নির্ধারিত পরীক্ষা হয়েছে।
সব মিলিয়ে এ দিনের বন্ধ ব্যর্থ না সফল, তা নিয়ে বেধেছে রাজনৈতিক তরজা। রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা আসানসোলের তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটকের দাবি, “জেলার মানুষ বন্ধে সাড়া দেননি। সিপিএম জোর করে বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ব্যর্থ হয়েছে।” পক্ষান্তরে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “বন্ধ সফল করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ।”
সাধারণ ধর্মঘটের দু’দিন আগে থেকেই ধর্মঘটের বিরোধিতায় রাস্তায় নামবে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে শাসকদল। রাজনীতির কারবারিদের পর্যবেক্ষণ, “এ দিন দু’পক্ষে যে সব বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হল, সেগুলো মহড়া। শিল্প ধর্মঘটের দিন আরও বড় সংঘাতের আশঙ্কা থাকছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.