হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন নদিয়ার মাটিয়ারি গ্রামের বৃদ্ধা নিশারুন বিবি। মঙ্গলবারই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’ দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল তেরো বছরের সোমা মালকে। ওই কিশোরী কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ স্টেশন এলাকার বাসিন্দা বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। ‘ভুল’ বুঝতে পেরে কাটোয়া থানায় ওই কিশোরীর নামে ‘নিখোঁজ’ ডায়েরি করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে পুলিশ ওই কিশোরীর বাড়ি গিয়ে নিশারুন বিবির সার্টিফিকেটটি উদ্ধার করলে বুধবার সকালে ওই মহিলাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় সোমাকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার জ্বর নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক জটাইকৃষ্ণ মণ্ডলের অধীনে ভর্তি হয় সোমা। রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। সোমা ও নিশারুন বিবিকে এক দিনেই ছুটি দিয়েছিলেন চিকিৎসক জটাই মণ্ডল। আর সেই সময়েই পাল্টা-পাল্টি হয়ে যায় ডিসচার্জ সার্টিফিকেট। হাসপাতালের নার্স সরমা পালের কথায়, “নিশারুন বিবির বাড়ির লোকজনই প্রথম ভুলটি ধরতে পারেন। তার পরেই আমরা ওয়ার্ড মাস্টারকে ঘটনাটি জানাই।” এর পরেই ওয়ার্ড মাস্টার থানায় ওই কিশোরীর নামে ‘নিখোঁজ’ ডায়েরি করেন। |
পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের জন্য অগ্রদ্বীপ ফাঁড়ির দুই পুলিশকর্মী সোমার বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান তাকে। ওই দুই কর্মীর কথায়, “আমরা গিয়ে জানতে পারি মঙ্গলবারই সোমা বাড়ি ফিরে এসেছেন। আমরা কাগজপত্র দেখতে চাই। দেখি ওই কাগজটি নিশারুন বিবির ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেট’। আমরা তাকে আবার হাসপাতালে ফিরে যেতে বলি।” বুধবার সকালেই মহকুমা হাসপাতালের সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জানান সোমার বাবা-মা উত্তম মাল ও মলিনাদেবী।
উত্তমবাবু বলেন, “আমি বিশেষ লেখাপড়া জানিনা। ইংরেজিতে কার নাম লেখা ছিল দেখিনি। ওই কাগজটিকেই আমার মেয়ের ছাড়ের কাগজ মনে করে চলে আসি।” তিনি আরও জানান, কাগজে লেখা ওষুধগুলি কিনতেও বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এলাকায় ওই ওষুধ পাওয়া যায়নি। একথা শুনে মহকুমা
হাসপাতালেরই এক চিকিৎসকের প্রতিক্রিয়া, “ওষুধ পাওয়া না গিয়ে ভালই হয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধার ওষুধ খেলে কিশোরীর বিপদ হতে পারত।” উত্তমবাবুরা বলেন, “ভাগ্য ভাল আমাদের মেয়ের কোনও বড় ক্ষতি হয়নি। কিন্তু অন্য রোগীদের ক্ষেত্রেও যাতে এরকম কোনও অবহেলা আর না হয়, সে বিষয়ে হাসপাতালকে সতর্ক থাকতে হবে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ‘বিরক্ত’ হাসপাতালের সুপার সোমনাথবাবু। চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে বৈঠক করে ‘সতর্ক’ করেছেন তিনি। |