এ কলকাতায়
এক্কাগাড়ি ওই ছুটেছে...
বাবু কলকাতার বিলাস ছুটত ঘোড়ার খুরে। কিন্তু সেই ঘোড়ায় টানা গাড়ি আজ আর বিলাসিতার তেমন উপকরণ নয়। বরং এ শহরের মনসুর মিঞাদের ঘোড়া আর গাড়িগুলি আজ ছুটির দিনের বিনোদন কিংবা শোভাযাত্রার যাত্রী।
ঘোড়া ও ঘোড়ায় টানা গাড়িকে অবলম্বন করেই এখনও বেঁচে আছেন এ শহরের কিছু মানুষ। এঁদের একাংশ ময়দানে ঘোড়া ও ঘোড়ায় টানা গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়ান। আর এক অংশকে দেখা যায় রাজাবাজারে। মূলত বিয়ে বা অন্যান্য বড় অনুষ্ঠানে ভাড়ায় যায় এখানকার গাড়িগুলি।
ময়দানে যাঁরা ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি চালান তাঁদের বেশির ভাগেরই বাড়ি খিদিরপুরে। ঘোড়া রাখেন হেস্টিংসের আস্তাবলে, জানালেন তেমনই এক ঘোড়ার গাড়ির মালিক এম রাজা। তাঁর ছোটভাই রমজান বললেন, “চার-পাঁচ ভাই মিলে ব্যবসা করি। ছোট ভায়েরা একটি করে ঘোড়া নিয়ে ময়দানের মাঠে ঘোরে। বাচ্চারা ঘোড়ার পিঠে চড়তে ভালবাসে। বড় ভায়েরা গাড়ি চালান।” ময়দানে একটি ঘোড়া থেকে শীতকালে দৈনিক রোজগার হয় সাত-আটশো টাকা। বড়দিন, নববর্ষ বা শনি-রবিবার রোজগার বাড়ে। ঘোড়ার গাড়ির ক্ষেত্রে রোজগারটা একটু বেশি। কারণ এর ভাড়াও বেশি। তাই বিশেষ দিনে এই গাড়িগুলি কখনও পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্তও রোজগার করেছে বলে জানালেন এম রাজা।
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
ভাড়া করা ঘোড়া নিয়ে ঘুরে বেড়ায় বছর পনেরোর ফিরোজ। জানাল, মোট রোজগারের ৩০ শতাংশ পায় সে। কলকাতার ট্যাক্সি ব্যবসার ঠিক উল্টো নিয়ম। কিন্তু কিছু করার নেই, ঘোড়ার লাইসেন্স পাওয়া বা ঘোড়া কেনা কোনওটাই সহজ নয় যে।
রাজাবাজারের গাড়িওয়ালাদের জীবিকা অবশ্য কেবল ঘোড়া-নির্ভর নয়। তাঁরা সুন্দর করে গাড়িগুলোকে সাজিয়েছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় যান যখন বিলাসিতার চিহ্ন হয়ে উঠেছে তখন বদলে গিয়েছে আকার ও সাজগোজ। এখনকার গাড়িগুলির আদল অনেকটাই রামায়ণ-মহাভারতের রথের বর্ণনার মতো। এঁরা উত্তর ভারতীয় ‘ভাল’ জাতের ঘোড়া পোষেন। তাই এক এক বারে তাঁদের ভাড়া চার-পাঁচ হাজার টাকা।
রাজাবাজারের এক গাড়িমালিক এম ডি কাসিম শোনালেন একটা মজার গল্প। যে-বছর মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ঘোড়ায় টানা ট্রামে কলকাতা ভ্রমণ করেন সেই ট্রাম নাকি মিলিটারি ঘোড়ারাও টানতে পারেনি। টেনেছিল কাসিমের ঘোড়াগুলিই। নাসির আহমেদ জানালেন, পুরুষানুক্রমে রাজাবাজার ও খিদিরপুরের মুসলমান সমাজের একাংশ এই ব্যবসা করে এ শহরে বেশি পরিচিত। এখন ফুলবাগানের এক হিন্দু মালিকও নাকি ঘোড়ার গাড়ির ব্যবসা শুরু করেছেন।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.