অব্যবস্থা হাসপাতালে
সার্জন নেই, তাই সাধারণ চিকিৎসকে দিয়েই অস্ত্রোপচার বিভাগে কাজ করানো হয়। চিকিৎসকের অভাবে সপ্তাহে মাত্র তিন দিন খোলা থাকে সার্জিকাল বর্হিবিভাগ। একই কারণে মেডিসিন বিভাগের বর্হিবিভাগও সপ্তাহে চার দিন খোলা থাকে। প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে এমনই পরিস্থিতি চলছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে। শুধু তাই নয়, মহিলা বিভাগের এক চিকিৎসক ছুটিতে থাকায়, ১১ দিন ধরে অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় সদর হাসপাতালে দিন গুনছেন দুই মহিলা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁদের নাম অর্চনা দাস, এবং মৌসুমী রায়। দু’জনেরই জরায়ুতে অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ছুটিতে থাকায় প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে তাঁদের অস্ত্রোপচার বন্ধ হয়ে রয়েছে। গত বুধবার তাঁরা হাসপাতাল সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। একজন চিকিৎসক ছুটিতে থাকলে তার পরিবর্তে অন্য চিকিৎসককে দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেন অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করবেন না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন রোগিণীর আত্মীয়রা। একই অবস্থা অন্যান্য ওয়ার্ডেও। ক্যান্সারে আক্রান্ত জলপাইগুড়ির সুকান্তনগর কলোনির বাসিন্দা পূর্ণচন্দ্র দাস গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পেটে যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসক আলট্রাসোনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন। পূর্ণচন্দ্রবাবু হাসপাতালে আলট্রাসোনোগ্রাফি করতে গেলে সেই বিভাগ থেকে তাঁকে তিন মাস বাদে আগামী ১৪ মে আসতে বলা হয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হস্তক্ষেপে অবশ্য আলট্রাসোনোগ্রাফি করার দিন এগিয়ে আনা হয়। সাড়ে ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের জলপাইগুড়ি জেলার বীরপাড়া ও মালবাজারে হাসপাতাল থাকলেও উন্নত চিকিৎসার পরিকাঠামোই নেই। জেলার বেশির ভাগ হাসপাতালে রোগীর পরিস্থিতি বুঝে সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে মাসের পর মাস চিকিৎসকের অভাবে পরিষেবা ব্যাহত হলেও সদর্থক ব্যবস্থা না নেওয়ায় সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত মাসে বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি জেলা হাসপাতাল পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। জেলা হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসকের সমস্যা বারবার জানানো হয়েছে। চিকিৎসক না পেলে বর্হিবিভাগ কীভাবে চালাব?” সদর হাসপাতালের সার্জিকাল বিভাগে গড়পড়তা প্রতিদিন দুশো রোগী ভর্তি থাকেন। চার জন বিশেষজ্ঞ সার্জন থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২ জন। তার ফলে দু’জনের পক্ষে প্রতিদিন রাতের ডিউটি, সকাল-সন্ধ্যে ডিউটি করা সম্ভব হচ্ছে না। নিয়মিত বর্হিবিভাগেও রোগী দেখা সম্ভব হচ্ছে না। সে কারণে সপ্তাহে ছয় দিনের বদলে জেলা সদর হাসপাতালের বর্হিবিভাগ খোলা থাকছে মাত্র তিন দিন। সর্বোপরি একজন সাধারণ চিকিৎসককে সার্জিকাল বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগেরও একই দশা। ৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ২ জন। মেডিসিন বিভাগেও রোগীর সংখ্যা গড়ে দুশোর বেশি। রোগীর চাপ সামলাতে সাধারণ চিকিৎসকদের দিয়ে বিশেষজ্ঞের কাজ করানো হচ্ছে। হাসপাতালের সুপার বলেন, “পরিষেবা যাতে ব্যহত না হয় তার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তবে বর্হিবিভাগ সপ্তাহে কয়েকদিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে ঠিকই। অর্ন্তবিভাগের পরিষেবা রয়েছে।” সমাজকর্মী সুব্রত সরকার বলেন, “সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার মান বাড়বে বলে রাজ্য সরকার আশ্বাস দিয়েছেন। তার অপেক্ষায় রয়েছি।” জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী বলেন, “গ্রামগঞ্জ থেকে সাধারণ গরীব রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে সদর হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন। অথচ কর্তৃপক্ষের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে আলট্রাসোনোগ্রাফি করানোর জন্য তিন মাস পরে আলসতে বলা হচ্ছে। আমরা হস্তক্ষেপ না-করলে হয়তো ওই ব্যক্তি পরিষেবাই পেতেন না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.