একটু গ্রিল, অল্প ফ্রাই, কিছুটা ড্রাই
রান্না আর রেসিপি এখন রীতিমত মানসম্মানের ব্যাপার। কেবল ভাল রাঁধতে জানলেই হয় না এখন। চাই আবিষ্কার। কে কত নতুন রান্না বানাতে পারল, কে কত বিদেশি খাবার পেশ করল, সঙ্গে তেলমশলা কম দিয়ে রান্না করতে পারল কি না এ সব নিয়ে এখন অতিথি আসার আগে তোলপাড় হয় বাড়ি। একটাই কথা, অভিনবত্ব। অবশ্য কেবল ইনোভেশনই শেষ কথা নয়। এখন বদলেছে খাবার ট্রেন্ডও। কে কোন ধরনের খাবার পরিবেশন করছেন, সেটা হাল ফ্যাশনের ট্রেন্ড কি না, এ দিয়ে বোঝা যাচ্ছে জেনারেল নলেজের দৌড়। তাই রান্না এখন শুধু খেতে ভাল হলেই হবে না। পাতে জায়গা করে নিতে হলে হাল-ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই হতেই হবে।
এখন যে ধরনের রান্না সব জায়গায় হইহই করে জিতে যাচ্ছে, তা হল গ্রিল করা খাবার, বার-বি-কিউ, তন্দুরির রকমফের। কম তেলে অথচ বাড়িতে সহজে বানানো যায়, এমন একটা রন্ধনযাত্রা, চলুন, আজ থেকে আমরা শুরু করি।
গ্রিল করে রাঁধা খাবার ভারতীয়দের খুব প্রিয়, তবে এই ঘরানার রান্নারও একটা ছোটখাটো ইতিহাস আছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে গিয়েছি, সেই অঞ্চলের শেফদের সঙ্গে অনেক গল্প করেছি। রান্না আর খোশগল্পের ফাঁকেই জানতে চেয়েছি, ওরা কোন খাবার, ঠিক কী ভাবে গ্রিল করে, আর সেই খাবারটা ঝলসেই বা রাঁধে কেন। বিচিত্র সব উত্তর মিলেছে, আজ সব রকমটাই আপনাদের শোনাব। সেই রকমারি রেসিপির মধ্যেও মূল রান্নাটাকে কিন্তু ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। গ্রিল করা অবশ্য বেশ সহজ আর মজাদার। উপাদানগুলো আশেপাশের বাজারেই মিলবে, পদ্ধতিটাও একঘেয়ে লাগবে না। কারণ, সব শেফই একমত ‘রান্না তো করি প্রয়োজনে, আর গ্রিল করি শখ করে।’
কিছু গ্রিল রেসিপি কিন্তু বেশ কয়েক দশক পুরনো। আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এ সব ধ্রুপদী, ভাল জাতের রান্না। তাই সময়, চলতি ট্রেন্ড এ সব কিছুকে নস্যাৎ করে বছরের পর বছর ধরে জনপ্রিয়। যেমন ধরুন, ফিশ ফিলে উইথ লেমন পার্সলে বাটার (যে কোনও হোটেলের মেনুতে বারো মাসই থাকবে), স্মোকড চিকেন উইথ তন্দুরি ম্যারিনেশন (আমার বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠানের স্টার-খাবার)।
রাজেশ দুবে’র ছবি: শুভেন্দু চাকী
এই রচনায় এ দেশের এই সব ঐতিহ্যবাহী খাবারদাবার তো রইলই, সঙ্গে অন্য দেশের যে সব নামী রান্না আমাদের হেঁসেলে জায়গা করে নিয়েছে, সেগুলোও আছে। সেই বিদেশিদের মধ্যেই আছে জার্ক চিকেন আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রিলড চিকেন উইথ ব্ল্যাক বিন ম্যাঙ্গো সালসা।
