কলেজ ছাত্রের অপমৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্ন
দু’টি ঘটনা। পরপর দু’দিন। আর সেটাই নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা কোতুলপুরকে।
বৃহস্পতিবার এক যুবকের দেহ মিলল একটি বাড়ির উঠোন থেকে। পরের দিনই এক কলেজ ছাত্রের দেহ উদ্ধার হল পুকুর থেকে। দু’টি ঘটনা নিয়েই পুলিশ কার্যত অন্ধকারে।
স্থানীয় সিহড় গ্রামে বিয়ে বাড়ির ছবি তুলতে যাবেন বলে মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কোতুলপুরের দাসপল্লির বাসিন্দা নবীন হালদার (১৮)। ওই রাতেই ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র পার্টিতে যাচ্ছি’ বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন লাগোয়া গাঁতি গ্রামের যুবক চৈতক মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার চৈতকের দেহ উদ্ধার হয় দাসপল্লিরই কাছাকাছি রামকৃষ্ণপল্লি কামারপাড়ার শ্রীমন্ত দাসের বাড়ির উঠোনে। আর শুক্রবার সকালে সিহড় গ্রামেরই একটি পুকুর থেকে মিলল নবীনের মৃতদেহ। এলাকাবাসীরা দেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেন।
চৈতক-হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে বৃহস্পতিবারই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল কোতুলপুর। পর দিনই আর এক যুবকের দেহ উদ্ধারকে ঘিরে এ দিন নতুন করে তেতে ওঠে এলাকা। বড় ধরনের কোনও অশান্তি না ছড়ালেও নবীনের বাড়ির লোকজন এবং প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, ছেলেটিকে অন্য কোথাও খুন করে পরে দেহ ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। পুলিশ অবশ্য এখনই এই ঘটনাকে খুন বলতে নারাজ। তারা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে।
অত্যন্ত দুঃস্থ পরিবারের ছেলে নবীন। বাবা মধুসূদন হালদার ছাগল-গরু কেনাবেচা করেন। সংসার চালাতে ইংরেজি অনার্স পড়ার পাশাপাশি ছোটখাটো নানা কাজ করতে হত নবীনকেও। কখনও কেটারিংয়ের কাজ করতেন। কখনও বা বিয়ে বাড়িতে ছবি তোলার কাজে আলোকচিত্রীকে সাহায্য করতেন। সিহড় গ্রামে সে রকমই একটি বিয়ে বাড়িতে ‘ছবি তুলতে যাচ্ছি’ বলে মঙ্গলবার রাতে দাসপল্লিরই এক আলোকচিত্রীর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন নবীন। বুধবার সকালেও বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যেরা উদ্বেগে পড়েন। বুধবারই কোতুলপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন মধুসূদনবাবু। কামারপুকুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র নবীনের দেহ পাওয়া গেল শুক্রবার সকালে সিহড় গ্রামের উত্তরপাড়া এল্লা পুকুরে।
চৈতকের মতোই নবীনের অপমৃত্যু ঘিরেও রহস্য দানা বেঁধেছে। উঠেছে নানা প্রশ্ন।
১) পরিবারের দাবি, যে আলোকচিত্রীর সঙ্গে নবীন মঙ্গলবার সিহড় গ্রামে যান, তিনি বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে জানান, ওই দিন ভোর থেকে নবীনের খোঁজ নেই। দু’জনে বিয়ে বাড়ির কাজ সেরে সেখানেই পাশাপাশি শুয়েছিলেন। ভোরে আলোকচিত্রী দেখেন, নবীন তাঁর পাশে নেই। নবীনের দিদি, কামারপুকুর কলেজেরই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী চায়না হালদারের প্রশ্ন, ভোরেই যখন জানা গেল নবীন নেই, তখনই কেন ওই আলোকচিত্রী বাড়িতে ফোন করে জানালেন না? এর জবাবে ওই আলোকচিত্রী এ দিন বলেন, “সকাল ৭টা থেকেই নবীনকে খোঁজাখুঁজি করেছি। তার পরে কনে বিদায় শুরু হয়ে যাওয়ায় কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। দুপুরে ওর বাড়িতে ফোন করে জানাই।” তাঁর আরও দাবি, তিনি প্রথমে কোতুলপুর থানায় ঘটনাটি মৌখিক ভাবে জানান। তার পরে বাড়িতে ফোন করেন।
২) বুধবার সকালে বিয়ে বাড়ির অদূরে একটি পুকুরের পাড়ে নবীনের জুতো জোড়া দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে পায় নবীনের একটি মোবাইল ফোনও। সিমকার্ড অবশ্য উধাও। এর পরে নবীনের দেহের সন্ধানে বুধ ও বৃহস্পতিবার দফায় দফায় ওই পুকুরে পুলিশ জাল ফেলেছে। কিন্তু কোনও হদিস মেলেনি। বৃহস্পতিবারও নয়। হঠাৎই শুক্রবার কী করে নবীনের দেহ ভেসে উঠল পুকুরে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। নবীনের মামা অজয় দত্ত এ দিন বিষ্ণুপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “ওই পুকুরের জল বেশি ছিল না। তা সত্ত্বেও এত বার জাল ফেলে পুলিশ দেহ পেল না, অথচ পরে তা ভেসে উঠল, এটা কী করে সম্ভব? দু’দিন পুকুরের নীচে দেহ থাকলে তো তা ফুলে ওঠার কথা। নবীনের সে-সব কিছুই হয়নি। ”
৩) অজয়বাবুদের আরও বক্তব্য, নবীনের আর একটা মোবাইলেরও হদিস মেলেনি। যে মোবাইল মিলেছে, সেটির সিমকার্ডই বা কোথায় গেল, তাঁরা বুঝতে পারছেন না। মধুসূদনবাবুর বক্তব্য, “আমাদের ধারণা ওকে আগেই খুন করা হয়েছিল। পরে কোনও সময় পুকুরে দেহ ফেলে দেওয়া হয়।” প্যান্ট-জামা পড়া অবস্থায় নবীনের দেহ উদ্ধার হয় পুকুর থেকে। সেটা কী করে সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাড়ির লোক।
পরিবারের আরও অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাটি তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। অজয়বাবুর দাবি, কোতুলপুর থানার পুলিশ খুনের অভিযোগও নিতে চায়নি। শেষে তাঁরা এ দিন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও-র কাছে যান অভিযোগ জানাতে। এসডিপিও দিব্যজ্যোতি দাস না থাকায় তাঁরা বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অদীপকুমার রায়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। মহকুমাশাসক বলেন, “আমি এই অভিযোগপত্র এসডিপিও-কে পাঠিয়েছি। পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি।” এসডিপিও বলেন, “ওই যুবকের পরিবার দাবি করেছে, এই মৃত্যু অস্বাভাবিক। পুলিশও অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে, এটি খুনের ঘটনা কি না।”
পুলিশের দাবি, নবীনের মৃগী রোগ ছিল। পরিবারও সে কথা স্বীকার করেছে। নবীনের পিসেমশাই সত্যনারায়ণ দে-ও এই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত খুন’ বলে দাবি করে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চেয়েছেন। দাসপল্লির বেনেপাড়ার বাসিন্দা হরিসাধন দাস বলেন, “নবীন খুবই ভাল ছেলে ছিল। বরবারই মেধাবী ছেলে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকেও ভাল ফল করেছিল। তার এই ধরনের মৃত্যু আমরা কেউই মেনে নিতে পারছি না। পুলিশের কাছে আবেদন, তারা তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করুক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.