নাম ভাঁড়িয়ে কুকর্ম চলছেই, তবে ধরা পড়ল এই প্রথম
কটা ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করতে গিয়ে আরও একটা মুখোশ খুলে পড়ল এই শহরের। আর তার গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়াল কলকাতা পুলিশ।
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের আসল রহস্য ফাঁস করতে গিয়ে শনিবার লালবাজারে গোয়েন্দা প্রধান দময়ন্তী সেন জানান, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের একটি দল রয়েছে। তারা নিয়মিত নাইট ক্লাবে যেত। প্রায়ই ঝামেলা করত, কিন্তু সেটা নাম ভাঁড়িয়ে। ওই মহিলার সঙ্গে পরিচয় করার সময়েও কাদির খান, রুমান খান, সুনীত বজাজ, নাসির খানেরা নিজেদের আসল নাম বলেনি বলে জানিয়েছেন দময়ন্তী। গোয়েন্দা পুলিশের মতে, নাম ভাঁড়িয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধের ঘটনা কলকাতায় এর আগে বড় একটা শোনা যায়নি। পুলিশ প্রশাসনের মতে, শহরে অপরাধের এই নতুন কৌশলের বয়স খুব বেশি নয়। কিন্তু সেটা যে বেশ রমরমিয়ে চলছে, পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাই তা প্রমাণ করল। তবে আগে এর তেমন প্রত্যক্ষ প্রমাণ না পাওয়ায় গোলকধাঁধায় পড়তে হয় পুলিশকে। তবে সুখের কথা, অবশেষে অপরাধের কিনারা করা গিয়েছে। ধরা পড়েছে মুখোশের আড়ালে লুকোতে চাওয়া অপরাধীরা।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে কি ভাবে মুখোশের আড়ালে থেকে কাদির খান, রুমান খান, সুনীত বজাজরা অপরাধ করেছে। ওই মহিলার অভিযোগে লাভি-শরাফত-আজহার বলে যাঁদের নাম উঠে এসেছিল, তাঁরা আসলে নির্দোষ। কিন্তু তাঁদের নাম ব্যবহার করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে কাদির খান, রুমান খান, সুনীত বজাজ, মহম্মদ নাসির খানরা। ৫ ফেব্রুয়ারি নাইট ক্লাবের আলো-আঁধারিতে আক্রান্ত মহিলার সঙ্গে যারা ভাব জমায়, তারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল লাভি-শরাফত-আজহার বলে। তার পর ওই নামেই অপরাধ সংগঠিত করে গা ঢাকা দিয়েছিল তারা।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। নাইট ক্লাবের সিসিটিভি-র ভিডিও ফুটেজ আর হুমকি ফোনের সূত্র ধরে শনিবার তাদের সন্ধান পেয়ে যায় পুলিশ।
পুলিশের কথায়, অভিযুক্তদের বাড়িতে মা-বোন-স্ত্রী আছেন। তাই এই ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনও রকম ঝামেলা এড়াতেই বন্ধু ও পরিচিতদের নাম ব্যবহার করত রুমান, সুনীতরা। এটা তাদের কৌশল। আর এই কৌশলেই সেই রাতে ওই মহিলার সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ করতে গিয়ে লাভি-শরাফত-আজহারদের নাম বলেছিল অভিযোগকারীরা। যুগ্ম কমিশনার জানিয়েছেন, ওই রাতে যে আতঙ্কের মধ্যে মহিলা ছিলেন, তাতে অভিযোগকারীদের চেহারা বুঝতে তাঁর ভুল হতেই পারে। মহিলার আরও ভ্রান্তি হয়েছে অভিযোগকারীদের সঙ্গে লাভি-শরাফত-আজহারদের চেহারা এবং ব্যবহৃত গাড়ি (হোন্ডা সিটি)-র অদ্ভুত সাদৃশ্য থাকায়। পুলিশ জেনেছে, শরাফত, আজহারদের সঙ্গেই মৌলালির একটি ‘জিম’-এ ব্যায়াম করত অভিযুক্তরা। বছর খানেক আগে এমনই এক নাইট ক্লাবে দু’পক্ষের গণ্ডগোলও হয়েছিল। তাই অভিযুক্তদের কাছে লাভি ও তাঁর বন্ধুরা ছিলেন পরিচিত মুখ, চেনাজানা।
পার্ক স্ট্রিট এলাকার নাইট ক্লাবগুলি অর্থের লেনদেন ও অনেক জটিল সম্পর্কের আঁতুড় ঘর। ‘দম্পতি’ পরিচয়ে এখানেই অপরিচিতা মহিলার হাত ধরে মায়াবি আলোয় গা ভাসায় পুরুষ। তাঁরা কেই ব্যবসায়ী, কেউ চাকুরিজীবী, কেউ বা স্রেফ বড়লোক বাবার টাকায় ফুর্তি লুটতে আসা নব্যতরুণ। ওই মহিলার অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারল, নাইট ক্লাবে রাতের ‘কাস্টমারদের’ মধ্যে মুখোশ পরা রুমান খানরাও রয়েছে। যারা নাম ভাঁড়িয়ে অবলীলায় অপরাধ করে যাচ্ছে। সন্দেহ নেই, কলকাতার অপরাধের ইতিহাসে নবতম সংযোজন এই ঘটনা।
এ যাত্রায় কাদির-নাসিররা ধরা পড়ে গেল। তবে ওদের মতো হয়তো আরও কেউ কেউ থেকে গেল অন্তরালে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.