সম্পাদক সমীপেষু...
উদারতা দেখাতে গিয়ে বাঙালিই অন্য ভাষা বলে
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘নতুন বিমানবন্দরে কি একটাও বাংলা অক্ষর দেখা যাবে?’ (২৫-১) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই নিবেদন। সুনীলবাবুর উদ্বেগ যথার্থ। তিনি লিখেছেন, ‘কর্নাটকের মানুষ তাঁদের ভাষাকে খুব ভালবাসেন। রাজ্যের অনেক ক্ষেত্রেই কন্নড় ভাষার প্রয়োগ হয়। বেঙ্গালুরুর অতি আধুনিক... বিমানবন্দরে... সমস্ত লিখিত নির্দেশিকাতেই ইংরেজি ও হিন্দির সঙ্গে কন্নড় ভাষাও স্থান করে নিয়েছে।’
সেখানে স্মরণ রাখা উচিত ‘হিন্দি রাষ্ট্রভাষা নয়, হিন্দি ইংরেজির মতো এবং ইংরেজির সঙ্গে কেবল মাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসের কাজকর্মের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি বা অফিসিয়াল ভাষা। তবুও বাঙালিরাই আগ বাড়িয়ে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা বলতে দ্বিধাবোধ করে না। তা ছাড়া, অতি উদারতা জাহির করতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষা বাংলা ত্যাগ করে হিন্দি বা অন্য ভাষায় কথা বলতে এগিয়ে যায়। তার জন্য সংখ্যালঘু আদিবাসী, নেপালি, বিহারি বা রাজস্থানিরা যাঁরা সবাই বাংলা জানেন এবং বলতে পারেন, তাঁরাও বাঙালিদের হিন্দি বলার আগ্রহ দেখে হিন্দিই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন বাংলা ছেড়ে দিয়ে।
অথচ বাঙালি ছাড়া ভারতের সব রাজ্যের মানুষই নিজের মাতৃভাষাকে খুব ভালবাসে এবং আত্মমর্যাদাবোধের প্রমাণ দিয়ে গৌরব মনে করে। বাংলা মাতৃভাষার প্রতি প্রকৃত ভালবাসা বাঙালির নেই এবং বঙ্গ-গৌরবও বোধহয় নেই। সেই জন্যই এত দুরবস্থা। মনে রাখা দরকার, ত্রি-ভাষা নীতি মেনেই কোনও অ-হিন্দি রাজ্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থায় হিন্দি, ইংরেজি ও রাজ্য-ভাষা ব্যবহার হয়।
তাই বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দরে হিন্দি, ইংরেজি ও কন্নড় ভাষা তিন ভাষার ব্যবহার চলছে ত্রি-ভাষা নীতি মেনে। এই ত্রি-ভাষা নীতি প্রণয়ন এবং অ-হিন্দি রাজ্যের ভাষাকে হিন্দু ও ইংরেজি ভাষার সঙ্গে ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করতে দক্ষিণী রাজ্যগুলির বিশেষ করে তামিলদের অসামান্য ত্যাগস্বীকার ও জীবন-মরণ সংগ্রাম করতে হয়েছিল। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ৭০ জন তামিল প্রাণ হারিয়েছিলেন সংগ্রামে। ডি এম কে দলের চেন্নাস্বামী গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে আত্মাহুতি দেন। করুণানিধি-সহ বহু তামিল নেতা-কর্মী গ্রেফতার ও কারাবরণ করেন। এই ত্যাগের বিনিময়ে ত্রি-ভাষা নীতি অর্জিত।
বাঙালিরা পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষা রক্ষা করার জন্য কিছুই না-করে তামিলদের অর্জিত ত্রি-ভাষা নীতির সুফল ‘ফাউ’ হিসাবে পেয়ে রেল, পোস্টঅফিস, ব্যাঙ্ক, বিমান ইত্যাদি সংস্থায় নিছক কেন্দ্রের দয়ায় বাংলা ভাষাকে হিন্দি ও ইংরেজির পাশে, সব জায়গায় না-হলেও কোথাও একটি পেলেই ধন্য। কারণ, বাংলা ভাষা যে থাকতে হবে এই অধিকারের খবরই রাখে না। অধিকাংশ বাঙালি ত্রি-ভাষা নীতি কী তা-ও জানে না।
শুধু কলকাতা বিমানবন্দরে বাংলা অক্ষর থাকা নিয়ে উদ্বেগ কেন? কলকাতার অনেক জায়গায় এবং আসানসোল, খড়্গপুর, দুর্গাপুর ইত্যাদি সর্বত্রই বিহার না বাংলা চেনাই যায় না। আর জঙ্গলমহল নেপালিদের মতো দাবি তুলছে ছত্রধর মাহাতোর মাধ্যমে। দার্জিলিং পার্বত্য পরিষদ এলাকার সর্বত্র বাংলা ভাষা ও বাঙালি উচ্ছেদ করে, এমনকী পশ্চিমবঙ্গ নাম ও দার্জিলিং নাম দুটোই মুছে করা হয়েছে গোর্খাল্যান্ড। সঙ্গে তরাই-ডুয়ার্স ও শিলিগুড়ির মৌজা হস্তান্তর করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিও করা হয়েছে। তাই গত ১৬ জানুয়ারি ২৪ ঘণ্টা বাংলা ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটি। কারণ, যেহেতু গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জি টি এ গোর্খাল্যান্ডেরই প্রথম পদক্ষেপ এবং পরিণামে বাংলা ভাগ। তাই জি টি এ বাঙালিদের দাবিতে এবং গোর্খাল্যান্ড ও বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলা ধর্মঘটে উত্তরের ৬টি জেলার মানুষ ব্যাপক ভাবে সাড়া দিয়ে প্রমাণ করেছে যে বাঙালি তাদের মাতৃভাষাকে, বাঙালি জাতিকে এবং পশ্চিম বঙ্গভূমির অখণ্ডতা রক্ষা করায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তা ছাড়া, ত্রিভাষা সূত্র মেনে রেল-সহ কেন্দ্রের সরকারি/বেসরকারি সব সংস্থায় বাংলাকে হিন্দি ও ইংরেজির সঙ্গে রাখার দাবিতে বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটি ২০০১ সাল থেকে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছে।
ভুল তথ্য
‘পুর দায়িত্বে বিধাননগর মেলা শুরু’ (১৯-১) খবরে প্রকাশিত একটি তথ্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার পিতামহ ও তৎকালীন বিধানচন্দ্র রায় মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য প্রয়াত হেমচন্দ্র নস্কর লবণহ্রদ উপনগরী (আজকের বিধাননগর) তৈরির জন্য পুরো জমিটাই দান করেন মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে। অথচ সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে দাতার নাম হেমচন্দ্র কানুনগো। উল্লেখ করা যায় যে, বিধান রায়ের মন্ত্রিসভায় হেমচন্দ্র কানুনগো বলে কোনও মন্ত্রী ছিলেন না।
অমানবিক
জীবিত তো বটেই, মৃত ব্যক্তিকেও সম্মান জানানো একটা সামাজিক প্রথা। কিন্তু অপঘাতে মৃত কোনও মানুষকে যখন হাত-পা ঝুলন্ত অবস্থায় ট্রলি করে থানার তত্ত্বাবধানে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন কিন্তু আমরা মানবিক দিকটার কথা একবারও ভাবি না। হয়তো এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে।
প্রশাসনের কাছে একটি বিনীত আবেদন, একটি ঢাকা গাড়ি বা অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নিন যাতে এই পৈশাচিক ববস্থার অবসান হয় এবং মৃতের পরিবার এই বিড়ম্বনা ও অসম্মান থেকে মুক্তি পায়।


অসভ্য সমাজ, অসভ্য আচরণ
সকালে উঠেই রামচন্দ্র গরাইয়ের রক্তাক্ত মুখটা দেখেই চমকে উঠলাম (‘সরস্বতীর ভাসানে তারস্বরে মাইক...’, ৬-২)। ওই আহত মুখটা আমারও হতে পারত। কিংবা কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন প্রতিবাদী মানুষের।
তারস্বরে বক্স বাজানোর প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমিও হেরে গেছি। মার খাইনি তবে যথেষ্ট অপমানিত হয়েছি। মানসিক আঘাতও শারীরিক আঘাতের চেয়ে কিছু কম নয়। কাউকে পাশে পাইনি। না প্রশাসন, না কোনও প্রতিবেশী। খুব আশ্চর্য লাগে, যখন দেখি শব্দদূষণের প্রতিবাদী সমর্থনে কোনও রাজনৈতিক দলই এগিয়ে আসে না। রাজ্যে একটা পরিবেশ দফতর আছে। কিন্তু রামচন্দ্রবাবুকে দেখতে পরিবেশমন্ত্রী ছুটে গেছেন বলে শুনিনি। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও মিছিল করেননি। এ রাজ্যে বেশ কড়া শব্দবিধি আইন আছে, আইন রক্ষক আছেন, আদালত আছে, শাস্তির ব্যবস্থা আছে। তা সত্ত্বেও এই অপরাধ সমানে চলছে।
পুজো-পার্বণ-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সামাজিক অনুষ্ঠানে শব্দবিধি না-মেনে চলাটাই প্রথা হয়ে গেছে। ওই সময়ে মনোসংযোগজনিত কোনও কাজই আমি করতে পারি না। না-শুনতে চাইলেও কেন আমাকে জোর করে কানের পর্দা ফাটিয়ে গান শোনানো হবে? যে-গান আমি একবারও শুনতে চাই না, সে-গান কেন বারে বারে শুনতে হবে? যারা এ রকম কুকাজ দিনের পর দিন করছে, তাদের সঙ্গে নাৎসি বাহিনীর তফাত কোথায়?
রাজ্যে একটা মানবাধিকার কমিশন আছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আছে। তা সত্ত্বেও রামচন্দ্রবাবুদের নিরাপত্তা নেই। তা হলে রামচন্দ্রবাবুরা কোথায় যাবে? তারস্বরে মাইক্রোফোন বাজিয়ে প্রকাশ্যে দিনে-রাতে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র যে অপরাধ ঘটছে, সে-জন্য কেন অভিযোগ জানাতে হবে? প্রশাসন ইচ্ছা করলেই সাংবাদিকের কাজে লাগিয়ে অপরাধস্থলে ছুটে যেতে পারে। মাইক্রোফোন বাজেয়াপ্ত, জরিমানা ধার্য কিংবা শাস্তির ব্যবস্থা অনায়াসেই করা যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.