অযোধ্যা পাহাড়ের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। পর্যটকদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতেই আগামী রবি ও সোমবার অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় ‘অযোধ্যা উৎসব’ করতে চলেছে প্রশাসন। তবে শুরুতেই উৎসবের দিনক্ষণ ও কমিটি ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, রবিবারের পরিবর্তে উৎসব কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হোক। আদিবাসী সম্প্রদায়ের সুরুল উৎসব ও দোল পূর্ণিমার সময়ে ৮ মার্চ এই উৎসব করা হোক। .ইতিমধ্যেই জেলাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষর করে তাঁরা এই দাবি জানিয়েছেন। তবে প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে পূর্ব নির্ধারিত সময়েই উৎসব হবে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “আমরা সরকারি কর্মসূচির প্রচার ও পর্যটনের উন্নয়নের জন্য উৎসব করছি। ধর্মীয় উৎসব নয়। প্রয়োজনে পরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেলায় সরকারি সাহায্য করা হবে।”
একদা মাওবাদীদের ‘মুক্তাঞ্চল’ বলে পরিচিত অযোধ্যা পাহাড় এলাকা গত কয়েক মাস ধরে আপাত শান্ত রয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের পরে বলরামপুরে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া পাহাড়ে মাওবাদী স্কোয়াডের উপস্থিতিও কার্যত নেই বলেই পুলিশের দাবি। আর এই প্রেক্ষিতেই জেলা প্রশাসন চাইছে এখানে উৎসব করে অযোধ্যার পুরনো আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে ফিরিয়ে আনতে। পুরুলিয়ার জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “উৎসব করে আমরা বার্তা দিতে চাইছি অযোধ্যা পাহাড়ের অবস্থা স্থিতিশীল। অযোধ্যা পাহাড়কে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের প্রসারের জন্য আমরা সকলকে নিয়ে এগোতে চাই।”
তবে উৎসবের দিন ক্ষণ নিয়ে তৈরি হওয়া বির্তকে এলাকার বাসিন্দাদের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান নিয়ে কিছুটা হলেও সংশয় তৈরী হয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপে আদিবাসী উন্নয়ন সঙ্ঘের মাঠে এই উৎসব হতে চলেছে। ওই ক্লাবের সদস্যেরাই মূলত উৎসবের সময় নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে সামিল হয়েছিলেন, অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ফরওয়ার্ড ব্লকের ঝন্টু সিং মুড়া-সহ তিন সদস্য। বস্তুত, প্রশাসন চাইছে উৎসবের আঙ্গিনাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কাজ, প্রকল্প এবং সরকারের জনমুখী কর্মসূচি সম্পর্কে বাসিন্দাদের অবহিত করতে। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, “আদিবাসী সম্প্রদায়ের উৎসব সুরুল ও দোল পূর্ণিমার সময়ে এই উৎসব হলে প্রশাসনের উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূর্ণ হত।”.আদিবাসী উন্নয়ন সঙ্ঘের সম্পাদক অখিল সিং সর্দার বলেন, “এলাকার সার্বিক উন্নয়ন করার জন্য প্রশাসন এই উৎসবের আয়োজন করেছে। অথচ উৎসব কমিটিতে স্থানীয় বাসিন্দারাই নেই। শুধু প্রশাসনিক কর্তা ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। কী ভাবে উৎসব হবে সে বিষয়ে আমরা অন্ধকারে।”
স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতোর মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক আরও বেড়েছে। প্রসঙ্গত নেপালবাবু উৎসবের উদ্বোধনের প্রধান অতিথি। তিনি বলেন “প্রশাসন উৎসবের সময়, প্রস্তুতি নিয়ে আমার সাথে আগে যোগাযোগ করেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদেরও মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে উৎসবের উদ্দেশ্য পূরণের বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকছে।” অন্য দিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, “এই উৎসবে এলাকার বাসিন্দাদের অংশগ্রহন করা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। অযোধ্যা পাহাড়ের পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতে আমাদের উদ্দেশ্য পাহাড়ে উন্নয়ন ও পর্যটনের বিকাশ করা। সেই লক্ষ্যে ঠিক সময়েই উৎসব করা হচ্ছে।” জেলাশাসক বলেন, “২৪ জানুয়ারি বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে অযোধ্যা উৎসবের দিন স্থির করা হয়েছিল। সেখানে নেপালবাবুর প্রতিনিধি ছিলেন। তখন দিন ক্ষণ নিয়ে আপত্তি ওঠেনি।” |