খুশিতে বাঁচুন
জালা-মুক্তি
সালোয়ার-কামিজে বেশ ‘গ্ল্যামারাস’ দেখাচ্ছে। কিন্তু জ্বালা ধরাচ্ছে ভুঁড়িটা। উনিশ-কুড়ি বা মাঝবয়সী অফিসবাবুভুঁড়ি সবারই না-পসন্দ্। কিন্তু অ্যাডিপোস কোষের পাহাড় গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিজ্ঞানসম্মত অ্যাকশন প্ল্যান নিয়েই যত গোলকধাঁধা। জাদু নয়, একের পর এক পাথর কেটে দীর্ঘ দিনের জমে ওঠা মেদের পাহাড়কে নিশ্চিহ্ন করুন। তবে জেনে রাখুন ‘স্পট রিডাকশন’ অর্থাৎ নির্দিষ্ট জায়গার মেদ কমানোর কোনও পদ্ধতি শারীরবিজ্ঞানে নেই।
শরীরকে চালাতে মেদ এক ধরনের জ্বালানি। প্রয়োজন হলে শরীর সব অংশ থেকে তা চেয়ে নেয়। সিটআপ দিচ্ছি বলে পেট থেকেই জ্বালানি খরচ হচ্ছে এই বদ্ধমূল ধারণা ভুল। মেদ থাকে মাংসপেশির উপরে। সিটআপ দিলে পেটের মাংসপেশি শক্তিশালী হয়। ভুঁড়ির হেরফের হয় না।
তা হলে করবেন কী? পরিকল্পনা হোক ত্রিমুখী:
১) শরীরচর্চা, ২) নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং ৩) মানসিক স্থিরতার অনুশীলন।

লাঞ্জ অ্যান্ড চপ'
১) শরীরচর্চা: শরীরচর্চার নকশা এ ভাবে সাজান। সপ্তাহে ৫-৬ দিন ওয়ার্কআউট করুন। এর মধ্যে চার দিন প্রথমে করুন শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম। তার পরে কার্ডিও ওয়ার্কআউট। বাকি এক-দু’দিন শুধুই কার্ডিও। যে দিন শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম আছে সে দিন দু’তিনটে কোর এক্সারসাইজ করুন। শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামকে ভাগ করুন দু’ভাগে। যেমন, সোম আর বুধ শরীরের উপরের অংশের। মঙ্গল, বৃহস্পতি শরীরের নীচের অংশের ব্যায়াম।
ভাবছেন শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামে মেদ কমবে কী ভাবে? প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে ব্যায়ামে মাংসপেশি প্রস্থে বাড়ে। তখন মাংসপেশির খিদে পায়। খিদে মেটে মেদ থেকে। মানে শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করলে বিশ্রামের সময়ও ফ্যাটবার্ন হচ্ছে। শরীরের উপর বা নীচের জন্য চার-পাঁচটি ব্যায়াম প্রত্যেক দিন করুন। শরীরের নীচের অংশের জন্য এমন তিনটি ব্যায়ামের হদিস দিচ্ছি।
ক) লাঞ্জ অ্যান্ড চপ: একটি পা সামনে, অন্যটি পিছনে করে দাঁড়ান। দু’পায়ের ব্যবধান ফুট দেড়েকের। এই অবস্থায় শরীর সোজা রেখে হাঁটু ভেঙে মাটি স্পর্শ করা হল “লাঞ্জ”। পিঠ টানটান রাখুন। ঠিক নামার সময় দু’হাতে ধরা বোলতটি কুড়ুল চালানোর ভঙ্গিতে সামনের থাইয়ের দিকে আড়াআড়ি নামিয়ে আনা হল “চপ”। প্রতি পায়ে দশ বার করে করুন। দু’পায়ে হয়ে গেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে তিন বার রিপিট করুন।
স্পট হাই-নি
খ) স্কোয়াট অ্যান্ড অ্যাবডাকশন: স্কোয়াট অর্থাৎ দু’হাঁটু ভেঙে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল হওয়া। দু’হাতে দু’টি জলের বোতলই ধরে রাখুন। তবে ডাম্বেল হলে ভাল হয়। এ বার ওঠার সময় একবার ডান-পাটা পাশাপাশি শূন্যে তুলুন। পরের বার বাঁ পাটা। মোট দশটা স্কোয়াট। একটু বিশ্রাম নিয়ে তিন বার রিপিট করুন।
গ) এক পায়ে পিস্তল স্কোয়াট: দু’হাতে একটি জলের বোতল ঠিক বুকের সামনে এনে ধরুন। হাত টানটান থাকবে। যেন একটি পিস্তল ধরে আছেন। এ বার এক পায়ে ভর রেখে সাধ্যমতো স্কোয়াট করুন। ভারসাম্য না রাখতে পারলে দেওয়ালে হেলান দিয়ে নীচে অর্থাৎ স্কোয়াট পজিশনে যান। প্রতি পায়ে দশ বার করে। আগের মতোই তিন বার রিপিট করুন।
আগেই বলেছি সপ্তাহে চার দিন অবশ্যই কোর এক্সারসাইজ করবেন। মনে রাখবেন পেটের গভীরের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে পেটটা টানটান করতে কোর এক্সারসাইজের কোনও বিকল্প নেই। তিনটি কোর এক্সারসাইজ করবেনই। একটির উদাহরণ দিই।
