মেয়ের সঙ্গে মাধ্যমিকে বসে ইচ্ছে পূরণ মায়ের
রেখা-সুনীতারা পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের বিয়ে আটকে দিয়েছিল। অনেকে অবশ্য তা পারেননি। পড়াশোনায় যতি টেনে তাঁদের বিয়ের পিঁড়েতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ভিড়ে হুড়ার প্রত্যন্ত আমলাতোড়া গ্রামের বধূ চায়না কর্মকার ব্যতিক্রম। সংসার সামলে তিন বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করে এ বার তিনি মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছেন। বুধবার পুরুলিয়ার আয়েসা কাচ্ছি উর্দু হাইস্কুলে মেয়ে মানসীর সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তিনি পরীক্ষা দিলেন।
পাড়া থানা এলাকায় চায়নাদেবীর বাপের বাড়ি। ১৯৯৫ সালে স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। চায়নাদেবী বলেন, “তখন থেকেই পড়াশোনা করার ইচ্ছাটা রয়ে গিয়েছিল। সংসারের কাজ করার মধ্যেও সেই ইচ্ছেটা শেষ হয়ে যায়নি। এক ছেলে ও এক মেয়ে জন্মানোর পরে ভেবেছিলাম, ওরা বড় হোক। তারপরে স্কুলে ভর্তি হব। মাধ্যমিক পাশ করতেই হবে।” তাঁর স্বামী বিশ্বনাথ পেশায় কৃষিজীবী। পরিবারে শিক্ষার পরিবেশ রয়েছে। তিনি জানান, বাড়ির কাছে হাইস্কুল বলতে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে মজফ্ফর আহমেদ আকাডেমি হাই মাদ্রাসা স্কুল রয়েছে। মেয়ে মানসী ওই স্কুলেই পড়ত। ওই স্কুলে কয়েক জন বেশি বয়েসি মহিলাও পড়ে। তাঁদের দেখে স্কুলে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছাটা তাঁর ফের মাথাচাড়া দেয়। ২০০৯ সালে মানসী অষ্টম শ্রেণিতে ওঠার পরে তিনিও স্কুলে গিয়ে অষ্টম শ্রেণিতেই ভর্তি হন।
মেয়ের পাশে পরীক্ষা দিচ্ছেন চায়নাদেবী (বাঁ দিকে)। ছবি: প্রদীপ মাহাতো।
পরিবারে আপত্তি ওঠেনি? তাঁর কথায়, “শ্বশুরবাড়িতে কেউ আপত্তি তোলেনি। স্বামী আমাকে উৎসাহ দিয়েছিল। মেয়ের মতও নিয়েছিলাম। এক সঙ্গে স্কুলে যাব শুনে, সে খুশিই হয়েছিল।” এর পরে সাইকেলে মা-মেয়ে এক সঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা করেছেন। এক সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। ক্লাসের ফাঁকে মেয়ের বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মেতে না ওঠা গেলেও স্কুলে তাঁর বয়েসি কয়েক জন ‘ছাত্রীর’ সঙ্গে চায়নাদেবী গল্প করতেন। ছেলে মানস পড়ত অন্য স্কুলে। বাড়িতে মা-মেয়ে এক সঙ্গে ক্লাসের পড়া করেন। চায়নাদেবী বলেন, “সকালে উঠে রান্না সেরে তারপরে স্কুলে যেতাম। তবে রোজ স্কুলে যেতে পারতাম না। সপ্তাহে তিন-চার দিন যেতাম। যে দিন যেতাম না, মেয়ের কাছ থেকে স্কুলের পড়া বুঝে নিতাম।”
এতগুলো বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকার পরে ফের পড়াশোনা শুরু করতে অসুবিধা হয়নি? মাথা নাড়েন চায়নাদেবী। বলেন, “বাড়িতে ছেলে, মেয়েকে তো আমিই পড়াতাম। তাই খুব একটা অসুবিধা হয়নি। স্কুলের শিক্ষকরাও খুব সহযোগিতা করেছেন।” স্কুলের বাংলা ভাষার শিক্ষক মতিবুর রহমান দালাল বলেন, “চায়নাদেবী সবার সঙ্গে সাবলীল ভাবে মেশেন। ক্লাসের মধ্যে তাঁকে নিয়ে আমাদের বা তাঁর কখনও অস্বস্থি হয়নি। প্রতি বছর পাশ করেছেন। আশাকরি মাধ্যমিকেও ভাল ফল করবেন।” মেয়ের বন্ধু সন্ধ্যা সরেন, মঙ্গলা কুম্ভকার, শোভারাম মুর্মুরা বলেন, “কাকিমা আমাদেরও পরীক্ষায় ভাল ফল করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন।” স্কুলের প্রধান শিক্ষক আহমদুল্লা আনসারি বলেন, “চায়নাদেবীর এই উৎসাহ তাঁর মত পড়াশোনা শেষ না করতে পারা অনেককে উৎসাহ দেবে।” পরীক্ষাকেন্দ্রের ইনচার্জ মুর্শিদ আলম আনসারি ও মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক আবদুল লতিফ আনসারি বলেন, “লেখাপড়া করার ইচ্ছা থাকলে বয়েস যে কোনও বাধা নয়, ওই মহিলা ফের প্রমাণ করলেন।” পরীক্ষা শেষ হতেই চায়নাদেবীর বলেন, “কত দিনের ইচ্ছা ছিল, মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব। আজ সেই ইচ্ছা পূরণ হল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.