এ বার শিবরাত্রি উৎসব উপলক্ষে নতুন সাজে সেজে উঠছে নবম শতকের প্রাচীন ময়নাগুড়ির ভদ্রেশ্বর শৈব মন্দির। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সমৃদ্ধ ওই মন্দিরকে ঘিরে রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের মেলা। নেহাতই ভিড়ে ঠাসা বাঁশি, ভেঁপু অথবা রকমারি পণ্য সামগ্রীর পসরা নয়। সেখানে বসবে পদাবলি ও বাউল গানের আসর। মন্দির কমিটির সম্পাদক হরিপদ রায় বলেন, “মনোরম গ্রামীণ পরিবেশে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পূণ্যার্থীরা এখানে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ পাবেন। দেখতে পারবেন প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান।” উৎসব কমিটির উদ্যোগ দেখে খুশি ওয়েষ্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশনের উত্তরবঙ্গ নোডাল সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আনন্দগোপাল ঘোষ। তিনি বলেন, “ভদ্রেশ্বর নবম থেকে দশম শতাব্দীর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। তাকে ঘিরে পর্যটন শিল্প বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। শিবরাত্রি উপলক্ষে উৎসবে যোগ দিয়ে সাধারণ মানুষ ওই এলাকার গুরুত্ব অনুভব করতে পারবেন।” সম্প্রতি হেরিটেজ কমিশনের তরফে ভদ্রেশ্বরকে হেরিটেজ ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে। এর পর থেকে এলাকার বাসিন্দারা প্রাচীন মন্দিরকে ঘিরে এলাকায় পর্যটন শিল্প বিকাশের স্বপ্নে বুক বেঁধেছেন। |
নিউ দোমহনি রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে স্পষ্ট নজরে পড়ে ভদ্রেশ্বর মন্দির। একদিকে রেললাইন, নয়ানজুলি। অন্যদিকে চাষের মাঠ। মহুয়া গাছে ঘেরা সবুজের পেট ফুঁড়ে মাথা তুলেছে মন্দিরের চূড়া। শিবরাত্রি উপলক্ষে নতুন রংয়ের পোচ পড়েছে সেখানে। গ্রামের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে ঝোপজঙ্গল সাফ করে ঝকঝকে করেছেন মন্দির চত্বর ও তাল পুকুর। তৈরি হচ্ছে অস্থায়ী মঞ্চ। রবিবার সকাল থেকে সেখানে শুরু হবে শিবরাত্রি উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসব আয়োজক কমিটির কর্তারা জানান, প্রাচীন মন্দির দেখার জন্য বছরভর লোকজন ভিড় করেন। শিবরাত্রি উৎসবে গ্রামের বাসিন্দারা রাত জেগে পুজো দেন। তবে পর্যটক টানতে উৎসবের আয়োজন এ বার-ই প্রথম। ময়নাগুড়ির দেবীনগর পাড়ার পেট চিরে যাওয়া পাকা রাস্তা ধরে মৌয়ামারি গ্রাম হয়ে সহজে ভদ্রেশ্বরে পৌছনো সম্ভব। বাসস্ট্যাণ্ড থেকে দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। পাথরের চাই কেটে তৈরি প্রাচীন মন্দিরের সামান্য অংশ মাটির উপরে আছে। এখন যে চূড়া দেখা যায় সেটা অনেক দশক আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের তৈরি। রয়েছে হাল্কা ইঁটের তৈরি উল্টে দেওয়া পিরামিড আকৃতির গভীর কূপ। বিভিন্ন সময় মাটি খুড়ে যে সমস্ত নক্সা করা পাথর উদ্ধার হয়েছে সেগুলি ছড়িয়ে রয়েছে। ‘দেওমালি’ নামে পরিচিত মন্দিরে যাতায়াতের জন্য তৈরি কয়েকশো বছরের পুরনো উঁচু রাস্তার কিছুটা এখনও আছে। গবেষকদের অনেকে মনে করেন ওই মন্দির চত্বর খনন করা হলে এমন অনেক উপাদানের সন্ধান মিলতে পারে যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ইতিহাস নিয়ে নতুন ভাবনার সৃষ্টি করবে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তথা গবেষক দীপক বলেন, “প্রাচীন ভুটান ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ওই মন্দিরের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। খনন কাজ হলে অনেক নতুন ঐতিহাসিক তথ্যের সন্ধান মিলবে।” |