দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা |
বজবজ |
ঠিক ‘নির্মল’ নয় |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
বাড়ির সামনে রান্নাঘর। তার ঠিক পাশেই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে শৌচাগার। কিন্তু সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি হয়নি। পনেরো-কুড়ি ফুট গর্ত খুঁড়ে অস্থায়ী ভাবে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে শৌচাগারটি। ফলে দুর্গন্ধে টেকা দায়। কোনও বিক্ষিপ্ত দৃশ্য নয়, চকমানিক গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ বাড়ির এটি অতি পরিচিত ছবি। কয়েকটি বাড়িতে আবার শৌচাগারই নেই। কিন্তু এর মধ্যেই ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ পুরস্কার পেয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েতটি।
|
|
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ দু’নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির চকমানিক গ্রাম পঞ্চায়েতে পাঁচটি গ্রাম রয়েছে। অধিকাংশ বাড়িতে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছয়নি। রাস্তার ইট উঠে চলা দায়। অপরিচ্ছন্নতার চিহ্ন স্পষ্ট। তা হলে ২০০৯-১০-এ এই গ্রাম পঞ্চায়েতটি নির্মল গ্রাম পুরস্কার পেল কী করে? পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, প্রথমে ব্লক এবং জেলাস্তর থেকেই পরিদর্শন করে দেখা হয় পঞ্চায়েতের ৮০ শতাংশ বাড়িতে স্যানিটেশন ঠিকঠাক রয়েছে কি না। তার পরে ব্লক এবং জেলা প্রশাসনের থেকে আবেদপত্র পাঠানো হলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের দল পর্যবেক্ষণের জন্য আসে। সাধারণত গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি-সহ স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ঘুরে ওই কেন্দ্রীয় দল পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে খোঁজখবর চালায়। তার পরে সন্তুষ্ট হলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতর গ্রামটিকে নির্মল গ্রাম হিসেবে
ঘোষণা করে।
|
|
পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, নির্মল গ্রাম হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পরে পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান পাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আড়াই লক্ষ টাকা অনুদান হাতে এসেছে। কিন্তু সেই টাকায় বাকি অংশের উন্নয়ন হল না কেন? চকমানিক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের সজল মাইতি বলেন, “অনুদানের ৫০ শতাংশ টাকা হাতে পেয়েছি। কিন্তু তাতে এত বড় এলাকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা প্রাথমিক ভাবে এলাকায় নর্দমা সংস্কার ও শৌচাগার তৈরির উপরে জোর দিয়েছি। সাধারণ শৌচাগারও করা হয়েছে। তবে পুরো টাকা না পাওয়ার জন্য অনেক কাজই আটকে রয়েছে। আমি প্রায় আট মাস আগে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনও হাতে টাকা পাইনি।” পাশাপাশি তাঁর স্বীকারোক্তি: “পঞ্চায়েত এলাকাটি একশো শতাংশ নির্মল বলতে পারি না।”
|
|
বজবজ-২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের স্বপন রায় বলেন, “নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত পুরস্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকে। আমরা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এসে ওই পুরস্কারটি পাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে। আমরা সেই তালিকা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠিয়েছিলাম। ওখান থেকে পরিদর্শক দল এসে সেগুলি মিলিয়ে নিয়েছে। তার পরেই পুরস্কার দেওয়া হয়।” তা হলে এখনও গ্রামের এই অবস্থা কেন? তাঁর কথায়: “পরবর্তীকালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে জায়গাগুলিতে এখনও শৌচাগার তৈরি না হওয়ায় পরিস্থিতি এ রকম দাঁড়িয়েছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ বলেন, “যথাযথ নির্দেশিকা মেনেই কাজ হয়েছে। পরে অনুদানের টাকা এলেও সে ভাবে কাজ হয়নি। আমাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে। আমরা পরিদর্শন করতে গিয়েও তা দেখেছি। শৌচাগার থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে কি না তা দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|