শহরের ট্যাক্সির রং বদলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সাত দিনের মধ্যেই পিছু হটল রাজ্য।
ক’দিন আগেই শহরের ট্যাক্সির রং হলুদ থেকে বদলে নীল-সাদা হবে বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। ট্যাক্সি নিয়ে তাঁর কিছু নতুন ভাবনার কথা জানাতে শনিবার ট্যাক্সি মালিক ও চালকদের বৈঠকে ডেকেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। সেখানে তাঁদের সম্মিলিত চাপের মুখে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আপনাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। ট্যাক্সির রং এবং চালকের পোশাক যে রঙের ছিল, তাই থাকবে। যদি আপনারা না চান, তা হলে আগামী পঞ্চাশ বছরেও ট্যাক্সির রং পরিবর্তন করা হবে না।”
ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রের এই বৈঠকের পর মদনবাবু জানান, ট্যাক্সির মালিক ও চালকদের দাবিদাওয়া নিয়ে কাল, সোমবার মহাকরণে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে। তারপরই চূড়ান্ত নির্দেশিকা জারি করা হবে। তবে শুধুমাত্র ট্যাক্সির সমস্যাই নয়, বাস এবং মিনিবাসের মালিক ও চালকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়েও সোমবার তিনি বৈঠক করবেন বলে জানান পরিবহণমন্ত্রী।
এ দিন বৈঠকে মন্ত্রী ফের ঘোষণা করেন, শহরের ট্যাক্সির রং হলুদ-নীলের পরিবর্তে নীল-সাদা এবং চালকদের গাঢ় নীল রঙের পোশাকের বদলে সাদা শার্ট-নীল প্যান্ট করার কথা ভাবা হয়েছে। তখনই চতুর্দিক থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ট্যাক্সির মালিক ও চালকেরা যে সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ, সমস্বরে তা জানিয়ে দেন মন্ত্রীকে। তাঁদের প্রধান যুক্তি, গাড়ির রং বদলাতে প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ। তাই এটা করা যাবে না। সেই চাপের মুখে শেষমেষ পিছু হটেন পরিবহণমন্ত্রী।
তবে মদনবাবু পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ট্যাক্সি চালকেরা কোনও ভাবেই যাত্রীদের প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুদের ফিরিয়ে না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন মদনবাবু। তাঁর আবেদন, “রাস্তায় ভাঙাচোরা ট্যাক্সি বের করবেন না। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালাবেন না।” মন্ত্রীর দাওয়াই, ট্যাক্সির সামনের আসনের পিছনের দিকে গাড়ির নম্বর লিখে রাখতে হবে। দ্রুত ইলেকট্রিক মিটার বসাতে হবে।
যত দিন তা না হচ্ছে, তত দিন যাত্রীদের হাতে লেখা টিকিট দিতে হবে।
ট্যাক্সির চালক ও মালিকেরা মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, রাস্তায় যেখানে-সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে টাকা নেয় পুলিশ। তাঁরা দাবি করেন, রাত ন’টার পর যাত্রী নিয়ে দূরে গেলে মূল ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকৃত হোক। মন্ত্রী তাঁদের দাবি বিবেচনার
আশ্বাস দেন। মন্ত্রী বৈঠকে ঘোষণা করেন, শহরে বেশ কিছু জায়গায় ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ও টোল-ফ্রি টেলিফোন রাখা হবে। ট্যাক্সির চালক ও যাত্রীরা রাস্তায় অসুবিধায় পড়লে তাঁদের সাহায্য করার জন্য একটি টেলিফোন নম্বর (৬৪৫১৬৭১৮) দেন মদনবাবু।
বৈঠক চলাকালীন হলের বাইরের রাস্তায় একটি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকার অভিযোগে চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পুলিশ। তবে পুলিশ তাঁর কাছে টাকাও চেয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্ট চালক। তাঁর মুখে এই কথা শুনে মন্ত্রীর সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন চালকেরা। তাঁরা ওই পথ অবরোধের চেষ্টাও করে। কিন্তু মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। |