|
|
|
|
ইউরেকা... মিরাকিউরল... পরশপাথর |
রোজ ব্যবহার করলে ‘এমনি’ মনে হয়, অথচ এক এক জনের মধ্যে
মৃতসঞ্জীবনীর বিস্ময়। এরা না থাকলে কী করে যে জীবনটা কাটত! রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ। |
ঘোর কালিযুগ |
|
ঝর্না কলম |
দোয়াতকলম থেকে ফাউন্টেন পেন। ‘টু-ইন-ওয়ান’-এর এই মসীগর্ভ বিপ্লবের শুরু কবে? সে অনেক কালের কথা। দশম শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকার ইসলামি অঞ্চলের খলিফা মা’দ আল মু’ল্স একটি কলম চেয়েছিলেন, যা তাঁর হাতে এবং জামাকাপড়ে কালি লাগতে দেবে না। খলিফার আজ্ঞা, অতএব তৈরি হল বিশেষ কলম, যার পেটের মধ্যে থাকে কালি, উল্টে ধরলেও পড়ে না। তবে এ হল খলিফাভোগ লেখনীর বৃত্তান্ত। ঝর্না কলম পাবলিকের হাতে এল ঊনবিংশ শতাব্দীতে, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে। ছুটলে কালি থামায় কে? থামায় বল পয়েন্ট পেন। ১৯৩৮-এ পেটেন্ট নিয়েছিলেন হাঙ্গেরির লাজলো বিরো। ষাটের দশকে পশ্চিম দুনিয়া জয় করল ডট পেন, আর দু’দশকের মধ্যে বাকি পৃথিবীও জানালষ ‘কালি, তোমার দিন গিয়াছে।’ তার পর এক দিন কি-বোর্ড আসিয়া... |
না ফুটলেই বসন্ত |
|
সেফ্টিপিন |
অতি ক্ষুদ্র তো কী, আমেরিকার ওয়াল্টার হান্ট সাহেব এ বস্তুটি বানিয়ে তার পেটেন্ট নিয়েছিলেন ১৮৪৯ সালে। পরে ডব্লিউ আর গ্রেস কম্পানিকে সেটি বেচে দেন ৪০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে। তখন কি আর জানতেন তাঁর তৈরি করা বস্তুটি বানিয়ে গ্রেস কম্পানি একেবারে লালে লাল হয়ে যাবে! অসহায় মুহূর্তে সেফ্টিপিনের চেয়ে বড় বন্ধু আর কেউ নেই, এ কথা যে জানে না, তার জীবনে অসহায় কোনও মুহূর্তই আসেনি। কানের ইয়ে পরিষ্কার করার কথাটা না হয় বাদই দিলাম। |
আমি vs আমি |
|
আয়না |
এর চেয়ে বড় আবিষ্কার আর কিছুই নেই। মানুষ যবে মানুষ হয়েছে তখন থেকেই নিজেকে দেখার আকিঙ্ক্ষে প্রবল। জল, চকচকে পাথর এ সব আদিকালের প্রিমিটিভ জিনিসে ভর করে আয়না পারদ পেয়েছে বহু পরে। তা নয় নয় করে খ্রিস্টের জন্মের ছয় হাজার বছর আগে। মাত্তর। তবে নিজের প্রতিফলন দেখানো ছাড়াও অন্যান্য কাজে আয়না পারদর্শী অন্যের চোখে আলো ফেলার জন্য রিফ্লেক্টর, সদ্য ফিজিক্স পড়ুয়াদের সিগারেট ধরানোর অস্ত্র এবং সর্বোপরি মানুষের বিবেক হিসেবে নিজেকে বারংবার প্রমাণ করেছে। |
কান ঘেঁষে |
|
চশমার ডাঁটি |
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মার্কো পোলো নাকি চিনে চশমা-পরা মানুষ দেখেছিলেন? গল্পটা চালু আছে বটে, তবে প্রমাণ নেই। মার্কো পোলোর নিজের বৃত্তান্তেও এমন কোনও উল্লেখ নেই। তা হলে প্রথম চশমা? ইতালি, আনুমানিক ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দ। অনেক কাল অবশ্য চশমা বলতে কেবল ওই কাচটুকুই, তার পর ক্রমে ফ্রেমের আবির্ভাব। আর চশমার ডাঁটি? যাকে রাখবেন বলে এমন জমকালো কান দুটি ফুলের পাপড়ির মতো ফুটে আছে? যত দূর জানা যায়, বিনি সুতোয় চশমাটি ধরে রাখার এই চমৎকার বুদ্ধি বাতলেছিলেন এডওয়ার্ড স্কারলেট নামে এক ব্রিটিশ চোখ-বিশেষজ্ঞ। |
