ছ’বছরের মেয়ের সামনেই মাকে গলায় দড়ির ফাঁস জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের মাটিয়ায়। পুলিশ জানায়, মৃত মহিলার নাম শশীবালা মণ্ডল ওরফে রওশানা (৩৫)। অপরাধীদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তের জন্য।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময়ে বাংলাদেশ থেকে এসে মাটিয়ায় নিষিদ্ধপল্লি এলাকায় ওঠেন রওশানা। পরে সেখানেই হোটেল খুলে ব্যবসা শুরু করেন। ওই এলাকাতেই তাঁর আলাপ হয় মধু মণ্ডল নামে এক বাংলাদেশি
|
নিহত শশীবালার মেয়ে। নিজস্ব চিত্র |
যুবকের। তাঁরা বিয়ে করেন। তাঁদের এক মেয়ে মিষ্টির বয়স বছর ছ’য়েক। ছেলে জ্যোতির বয়স তিন। কিছু দিন আগে বাংলাদেশ যাবেন বলে বেরোন মধু। তারপর থেকে দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন রওশানা।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মঙ্গলবার রাত আড়াইটে নাগাদ জ্যোতির কান্নার শব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙে প্রতিবেশী এক দম্পতির। তাঁরা কয়েক জন বাইরে এসে দেখেন, রওশানার বাড়ির দরজা হাট করে খোলা। তাঁরা বাড়ির দিকে এগিয়ে আসতেই দুই অপরিচিত ব্যক্তি ঘর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তাদের পিছু ধাওয়া করেও ধরা যায়নি। ঘরে গিয়ে দেখা যায়, মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন রওশানা।
এ দিন বসিরহাট থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে মিষ্টি বলে, “রাতে আমি আর ভাই মায়ের পাশে শুয়েই ঘুমোচ্ছিলাম। বাইরে থেকে কে যেন মায়ের নাম ধরে ডাকল। আমারও ঘুম ভেঙে যায়। দেখলাম, একটা বেঁটে আর একটা লম্বা লোকের সঙ্গে জানলা দিয়ে কথা বলছে মা। তাদের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। আমি মাকে বলি, দরজা খুলো না। মা বলল, ওরা ভাল লোক। কিছু করবে না।” মিষ্টি বলে, “ঘরে ঢুকে একটা লোক মাকে বলে, তুমি একা মরবে। আমরা মরব না। হঠাৎই ওরা একটা দড়ি আর মায়ের লম্বা চুল গলায় পেঁচিয়ে দিল। ওদের বললাম, তোমরা মাকে মেরো না। শুনল না। আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। ভাই ঘুম ভেঙে চিৎকার করে ওঠে। ওরা পালিয়ে যায়।”
রওশানার প্রতিবেশী সুকুর আলি, কাকলি বিবি, মামা বেল্লা গাজি, সাহানুর গাজিরা বলেন, “যারা বাড়ির ভিতর থেকে পালাচ্ছিল, তাদের মুখে টর্চের আলো ফেলতেই আমাদের হুমকি দিল। তারপরে পাশের গলি দিয়ে পালাল। আমরা আর হদিস করতে পারিনি।”
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নিষিদ্ধপল্লিতে নানা ধরনের মানুষ আসেন। টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিবাদ বা অন্য কোনও গোপন বিষয় জেনে ফেলায় রওশানার সঙ্গে তাঁদের কারও ঝামেলা বাধে। তারই জেরে খুন করা হয় মহিলাকে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। |