মুর্শিদাবাদের পরে এ বার মালদহেও পঞ্চায়েত ভোটে একাই লড়বে কংগ্রেস। শনিবার এ কথা ঘোষণা করলেন মালদহের জেলা সভাপতি তথা সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী ওরফে ডালু। তিনি বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর জেলার নেতৃত্বের উপরেই পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। কেননা, ওই তিন জেলাই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। মালদহে কংগ্রেস পঞ্চায়েত ভোটে একাই লড়াই করবে।”
গত পঞ্চায়েত ভোটে একক ভাবে লড়ে জেলা পরিষদের ৩৪টির মধ্যে কংগ্রেস ১৮টি আসনে জেতে। তৃণমূল একটিও পায়নি। পঞ্চায়েত সমিতির ৪০৩টির মধ্যে কংগ্রেস ২০৩, তৃণমূল ৩টি আসন পায়। পঞ্চায়েতের ১,৮৮৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৮৮০ এবং তৃণমূল ৪০টি আসন পায়। এই পরিসংখ্যান দিয়ে হাসেমের দাবি, “জেলায় কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীরা চাইছেন, আগামী পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস একাই লড়ুক।”
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এখনও তৃণমূলের সঙ্গে জোটে থাকার কথা জানালেও বেশ কিছু দিন আগেই বহরমপুরের কংগ্রেসি সাংসদ অধীর চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদে জোট হবে না। কংগ্রেস মুর্শিদাবাদে একাই লড়বে। এ বার মালদহও ‘একলা চলা’র কথা ঘোষণা করায় কিঞ্চিৎ ‘বিব্রত’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে কাউকে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে পঞ্চায়েত ভোটে জোট হবে না দল একক ভাবে লড়বেতা ঠিক করেন জেলা নেতৃত্ব। স্থানীয় পরিস্থিতিকে মর্যাদা দিয়ে কেউ যদি একক ভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেয়, প্রদেশ কংগ্রেস তার বিরুদ্ধাচরণ করে না।” এর কারণ ব্যাখ্যা করে প্রদীপবাবু বলেন, “সব জেলার পরিস্থিতি এক রকম নয়। তাই স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কোনও জেলা নেতৃত্ব একা লড়তেই পারে। এই সিদ্ধান্ত মতোই এর আগে পাঁচটা ভোট কংগ্রেস লড়েছে।”
এবং জোট ছেড়ে একলা লড়ার এই ‘ইচ্ছে’ মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুর আগেই প্রদেশ নেতৃত্বকে জানিয়েছিল বলে প্রদীপবাবু জানিয়েছেন। তবে ভোটের এখনও দেরি রয়েছে। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে জোট শরিক তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক ‘সম্পর্ক’ কী দাঁড়ায়, তার প্রেক্ষিতে প্রদীপবাবু আবু হাসেমের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটের দেরি আছে। ভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গেও যেমন আমাদের কথা হবে, আবু হাসেম সাহেবের সঙ্গেও আলোচনা করব।”
এ দিনের ঘোষণার পরেই আজ, রবিবার মালদহের মানিকচকে জনসভারও ডাক দিয়েছে জেলা কংগ্রেস। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মানিকচকের বিধায়ক তৃণমূলের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তাই তৃণমূলকে ‘বার্তা’ দিতেই কংগ্রস মানিকচক থেকেই পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি শুরু করতে চাইছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের অভিমত। আবু হাসেমও সেই ‘ইঙ্গিত’ দিয়ে বলেন, “বিধানসভা ভোটে মালদহ জেলা কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে জোট চায়নি। হাইকমান্ডের নির্দেশে আমাদের তিনটি আসন তৃণমূলকে ছাড়তে হয়। আশা করি, পঞ্চায়েত ভোটে তা হবে না। আমরা একক ভাবেই লড়ব।” হাসেমের এই ঘোষণাকে ‘গুরুত্ব’ না দিয়ে সাবিত্রীদেবীর পাল্টা প্রতিক্রিয়া, “আসলে জেলায় কংগ্রেসের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। কংগ্রেসের কর্মীরা আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। গত পঞ্চায়েত ভোটের পরে জেলার রাজনৈতিক সমীকরণে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তৃণমূলের শক্তি বহুগুণ বেড়েছে। কংগ্রেস একলা চললে, আমরাও একলা চলতে পারি।” |