সাইড প্ল্যাঙ্ক
সাইড প্ল্যাঙ্ক: পাশাপাশি কাত হয়ে কনুইয়ের উপরে ভর রেখে শরীরটা শূন্যে ধরে রাখুন। খেয়াল রাখুন যেন কাঁধ, কোমর, পা একই সরলরেখায় থাকে। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক রেখে পেটটা মেরুদণ্ডের দিকে টেনে রাখুন। মনে মনে ৩০ গুনুন। ডান আর বাম দিকে তিন বার করে করুন।
শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম হয়ে গেলে পাঁচ মিনিটের বিশ্রাম। এ বার শুরু করুন কার্ডিও। শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামের দিন কার্ডিও অবশ্যই পরে করবেন। মাংসপেশি তরতাজা অবস্থায় শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম করতে হয়। একই দিনে শক্তি বাড়ানোর ব্যায়াম আর কার্ডিও করার উদ্দেশ্য হল মেদকে সাঁড়াশি আক্রমণ করা। এতে বিপাকের হার দারুণ বেড়ে যায়।
মাউন্টেন স্কিয়ার এক পায়ে পিস্তল স্কোয়াট
কার্ডিও ওয়ার্কআউট: হাঁটা, জগিং, দৌড় যাই করুন ৩৫-৪০ মিনিটের বেশি নয়। দীর্ঘমেয়াদি এবং বিরামহীন কার্ডিওতে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন বিপাকের হার কমিয়ে শরীরে ক্লান্তি আনে। থমকে যায় ফ্যাটবার্নিং প্রক্রিয়া। বরং বিরতি দিয়ে করুন। যেমন, এক মিনিট জোরে হাঁটুন, আবার এক মিনিট আস্তে। এক মিনিট জগিং, ৩০ সেকেন্ড হাঁটা। এ ভাবে ২০-২৫ মিনিটই যথেষ্ট। বেশি ফিটদের জন্য ৩০ সেকেন্ড দৌড়, ৩০ সেকেন্ড জগিং। এ ভাবে পাঁচ বার করার পর দু’মিনিটের পুরো বিশ্রাম। তার পরে প্রক্রিয়াটি তিন বার রিপিট করুন। কার্ডিও ট্রেনিং-এ বৈচিত্র আনতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নীচের দু’টি ওয়ার্কআউট করুন।
ক) স্পট হাই-নি রান:
জায়গায় দাঁড়িয়ে জোরে দৌড়ানোর চেষ্টা। মনে করুন খুব জোরে ছুটছেন। হাঁটু দু’টি কোমর-সমান উচ্চতায় উঠবে। হাত দু’টি সমান তালে সামনে পিছনে আসবে। ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট করুন। এক থেকে দু’মিনিট বিশ্রাম নিয়ে পাঁচ-ছ’বার রিপিট করুন।
খ) মাউন্টেন স্কিয়ার: সামান্য লাফিয়ে পা দু’টি সামনে পিছনে করতে থাকুন। যেন পাহাড়ে স্কিইং করছেন। হাত দু’টিও সমানে চলতে থাকবে। সময়কাল, বিশ্রাম সব আগের মতোই।
স্কোয়াট অ্যান্ড অ্যাবডাকশন
২) নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস: ওয়ার্কআউটের পাশাপাশি ভুঁড়িকে শায়েস্তা করতে খাওয়াতে নজর দিন। বারে বারে খান। ন্যূনতম ছ’-আট বার। এতে বিপাকের হার বেশি হয়। মানে জমানো এনার্জি দ্রুত ভাঙে। তবে পেটভরে খাবেন না। শরীরে সাত শতাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাটের দরকার আছে। তবে এড়িয়ে চলুন চিজ, মাখন, ঘি, পাঁঠার মাংস, নারকোল, ক্রিম, চকোলেট, আইসক্রিম, সব ভাজাভুজি এবং ডিমের কুসুম। নার্ভের ট্রান্সমিশন, কোষ মেমব্রেন তৈরির জন্য যে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট লাগে যেমন অলিভ অয়েল, আমন্ড, পিস্তা, ভুট্টা, সোয়া, স্যামন মাছ খান।
৩) মানসিক স্থিরতার অনুশীলন: ভুঁড়ি কমাতে যদি সত্যিই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন তা হলে দু’-পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিন আর ছাড়ুন। দেখুন নিঃশ্বাসটা কী ভাবে পেট পর্যন্ত যাচ্ছে, আবার বেরিয়ে আসছে। সঙ্গে মনকে বলুন ওয়ার্কআউট আর খাদ্যাভাসে নিয়ন্ত্রণ, এই প্রক্রিয়া জারি রাখাই আপনার কাজ। ভুঁড়ি কমানো নিয়ে পরে ভাবা যাবে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.