পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের পুলিশি তদন্ত চলছে নিজের নিয়মে। অভিযুক্তদের কয়েক জন ধরাও পড়েছে। কিন্তু তদন্ত চলাকালীন খোদ মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারি তরফে অভিযোগকারিণীর ‘চরিত্রহনন’ করে যে সব মন্তব্য হয়েছে, তার জন্য একটি বারও দুঃখপ্রকাশ করেননি কেউ। ‘সংবেদনশীল’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সহমর্মিতার এই অভাবটুকুই আপাতত বিঁধছে অভিযোগকারী মহিলা ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’দের।
এর মধ্যে মঙ্গলবার রটে যায়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বাড়িতে আসবেন। তাই দিনভর তাঁর জন্য অপেক্ষাও করেছিলেন ওই মহিলা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আসেননি মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতে স্বভাবতই হতাশ ওই মহিলা ও তাঁর পরিবার।
তাঁকে ‘অবিশ্বাস’ করে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডে ধর্ষণের অভিযোগ ‘সাজানো ঘটনা’ বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার মন্ত্রিসভার সদস্য মদন মিত্র থেকে শুরু করে মহাকরণে দাঁড়িয়ে এক সরকারি প্রতিনিধিও সরাসরি মহিলার চরিত্র নিয়ে
কটাক্ষ করেন। তাতে ‘আহত’ হলেও কখনওই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেননি অভিযোগকারিণী। তবু মুখ্যমন্ত্রী এক বার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলে
বা কাছে ডাকলে তিনি মানসিক ভাবে কিছুটা উজ্জীবিত হতেন বলেই জানাচ্ছেন ওই মহিলা।
মুখ্যমন্ত্রীকে কি কিছু বলতে চেয়েছিলেন তিনি?
নির্দিষ্ট ভাবে তেমন কিছুই নয়। কিন্তু অভিযোগকারিণীর ঘনিষ্ঠমহলের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে এলে যন্ত্রণায় কিছুটা প্রলেপ পড়ত। |
অভিযোগকারিণী কি তবে আশা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ওঁর কাছে দুঃখপ্রকাশ করবেন? মহিলার ঘনিষ্ঠমহল এর প্রতিবাদ করে বলছে, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) এলে আমাদের বাড়িতে সম্মানিত অতিথি হয়ে আসতেন। তাই ওঁকে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে, এমন কথা আমরা ভাবতে পারি না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিটুকু আমাদের জন্য জরুরি ছিল। মুখ্যমন্ত্রী এসে ওর দুঃখটা ভাগ করে নিলে ও অবশ্যই কিছুটা জোর পেত।” মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নিস্ফল অপেক্ষার শেষে ওই মহিলা তাই স্বভাবতই আরও হতাশ।
ধর্ষণে অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হওয়ার পরেও কেটে গিয়েছে আরও চার দিন। তদন্তের দরকারে বার কয়েক লালবাজারে ছোটাছুটি ছাড়া এই ক’টা দিন বাড়ি থেকে পারতপক্ষে বেরোননি অভিযোগকারী মহিলা। বুধবারই তিনি প্রথম নিজের প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেরোন। দুই মেয়ে, ঠাকুমা, ভাই ও ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে কিছু ক্ষণের জন্য গির্জায় গিয়েছিলেন তিনি। গোয়েন্দাপ্রধান দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে পুলিশি তদন্তে অভিযুক্তেরা ধরা পড়ার পরে সামাজিক সহমর্মিতাও কিছুটা অর্জন করে নিতে পেরেছেন অভিযোগকারিণী। কিন্তু এখনও অবসাদ তাঁর নিত্যসঙ্গী। পরিবারের লোকেরা বলছেন, একা হলেই মহিলা কান্নাকাটি করছেন। ডাক্তারের পরামর্শমতো রোজ ‘ডিপ্রেশন’ কাটানোর ওষুধ খেতে হচ্ছে তাঁকে। রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে ভরসা ঘুমের ওষুধ।
পরিবার-সূত্রে জানা গেল, অভিযোগকারিণীর দুই মেয়ে অবশ্য স্কুলে যেতে শুরু করেছে। কিন্তু বাচ্চাদের স্কুলবাসের সঙ্গে এখনও এক জন পুলিশকর্মী থাকছেন। ওই মহিলার এক আত্মীয়া বলছিলেন, “আস্তে আস্তে হয়তো সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু কবে? এখনও আমরা কেউই ওই ঘটনার ছায়া থেকে বেরোতে পারছি না।” |