আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শনিবার গভীর রাতে উলুবেড়িয়ার জগদীশপুর গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে গৃহকর্তাকে মারধর করে টাকা ও গয়না লুঠ করেও শেষ রক্ষা করতে পারল না দুষ্কৃতীরা। পুলিশ ও গ্রামবাসীদের তৎপরতায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ধরা পড়ে গেল ১১ জন। উদ্ধার হল লুঠ হওয়া জিনিসপত্র।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জগদীশপুরের বাসিন্দা, বছর পঁচাত্তরের শৈলেন্দ্রনাথ দত্ত কিছু দিন আগে পর্যন্ত একটি সোনার দোকান চালাতেন কালীনগর বাজারে। শুক্রবার রাতে তিনি বাড়ির বারান্দার এক দিকে, এবং তাঁর স্ত্রী করুণাময়ীদেবী অন্য দিকে ঘুমোচ্ছিলেন। রাত ১টা নাগাদ দুষ্কৃতীরা পাঁচিল টপকে ঢুকে বারান্দার দরজা ভেঙে ফেলে। শৈলেন্দ্রবাবুকে রিভলভার ও ভোজালির বাট দিয়ে মারা হয়। করুণাময়ীদেবীর সোনার হার, বালা, দুল ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। তার পরে শৈলেন্দ্রবাবুর ছেলে শিবনাথের ঘরের দরজা ভেঙে ফেলে। শিবনাথ রত্ন বিক্রেতা। তাঁর কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা, মোবাইল ফোন এবং বেশ কিছু রত্ন হাতিয়ে সকলকে একটি ঘরে আটকে রেখে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
ঘণ্টা দেড়েক ধরে লুঠপাট চলাকালীন শৈলেন্দ্রবাবুর এক প্রতিবেশী উলুবেড়িয়া থানায় ফোন করে ডাকাতির কথা জানিয়ে দেন। পুলিশ আসার আগেই অবশ্য দুষ্কৃতীরা চলে যায়। আইসি কৃষ্ণেন্দু ঘোষ দস্তিদারের নেতৃত্বে পুলিশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে সংলগ্ন এলাকায় রাত থেকেই তল্লাশি শুরু করে। কালীনগর পূর্বপাড়ায় গঙ্গার পাড়ে সন্দেহভাজন পাঁচ জনকে এক সঙ্গে দেখতে পেয়ে পুলিশ ধরতে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের এক জন পুকুরে ঝাঁপ মারে। |
বাকিরা পালাতে থাকে। এক কনস্টেবল পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে এক দুষ্কৃতীকে ধরে। লুঠ হওয়া গয়না ভর্তি একটি ব্যাগ তার কাছ থেকেই মেলে। যারা পালাচ্ছিল, তাদের এক জন পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালায়। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে এক দুষ্কৃতী আহত হয়। তার কাঁধে গুলি লাগে। তাকে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুকুর থেকে ধরা পড়া দুষ্কৃতীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ তার বাকি সঙ্গীদের চেহারা এবং পোশাকের বর্ণনা পায়। সেই মতো গ্রামবাসীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। খবর দেওয়া হয় আশপাশের থানাকেও।
ভোর হতেই কালীনগর পূর্বপাড়া থেকে দু’জন, রাঙামেটে গ্রামে একটি নৌকোর খোলে লুকিয়ে থাকা এক জন এবং মউবেশিয়া গ্রাম থেকে পাঁচ দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। সকলকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গড়চুমুক থেকে এক দুষ্কৃতীকে ধরে পুলিশ। শনিবার সকাল ৭টার মধ্যেই ১১ জন দুষ্কৃতী ধরা পড়ে যায়। হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরা বলেন, “ধৃতদের মধ্যে ২ জন স্থানীয়। বাকিরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলাহাট এবং কুলপির বাসিন্দা। অনেকের বিরুদ্ধেই ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। আর দু’এক জন দুষ্কৃতী বাইরে থাকতে পারে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। লুঠের মাল সবই উদ্ধার হয়েছে।” |