|
|
|
|
|
Shoe কর মেরে মন কো |
শুধুই পা দু’টোর দেহরক্ষী নয়। তার নানান রঙ্গ, বিচিত্র রূপ, কথা ও কাহিনি!
সৌন্দর্য দুনিয়ার মনচোরা ‘অ্যাকসেসরি’। শ্রীচরণে রইল প্রণাম। চিরশ্রী মজুমদার |
প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগের কথা। তখন তুষারযুগ চলছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা গায়ে শিকার করা হরিণ, ভালুক ইত্যাদির চামড়া জড়িয়ে ঘুরছেন। কিন্তু পায়ে বরফের ছ্যাঁকা যে আর সহ্য হয় না। শেষমেষ ওই চামড়াগুলোকে সেই আমলের হাড় ও চর্বি দিয়ে তৈরি সূচসুতো দিয়ে সেলাই করে পাগুলোও মুড়ে ফেললেন। পুরাণ, সাহিত্য, বাদবাকি যা বলছে, তারও মূল সুরটা এক। জমদগ্নি মুনির অগ্নিতেজ থেকে রেহাই পেতে সূর্যদেবতা ছত্র ও পাদুকা উপহার আনলেন। হবুচন্দ্র রাজার পা দু’টিকে ধুলোময়লা থেকে বাঁচাতে বৃদ্ধ চর্মকার তাঁর পায়ের পাতা দু’টো চামড়ার আবরণে মুড়ে দিলেন। সবই জানা ইতিহাস, চেনা ফর্মুলা। এই নরম তুলতুলে পা দু’টোকে কর্কশ পৃথিবী আর তার কালিঝুলি, রোদ, ঠান্ডা ইত্যাদি থেকে বাঁচাতে জুতার আবির্ভাব। তবে আর একটা বিষয় লক্ষ করার মতো। আমাদের সকলেরই প্রথম জুতোজোড়ার কারণ এখনও ওইটাই। ঠিক তার পরের জোড়াটা থেকেই প্রয়োজনের জায়গায় জাঁকিয়ে বসে শখ।
তার বশেই আমরা এক গণ্ডা চটিজুতো কিনে বসি। চকমকে দোকানে উঁকি দিয়ে বিচিত্রবর্ণ, বহুরূপী সব চটিজুতো দেখে কাতর হই। কিন্তু ওগুলো ঠিক কী কী, এ সব জেনে ফেললেও মন্দ লাগবে না।
যেমন ধরুন, মেয়েদের ভারী প্রিয় পাম্প বা ব্যালেরিনা জুতো। আসল নাম কোর্ট শু, কারণ ওটা পাশ্চাত্যের রাজবংশীয়রা সাংস্কৃতিক জমায়েত, ব্যালে নাচ প্রভৃতিতে পরে যেতেন। দেখে লোভ সামলানো শক্ত, তবে হিলটি বাছুন স্বাচ্ছন্দ্য বুঝে। হাই হিল না সইলে ওয়েজ হিল, গ্লাস বা এক ইঞ্চির ছোট্ট কিট্ন বা হিলবিহীন ফ্ল্যাট ব্যালেরিনা। |
|
স্লিংব্যাক ব্যালেরিনায়, জুতোর সঙ্গেই গোড়ালির কাছে একটি স্ট্র্যাপ জোড়া হয়, হিল বেশি হলেও ব্যালান্স হারিয়ে ঠোক্কর খাওয়ার ভয় কম। আর জুতোর ওপরে যদি আলাদা একটি অ্যাঙ্কল স্ট্র্যাপ লাগানো থাকে, তবে ওটাই হবে অ্যালিস পাম্প, লুইস ক্যারলের বইতে ছবি দেখেছেন নিশ্চয়ই। স্যাটিনের নকশা কাটা, ফুল পাথর বসানো বাহারে পাম্পগুলি হল বলরুম শু। সেগুলোর কাছাকাছি, বো দেওয়া এক রকম জুতো ভিক্টোরিয়ান আমলে পশ্চিম ইউরোপের জেন্টলম্যানরাও পরতেন। নাম ছিল অপেরা বুটস। ফিতে বাঁধার ঝঞ্ঝাট ছিল না। সিল্কের স্টকিংস দিয়ে পরা হত, সান্ধ্যকালীন নৃত্যগীত আসরে ভারী উপযুক্ত। মেয়েদের পাম্পগুলির সামনেটা এখন অল্প সূচালো হয়, কখনও ওই সামনের অংশটা একটু কাটা, উঁকি দিয়ে যাবে নেলপালিশ রঞ্জিত অঙ্গুলি। এর নাম পিপ্ড টো।
অনেকটা পাম্প-এর মতোই দেখতে মিউল জুতো। সামনেটা ঢাকা, তবে পিছনের দিকটা খোলা। রোমান সাম্রাজ্যের জজ, ম্যাজিস্ট্রেটরা পরতেন। কী করে মহিলাদেরও খুব পছন্দ হয়ে গেল। পঞ্চাশের দশকে মেরিলিন মনরো পালকের ব্যাকলেস মিউলকে খুব বিখ্যাত করে তোলেন। সিনেমায় তাঁকে দেখেই এ জুতো কিছুটা গেরস্থালি হয়ে যায়, তবে আটপৌরে কখনওই বলা যায় না। সুদৃশ্য রাতপোশাকের সঙ্গে একে চমৎকার মানায়।
আর একটি হলিউডখ্যাত ধ্রুপদী জুতো হল রুপোলি রঙের স্টিলেটো। একেবারে হিলহিলে হিলের ওপর দাঁড়ানো স্যান্ডেল, সরু স্ট্র্যাপ লতাপাতার মতো পা জড়িয়ে উঠে এসেছে। ছোট ঝুলের গ্ল্যামারপোশাকের জন্মজন্মান্তরের সঙ্গী।
