দু’দল ছাত্রের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে উঠল অশোকনগর নেতাজি শতবার্ষিকী মহাবিদ্যালয়। জখম হয়েছেন ৪ জন। অধ্যক্ষের ঘরে ভাঙচুর চালানো হয়। ‘হুমকি’ দেওয়া হয় তাঁকে। মাস খানেক আগেই ছাত্রেরা দীর্ঘ ক্ষণ ঘেরাও করে রেখেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। অধ্যক্ষ সুধানাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি হৃদরোগী। এ ভাবে চলতে থাকলে যে কোনও সময় অসুস্থ হয়ে পড়ব।”
যে দু’দল ছাত্রের মধ্যে এ দিন গোলমাল ছড়ায়, দু’পক্ষই ‘তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের’ বলে পুলিশ সূত্রের খবর। স্থানীয় ‘প্রভাবশালী’ দুই তৃণমূল নেতার অনুগামীদের মধ্যেই গোলমাল চলছে কিছু দিন ধরে। ছাত্রসংসদের দখল আগে ছিল এসএফআইয়ের হাতে। দু’বছর ভোট না হওয়ায় ছাত্রসংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তারপর থেকে টিএমসিপি-রই রমরমা। আগামী ৫ মার্চ ছাত্রসংসদের ভোট। যাকে কেন্দ্র করেই কলেজের পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হচ্ছে বলে দু’পক্ষই মেনে নিয়েছে। ঘটনার কথা শুনেছেন জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তিনি বলেন, “দলীয় ভাবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় কোনও নেতার মদত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কী হয়েছিল এ দিন? |
কলেজ ও পুলিশ সূত্রের খবর, পুরনো বিবাদের জেরেই গোলমালের সূত্রপাত। প্রথম বর্ষের ছাত্র তথা টিএমসিপি কর্মী সুমন দাস বলেন, “বহিরাগত কিছু ছেলে কলেজে ঢুকে আমার কাছ থেকে পরিচয়পত্র চায়। ভোটে যাতে না দাঁড়াতে পারি, সে জন্য চাপ দিতে থাকে ওরা। প্রতিবাদ করায় মেরেছে।” সুমনকে ভর্তি করা হয়েছে অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। অন্য দিকে, নিজেকে কলেজের ‘টিএমসিপি ইউনিট সদস্য’ বলে দাবি করে ছাত্রী জয়া দত্ত বলেন, “টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সঞ্জয় রাহার মদতে বহিরাগতেরা আমাদের সংগঠনের কয়েক জনের উপরে চড়াও হয়। আমাদের পক্ষের তিন জন জখম হয়েছেন।”
গোলমালের পরে এক দল ছাত্র অধ্যক্ষের ঘরে চড়াও হয়। চেয়ার-টেবিল ওলট-পালট করে। ভাঙচুর চালায়। অধ্যক্ষকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে ‘বাধা দেওয়া’ হয় বলেও অভিযোগ। মারমুখী ছাত্রছাত্রীদের দাবি, যারা গোলমাল পাকাচ্ছে কলেজে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
গোলমালে মদত দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে সঞ্জয়বাবু বলেন, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নাম ভাঁড়িয়ে কয়েক জন ছেলে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আই-কার্ড ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। তারা যাতে ভোটে দাঁড়াতে না পারেন, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।” মাঝে মধ্যেই গোলমালের জেরে কলেজের পঠনপাঠন ‘ব্যাহত’ হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর দত্তের কথায়, “কলেজে যারা ঝামেলা পাকাচ্ছে, তারা দলের ভাল সদস্য নয়। পুলিশকে বলেছি কড়া ব্যবস্থা নিতে।” |