ই-অক্ষয়পাত্র |
|
গুগল |
দর্শন চিত্তে, হে আমার শ্রীকৃষ্ণ আর ক্ষুধার্ত চিত্তে, ও আমার পিৎজা’র দোকান সব আমি তোমাতে খুঁজি। সত্যই, তুমি এক এবং একমাত্র সত্য। প্রেমের চেয়েও জরুরি। অক্সিজেনের সমনাম। গুগল। আবিষ্কর্তা ল্যারি পেজ ও সার্জেই ব্রিন-এর প্রতি শ্রদ্ধায় নতজানু। ভাবতেও অবাক লাগে, গুগ্ল থাকলে ‘কোথা কোথা খুঁজেছি তোমায়’ গানটি লেখা হত না।
পরিশেষে ভূত আমার পুত
পেত্নি আমার ঝি
গুগল আমার সঙ্গে আছে
ভয়টা আমার কী! |
চেন রিঅ্যাকশন |
|
জিপার |
১৮৫১ সাল নাগাদ সেলাই মেশিন-এর আবিষ্কর্তা, এলিয়াস হো বানিয়ে ফেললেন একটি ছোট্ট যন্ত্র, যা দু’ফালি কাপড় এক করে দিতে পারে। কিন্তু আমরা আর কই ছোটদের পাত্তা দিই? অতএব সেই আবিষ্কার পেল শুধুই বঞ্চনা। অবস্থা শুধরোল জিডিয়ন সান্ডব্যাক-এর হাতে। স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুর শক কাটাতে তিনি মন দেন কাজে, এবং তৈরি করেন আধুনিক ‘জিপার’। প্রথম জিপার ব্যবহার হয় জুতোয় (চেন-বুট মনে আছে?) আর তামাকের পাউচ-এ। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি তখনও জিপার সম্পর্কে টোটাল উদাসীন। মা’দের খুব মজা, কারণ বাচ্চারাই তো চেন টেনে নিজ নিজ জামা পরে ফেলত। শেষমেষ জিপার যখন ফ্যাশন-এ (মূলত পুরুষদের প্যান্ট-এ) এল, তখনও প্রবল মাথাব্যথা। কে মোক্ষম সময়ে চেন টানতে ভুলে গেল, কার ব্রহ্মমুহূর্তে চেন কেটে গেল! কিন্তু মানতেই হবে, যে পৃথিবীতে দিনকে দিন সব কিছু কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, সেই সময়, জিপার-এর মতো এক জন, যে মিলিয়ে দিচ্ছে, সত্যিই মেলা ভার। |
অক্ষরে অক্ষরে মিল |
|
ফটোকপিয়ার |
ফটোকপিয়ার (মানে জেরক্স আর কী) না থাকলে ভারতে গ্র্যাজুয়েট-এর সংখ্যা অন্তত ৪৭% কম হত। পরিসংখ্যান নয়, অভিজ্ঞতা বলছে। ডিস্- বা নন-কলেজিয়ট, প্রক্সি, এ সবও প্রায় উঠে যেত। অতএব বুঝতেই পারছেন, এ কী সাংঘাতিক আবিষ্কার। কিন্তু এরই আবিষ্কারক চেস্টার কার্লসনকে দোরে দোরে ঘুরিয়ে ছেড়েছিল আই বি এম বা জেনারল ইলেকট্রিক-এর মতো সংস্থা। বলেছিল, এর কোনও বাজার নেই। কিন্তু চেস্টার বুঝেছিলেন, তাঁর মতো আরথ্রাইটিস-এ আক্রান্ত মানুষদের দিস্তে দিস্তে লেখার অব্যর্থ নিরাময় এই ফটোকপিয়ার (শুধু নাকি আরথ্রাইটিস-এ আক্রান্ত? হা হা!)। এই হুবহু টুকে নেওয়া পদ্ধতির নাম রাখা হল জেরোগ্রাফি, গ্রিক-এ যার মানে ড্রাই রাইটিং। আর সেখান থেকেই জেরক্স। যা আসলে একটি সংস্থার নাম। |
|
|
|
|
|