|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর |
ধূপ শিল্প |
শুধুই কি ছাই |
দেবাশিস দাস |
প্রয়োজনীয় উপাদান এবং উন্নত পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে বারুইপুরের ধূপকাঠি শিল্প।
বারুইপুর শহরতলির ফুলতলা, শাঁখারিপুকুর, কুমোরহাট, শঙ্করপুর, রামনগর, সীতাকুণ্ড, দাঁড়িয়া, জেলেরহাট এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার জীবিকা এই ধূপকাঠি শিল্পের উপর নির্ভরশীল। ধূপকাঠি নির্মাতাদের কথায়, স্বাধীনতার পরেই এই সব এলাকায় ধূপকাঠি তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু আজও বঁটিতে বাঁশ কেটে ধূপকাঠি বানানোর কাঠি তৈরি করতে হয় এবং শুকনোর জন্য রোদের উপর নির্ভর করতে হয়। একে দুর্বল পরিকাঠামো, তার উপর সারা বছর কাঁচামালের অভাব লেগে থাকে বলে অভিযোগ ধূপকাঠি নির্মাতাদের। |
|
নানা ধরনের ধূপকাঠি তৈরি করতে প্রয়োজন কাঠকয়লা, ভেষজ আঠা বা ‘জিকেট’, কাঠের গুড়ো, তেঁতুলবীজের ছাল, নারকোলের মালা, ধুনো, বাঁশকাঠি, বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি এবং রং। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ধূপকাঠি তৈরির জন্য জরুরি উপাদানগুলি ভেষজ হওয়ায় কাঁচামালের জন্য ভিন জেলা ও রাজ্যের উপরে নির্ভর করতে হয়। এই সব কাঁচামালের সরবরাহও অধিকাংশ সময়ে ঠিক থাকে না। যেমন, বাজারে জিকেটের অভাব লেগেই আছে। বেশির ভাগ সময়েই তা কিনতে হয় চড়া দামে। প্রায়ই দামেরও তারতম্য ঘটে। এখনও পর্যন্ত ধূপকাঠি প্যাকিংয়ের কোনও আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। নির্মাতারা হাতেই প্যাকেট বানান।
তাঁতকলের কাজ ছেড়ে ধূপকাঠি বানানোর কাজ শুরু করেছিলেন রামনগরের বাসিন্দা সত্তর বছরের কানাইলাল মণ্ডল। তাঁর কথায়: ‘‘প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই পেশায় থাকলেও পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। অথচ, একটু গুরুত্ব দিলেই এই এলাকায় ধূপকাঠি তৈরির ব্যবসা যথেষ্ট লাভজনক হয়ে উঠতে পারত। এ বিষয়ে বিভিন্ন স্তরে আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।”
বারুইপুর আগরবাতি ম্যানুফ্যাকচারার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, এলাকার প্রায় ষাট হাজার বাসিন্দা ধূপকাঠি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনের সম্পাদক আশুতোষ দাস বলেন, “দেশে-বিদেশে বিরাট বাজার এবং চাহিদা থাকা সত্ত্বেও দুর্বল পরিকাঠামো এবং কাঁচামালের অভাবে আমরা দিনের পর দিন ক্ষতি স্বীকার করছি। আমাদের কাছ থেকেই কর্নাটক, তামিলনাড়ু, গুজরাত, তাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ীরা কিলো কিলো ধূপকাঠি কিনে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে। অথচ, আমাদের পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হল না।” অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে বলা হয়, জিকেট বাজারে এমনিতে বিক্রিই হয় না। ব্যবসায়ীদের তা ৫০-৫৫ টাকা কিলো দরে কিনতে হয় ঘুরপথে। তবে, যাদবপুরের প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী বেশ কয়েক বার এই সমস্ত সমস্যার সুরাহা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলে অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গিয়েছে। সুজনবাবু বলেন, “এখানকার ধূপকাঠি শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারি ভাবে জিকেট সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।” |
|
বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র শিল্পকে উৎসাহিত করার জন্য ১৯৬২ সাল নাগাদ তৎকালীন রাজ্য সরকার একটি শিল্পতালুক তৈরি করেছিল বারুইপুরের ফুলতলায়। এলাকা সূত্রে খবর, ধূপকাঠি শিল্প অবশ্য ছিল এই তালুকের বাইরে। ফুলতলা এবং সংলগ্ন এলাকার ধূপকাঠি নির্মাতাদের অভিযোগ, প্রথম দিন থেকে একই সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী বাগচী ধূপকাঠি শিল্পের এই সমস্ত সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “জিকেটের সরবরাহ ঠিকঠাক করার জন্য আমি বন দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ধূপকাঠি শিল্পের জন্য শিল্পতালুকের মধ্যে জমির ব্যবস্থা করার বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|