বিড়াল-রাজ হাসপাতালে, আতঙ্কে নার্সেরাও
রকারি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা নিয়ে বহু চাপানউতোরের পরেও অবস্থার যে পরিবর্তন হয়নি তেমন আবারও তার প্রমাণ মিলল কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে। হাসপাতালের দায়িত্বে আসার পরেই সুপার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জোর দিয়েছিলেন হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতার দিকে। তাতে হাসপাতালের চেহারা কিছুটা ফিরলেও আটকানো যাচ্ছে না হাসপাতাল চত্বরে বিড়ালের যাতায়াত। কিছুদিন আগেই নারী ও শিশু কল্যাণ ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রও একই ছবি দেখেছিলেন মালদহের কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে। চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিড়ালের দল। রোগীর পাশে বিছানায়, কিংবা খাটের তলায় সর্বত্রই অবাধ যাতায়াত এই মার্জার বাহিনীর। তাদের দাপটে দিশাহারা রোগী থেকে চিকিৎসক-নার্সরা।
আগেও পশ্চিমবাংলার বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর উপরে বিড়ালের আক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে। শিশুর পায়ের মাংস খুবলে নেওয়া থেকে শুরু করে প্রসূতির উপরে ঝাঁপিয়ে পড়া, এমন কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা নেই যা ঘটেনি। এই মহকুমা হাসপাতালে এখনও কোনও সেরকম ঘটনা না ঘটলেও, ঘটবে না এমন জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। আপাত শান্ত এই মার্জারকুল যে কখন হিংস্র হয়ে উঠবে তা কি আর আগে থেকে বোঝা যায়!
—নিজস্ব চিত্র।
পুরুষ ওয়ার্ডে চারটি বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে ইতিউতি। খাবার সময়ে জড়ো হচ্ছে এক জায়গায়। ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন করুই গ্রামের নিতাই মণ্ডল, দাঁইহাট ইসলামপুরের আলাউদ্দিন শেখ। তাঁরা বলছেন, “বেশ কয়েকটি বিড়াল খাটের নীচে ঘুরে বেড়ায়। খাবারের গন্ধ পেলেই এক জায়গায় চলে আসে।” একই ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন পূর্বস্থলীর বেলেরহাট গ্রামের আজিজুল হক মণ্ডল বলেন, “বিছানায় উঠে পড়ে দু’টি বিড়াল এক খাট থেকে অন্য খাটে লাফালাফি করে।”
শিশু বিভাগে ভর্তি আছে যাদের সন্তান সেই সব মায়েরা রীতিমতো আতঙ্কিত বিড়ালের ভয়ে। তাঁরা বলছেন, “বিড়ালের জন্য রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারি না। মুর্শিদাবাদের সালার থানা থেকে কোলের শিশুকে নিয়ে মহকুমা হাসপাতালে এসেছেন অনিতা মাঝি, ফিরদৌস বেগমরা। তাঁরা বলেন, “যেভাবে বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে তাতে ভয় লাগে। তাড়ালেও যেতে চায় না।’’ মঙ্গলকোটের পিণ্ডিরা গ্রামের শ্যামলী দলুই বলেন, “খাটের নীচে বিড়াল থাকে। ভয়ে ঘুম আসে না।” শিশু বিভাগের পাশেই রয়েছে, মহিলা ওয়ার্ড। সেখানে ভর্তি রয়েছেন মুর্শিদাবাদের বাজারশৌয়ের জারিনা বিবি। তিনি বলেন, “রাতের বেলা পায়ের কাছে শুয়ে থাকে। দিন দু’য়েক আগে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি আমার কম্বলের ভিতর ওরা ঢুকে পড়েছে।” প্রসূতি বিভাগেও দু’টি বিড়াল ছানা গুটিসুটি মেরে জায়গা করে নিয়েছে রোগীর খাটের উপরেই।
শুধু রোগীরা নয়, আতঙ্কিত নার্সরাও। “এই তো কয়েক দিন আগের কথা। শিশু ওয়াডের্র নতুন ঘরে বিছানার উপর বিড়ালের দল বসেছিল। তাদের তাড়াতে গেলে এমন ভাবে আমার উপরে লাফিয়ে পড়ে যে ভয় চিৎকার করি। এর পর থেকে আর ওদের দিকেই যাই না।” শিশু বিভাগের এক নার্স বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। শুধু আক্রমণ নয়, রয়েছে সংক্রমণের ভয়ও। ‘আইসোলেশন’ ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা এক জন নার্স বলেন, “এখানে জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন রোগীরা। ওই সব রোগীদের খাবারে যদি বিড়ালের লোম পড়ে তা’হলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়।” আর যখন তখন রোগীদের পাত থেকে মাছ বা সঙ্গে থাকা ফল ‘চুরি’র ঘটনা হয় আকছারই। হাসপাতালের চিকিৎসক জয়ন্ত সিংহ এবং সৌমেন শাসমল বলেন, “এই রকম ঘটনার কথা প্রায়ই আমাদের কানে আসে। ঘুরতেও দেখি বিড়ালের দলকে। কিন্তু বিড়াল তাড়ানোর উপায় জানি না।”
শুধু বিড়াল নয়, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রয়েছে মশা আর ইঁদুরের উৎপাত। সে কথা তুলে সোমনাথবাবু বলেন, “মশার জন্য ‘স্প্রে’ রয়েছে। ইঁদুরের জন্য বিড়াল রয়েছে। কিন্তু বিড়ালের জন্য কী আছে? জানা নেই কারওর।” বিড়াল ধরার ‘এজেন্সি’ রয়েছে কি না, আপাতত তারই খোঁজ নিচ্ছেন তিনি। যদিও ইতিমধ্যে কলকাতার বেশ কিছু মেডিক্যাল কলেজ বিড়াল ধরার ‘এজেন্সি’ নিয়োগ করেছে। তাতে লাভ হয়নি কোনও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.