ছোট ঝুলের পোশাক একটু খাকি ধরনের হলে, বা টিউনিক, ডেনিম স্কার্ট, ট্রাউজার্সের সঙ্গে হাঁটু পর্যন্ত সোয়েড বা চামড়ার কাউবয় বুটও দিব্যি দেখায়। যে টাইট লেদার বুটগুলো গোড়ালির একটু ওপর পর্যন্ত আসে, আর পাশে একটা চেন থাকে, সেগুলো প্রথম দেখা গিয়েছিল ষাটের দশকে। দ্য বিটলস-এর স্টেজ পারফরমেন্সের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি হয়েছিল ওগুলো। গানগুলোর মতো ওদের ফ্যাশন স্টেটমেন্টেও সময়ের মরচে পড়েনি। বিটলস বুট এখনও ছেলেমেয়ে সবার মধ্যে সমান জনপ্রিয়। কাছাকাছি যেতে পারে এক মাত্র উইঙ্কলপিকার। এটিও রক অ্যান্ড রোল অনুপ্রাণিত ফ্যাশন। ক্রোকোডাইল বা পয়েন্টেড, অর্থাৎ সূচালো মুখের ঈষৎ কোঁচকানো ইউনিসেক্স বুট। বাকল্ অংশটা এক ধারে, পরে ক্লিপটা আটকে নিতে হয়।
এই ধরনের ড্রেস শু অর্থাৎ শৌখিন জুতোদের দলে এ দেশীয় স্যান্ডেলরাও সসম্মানে থাকবে। ঝিনুক, পাথর, মোতি বসানো জুতি, হিমাচলি মোজরি, রাজস্থানি মখমলি চপ্পল, নাগরাই, কোলাপুরি বা যোধপুরি প্রত্যেকেই বর্ণময় চরিত্র, প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য যে কোনও পোশাকের সঙ্গে পরা যায়। পায়ের কাছে আঙ্গোটটি আছে কি না দেখেই কিনুন, এতে পায়ের গঠন ভাল থাকে, হাঁটতেও সুবিধা হয়। তবে আপামর স্যান্ডেল বস্তুটিকে নিখাদ ভারতীয় ভাবলে মস্ত ভুল হয়ে যাবে। মিশরের ফারাওরা যে খড়ম বা দড়ি বাঁধা জুতো পরতেন, রোমান যোদ্ধারা যে বিশেষ ধরনের গ্ল্যাডিয়েটর চপ্পল পরতেন, তখন সাধারণ মানুষজনের তা পরার অধিকার ছিল না। আর আজ সে সবই বিচ স্লিপারস, ফ্লোটারস (জলেও যাদের ক্ষয় নেই), কিটোজ ইত্যাদি কেজো, ‘স্ট্রিট ফুটওয়্যার’-এর পাশেই সাজানো থাকে। সবই তো আদতে স্ট্র্যাপবহুল স্যান্ডেলগোষ্ঠীর। ওতে পায়ের অনেকটাই উন্মুক্ত থাকে, তাই সুগঠিত, সুচর্চিত, সুশ্রী পদপল্লব ছাড়া মানায় না।
রানিং শু, স্নিকার্স, কনভার্স, টেনিস শু আর স্পাইক দেওয়া স্পোর্টস শু জুতো পরিবারের উভলিঙ্গ। ড্রেস শু’দের হারিয়ে ওরাই এখন চ্যাম্পিয়ন। ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে দুনিয়াসুদ্ধু সক্কলে সব থেকে বেশি ওদেরই পছন্দ করেন। দৈনন্দিন জীবনে খুব আরামদায়ক, অথচ ডক্টর’স শু’র মতো স্টাইলবর্জিত গুরুগম্ভীরও দেখতে নয়। তবে শুধুই ছেলেদের জন্য জুতোও কম নেই। গাম বুটের মতো দেখতে রাবারের ওয়েলিংটন বুট (মিলিটারিতে যা দেখা যায়) জঙ্গল সাফারিতে বা ঠান্ডার দেশে বেশ কার্যকর। ডবল বা ট্রিপল সোলওয়ালা মাউন্টেনিয়ারিং বুট তো সমতলেও ভালই চলে। প্রতি দিনের তালিকায় আছে সরু ফিতে বাঁধা ট্যানড্ চামড়ার অক্সফোর্ড বুট, ফিতেবিহীন বাকল্ ও স্ট্র্যাপওয়ালা মঙ্ক শু। ফিতে, স্ট্র্যাপ, বাকল্, কিছুই না থাকলে সেটাই চেলসি বুট। লোফার বুট বা ভেনেশিয়ান শু’ও অনেকেই পছন্দ করেন। কারণ, এর সামনের ঢাকা অংশটি একটু ছোট, পায়ের দমবন্ধ হয়ে আসে না। এবং, এটা পরেই পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন মুনওয়াক করতেন।
যাদের কথা বলেছি, তাদের কাছেপিঠেই পাবেন। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বিপণিতে একটু খোঁজ নেবেন। যারা বাদ পড়ল, তারা এখনও এ দেশে পৌঁছয়ইনি। তাই খামখা আর দুঃখু দিলুম না। |
|
|
|
|
|