স্থান কাল বিশেষে যে সব রেসিপিতে অদলবদল হয়েছে, তারা কি তবে ব্রাত্য? না না। তারাও তো গ্রিল করা রান্নার সম্পদ, মণিমাণিক্য। যেমন ধরুন আমার একেবারে নিজস্ব জিঞ্জার চিকেন সতে উইথ পিনাট বাটার সস। যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গিয়েছিলাম, তখন ইন্দোনেশিয়ান শেফ যে রান্নাটা শিখিয়েছিলেন, সেটা আর আমার জিঞ্জার চিকেন সতে’টা পুরোপুরি এক নয়। ওরা সস-এ এক রকম ছোট লাল লঙ্কা ব্যবহার করে। ভারতে ফিরে, ঠিক তেমন লঙ্কা পেলামই না। তার বদলে সবুজ লঙ্কা দিয়ে রাঁধলাম। তাতেও আসল রান্না’র থেকে খারাপ কিছু মনে হল না। বরং, ইন্দোনেশিয়ান শেফ যে পিনাট বাটার দিয়ে রেঁধেছিলেন, সেটার দরকারই পড়ল না। মোদ্দা কথা হল, তেমন প্রয়োজন হলে রেসিপি বদলাতেই পারে। আমরা পরিস্থিতি অনুযায়ী একটু আধটু রদবদল করতেই পারি। তাতে মূল খাবারটা মোটেও হারিয়ে যায় না। বৈশিষ্ট্যগুলো প্রায় একই থাকে, শুধু রাঁধুনি তাঁর মতো করে এতে আলাদা স্বাদ মিশিয়ে নেন।
আমি যে পেশায় আছি, তাতে নিজের জন্য সময় বের করা এক কথায় অসম্ভব। তা বলে কি বাড়িতে রান্না করা বন্ধ করে দেব? মোটেই না। আমার এমন কতকগুলি রেসিপি দরকার, যেগুলি চটজলদি রান্না করা যাবে, খেতে ভাল হবে, আবার বেশি বাসন-কোসনও ময়লা করবে না। যে দিন খুব ব্যস্ত থাকি, খিদের সময়ও তাড়াহুড়ো করতে হয়। তখন চিকেন ব্রেস্ট, নতুন আলুর গ্রিল আর রোস্ট, গ্রিলড অ্যাসপারাগাস-এর মতো রান্না খুব কাজে দেয়। এ রকম সহজ কয়েকটা রান্না এ বার আপনাদের শেখাব। এর কয়েকটা সুবিধাও আছে। নতুনরা এ সব দিয়েই গ্রিল করা শুরু করতে পারেন। তা ছাড়া, এতে রান্নার হাতটাও খুলবে। যে দিন আপনি শিকাগো স্টাইল হট ডগস বানাবেন, সে দিনই কিন্তু আরও একটু শক্ত খাবার (যেমন জার্ক চিকেন উইথ পাইন্যাপল সালসা) রাঁধতেও তৈরি হয়ে গেছেন। নিজেরই অজান্তে।
গ্রিল করার সময় না হয় বার হল। কিন্তু ওই সময়টুকু উপাদান খুঁজতে বাজারকে বাজারে ঘুরে বেড়াতে কার ভাল লাগে? আমার তো একেবারেই লাগে না, চেনা-পরিচিতরাও তাই বলেন। তাই এমন রেসিপির কথাই বলব, যার উপকরণ সব ভাল সুপারমার্কেটেই মজুত থাকে। প্রস্তুতিটাও সহজ করে সাজিয়েছি। তাতে অপ্রয়োজনীয় জোগাড়যন্ত্রের ঝামেলাও মিটেছে। নিজে নিজে চিকেন স্টক বার করা, বোনলেস চিকেনের জন্য বসে বসে হাড় ছাড়ানো এ সবের তো দরকার নেই। সবই বাজারে পাওয়া যায়। আসলে এই রান্নাগুলোর সবই খুব সময়োপযোগী, বাস্তব।
সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে একটা সার কথা শিখেছি। ‘গ্রিলিং’ কিন্তু আগুনে ঝলসে রান্না করা খাবারের থেকেও অনেক বেশি কিছু। এর সঙ্গে আমাদের নিজেদের, আর আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরও একটা সম্পর্ক আছে। যেমন, আমরা চাহিদা, পছন্দ অনুযায়ী রেসিপিটাকে উনিশ-বিশ করে নিচ্ছি। একদম অন্য রকম ভাবে কয়লা সাজাচ্ছি, যাতে খাবারে অন্য এক স্বাদ ঢোকে। আবার ইচ্ছে হলেই ম্যারিনেশনের সময় আরও একটু হট সস মেশাচ্ছি। বাইরের দেশের সব শেফই রান্নায় নিজস্ব ছোঁয়া রেখে দেন। সেই ‘স্পেশ্যাল টাচ’টা পরিবার, বন্ধুদের শিখিয়ে ভারী আনন্দ পান তাঁরা। আর সেখানেই তো গ্রিল রান্নার মজা। দেশ বদলালে খাবারের স্বাদ, বর্ণ, গন্ধ তো পালটাবেই। তবে একটা কথা সব জায়গায় সত্যি। এই আরাম করে, সবার সঙ্গে মিলে-মিশে রান্না করার একটা অদ্ভুত মজা আছে। সেটাই কিন্তু গ্রিল রান্নার প্রকৃত আস্বাদ ও আহ্লাদ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.