দেগঙ্গায় গ্রেফতার এক
ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে, গুলি করে লুঠপাট বসিরহাটে
গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে এক ব্যবসায়ীকে জখম করে তাঁর বাড়িতে লুঠপাট চালিয়ে পালিয়ে গেল এক দল ডাকাত। রবিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট থানার উত্তর কাঁকড়া গ্রামে সুশান্ত নাথ নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সুশান্তবাবুকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
সুশান্তবাবুর স্ত্রী কাকলিদেবীর অভিযোগ, প্রায় ৯ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র লুঠ করার পরে ডাকাতেরা তাঁর স্বামী, তাঁকে ও তাঁদের মেয়েকে মারধর করে। চিৎকার করলে গলায় ভোজালি ধরে খুনের হুমকি দেয়। চলে যাওয়ার সময় গ্রামের মানুষ বাধা দিতে গেলে ডাকাতেরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে রাতেই বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার। ডাকাতির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ওই রাতেই দেগঙ্গার গাংনিয়া গ্রাম থেকে ওয়াদাদ গাজি নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ডাকাতদের তাণ্ডবে লণ্ডভন্ড ঘর। ছবি: নির্মল বসু।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মোজাইকের টালি-সহ হার্ডওয়ারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সুশান্তবাবু। গ্রামের তাঁর দোতলা বাড়ির একতলায় একটি ঘরে গুদাম। সেখানে তাঁর ব্যবসার মালপত্র থাকে। অন্য একটি ঘরে থাকেন নাথ দম্পতি। দোতলায় থাকেন বড় মেয়ে শর্মিষ্ঠা। মাস খানেক আগে কাকলিদেবীর একটি কন্যাসন্তান হয়েছে। তাঁর দেখভালের জন্য বাড়িতে এক আত্মীয়া সুচিত্রা নাথ এসে রয়েছেন। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শর্মিষ্ঠা এ দিন রাত জেগে পনাশোনা করছিলেন। বাড়ির সকলে তখন ঘুমিয়েছিলেন। শর্মিষ্ঠার কথায়, “রাত তখন পৌনে একটা। হঠাৎ নীচের তলায় গ্রিলের গেট ভাঙার শব্দ পাই। জানলা দিয়ে মুখ বাড়াতেই বুঝতে পারি বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। ততক্ষণে আওয়াজের চোটে বাড়ির অন্যরাও ঘুম থেকে উঠে পড়েন।” ডাকাত পড়েছে দেখে মা ও মেয়ে চিৎকার করতে থাকেন। সুশান্তবাবু ঘরের দরজা আগলাতে যান। চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের বাড়ির লোকজন উঠে পড়লেও, ডাকাতেরা তাঁদের ঘর থেকে বের হলে খুন করার হুমকি দেয়। কাকলিদেবী জানান, ডাকাতদের সকলের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা ছিল। হাতে ছিল বন্দুক, পিস্তল। হুমকির চোটে কেউ বাড়ির বাইরে না বেরেনোয় ডাকাতেরা অনায়াসে সুশান্তবাবুর বাড়ির গ্রিলের গেট, কাঠের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঘরে ঢুকেই তারা সুশান্তবাবুকে চপার দিয়ে কোপায়। তিনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সুশান্তবাবু মারা গিয়েছেন ভেবে ডাকাতদের কয়েকজন দোতলায় উঠে যায়। কয়েক জন নীচেই থাকে। নীচে, অন্য ঘরে ছিলেন সুচিত্রাদেবী। ডাকাত দেখে তিনি ভয়ে জ্ঞান হারান। নীচের ঘরে আলমারি ভেঙে অবাধে লুুঠপাট চালায় কয়েক জন। ইতিমধ্যে দোতলার ঘরে লুঠপাট চালিয়ে কাকলিদেবী ও তাঁর মেয়েকে চুলের মুঠি ধরে মারতে মারতে নীচে নামিয়ে আনে ডাকাতেরা। লুঠপাঠ চালিয়ে ডাকাতেরা যখন চলে যাচ্ছিল সেই সময় জ্ঞান ফিরে আসে সুশান্তবাবুর। তিনি কোনওরকমে লোক ডাকার চেষ্টা করলে ডাকাতেরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। যদিও সুশান্তবাবুর গায়ে গুলি লাগেনি। ততক্ষণে গ্রামের লোকজন বাড়ির চারধারে জড়ো হতে শুরু করেছেন। বেগতিক দেখে ডাকাতেরা বোমা ছুড়তে ছুড়তে কাঁকড়া মির্জানগর স্টেশনের দিকে পালিয়ে যায়। গুরুতর জখম অবস্থায় সুশান্তবাবুকে প্রথমে ধান্যকুড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকে তাঁকে কলকাতার হাসাপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
সোমবার সকালে গ্রামে গিয়ে দেখা গেল নাথবাড়ির সামনে গ্রামবাসীর ভিড়। পরিবারের সকলে তখনও ভয়ে কাঁটা হয়ে রয়েছেন। কাঁদতে কাঁদতে কাকলিদেবী জানালেন, “ওদের হাতে পায়ে ধরে বললাম, যা পার নিয়ে যাও। মারধর কোরো না। কিন্তু ওরা স্বামী ও মেয়েকে প্রচণ্ড মারধর করল। আমাকেও চুলের মুঠি ধরে মেরেছে। যাওয়ার সময় গুলিও চালায়” প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, যে ভাবে ডাকাতি হয়েছে তাতে কেবল লুঠপাট চালানোই ডাকাতদের উদ্দেশ্য ছিল না। ডাকাত দলে ১০-১২ জন ছিল। সুশান্তবাবুকে খুন করতে চেয়েছিল ওরা। পুরনো কোনও শত্রুতার জেরেই এই হামলা কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ধৃতকে জেরা করে বাকিদের ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.