বিপদের ভোজ
হাত বাড়ালেই আগুন
ফুটপাথের উপর কাঠের ছোট ছোট স্টল। দেখতে টেবলের মতো, কিন্তু টেবলের তলাটা চার দিক থেকে ঘেরা। এই টেবলের উপর কোথাও বড়, কোথাও ছোট লোহার উনুন। উনুনের পাইপ যুক্ত গ্যাস সিলিন্ডারের সঙ্গে। চলছে কোথাও চা, কোথাও খাবার তৈরি। শহরের প্রায় প্রতিটি জনবহুল এলাকার অতি পরিচিত ছবি এটি।
দমকলের আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শহর জুড়ে চলছে গ্যাস সিলিন্ডার বা পাম্প দেওয়া স্টোভ ব্যবহার করে খাবারের রমরমা ব্যবসা। অধিকাংশ জায়গাতেই ফুটপাথের খাবারের স্টলগুলিতে ব্যবহার হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। অভিযোগ উঠেছে, সদা ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাথগুলিতে বিপজ্জনক ভাবে এ ধরনের দাহ্য বস্তু নিয়ে কারবার চললেও প্রশাসন কিংবা পুরসভা, সকলেই নির্বিকার।
যতীন দাস পার্ক পার্ক স্ট্রিট
শহরের দক্ষিণ থেকে উত্তর, প্রতিটি ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাথ ভরে উঠেছে নানা ধরনের খাবারের দোকানে। কোথাও চা তো কোথাও চাউমিন, রোল, মোমো, এমনকী ভাতের হোটেল। বেশির ভাগ জায়গাতেই রান্নার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বড় বড় গ্যাস ওভেন। এমনকী, মেট্রো স্টেশনের বাইরে দেওয়াল ঘেঁষে দাহ্য বস্তু নিয়ে রমরমিয়ে চলছে খাবারের স্টল। কোথাও চায়ের দোকান, কোথাও রোল, চাউমিন, কোথাও মোমো নানা খাবারের দোকান চলছে মেট্রো স্টেশনের মতো জায়গার গা ঘেঁষেও।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, লোকজন ভর্তি রাস্তায় বা ফুটপাথের উপর কোনও দোকান বা খাবারের দোকানের ক্ষেত্রে দমকলের পক্ষ থেকে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয় না। দমকলের এক আধিকারিকের দাবি, অবিলম্বে পুরসভা এবং পুলিশের উচিত রাস্তার দোকান এবং ফুটপাথের স্টলে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দমকল বিভাগ যা-ই বলুক, আইনের তোয়াক্কা না করে শহর জুড়ে রাস্তায় রাস্তায় চলছে অবৈধ ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে খাবারের রমরমা ব্যবসা। রাজ্য দমকল বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল দুর্গাপ্রসাদ তারেনিয়া বলেন, “ফুটপাথের দোকানগুলিই তো অবৈধ। সেখানে পরিদর্শন করে লাইসেন্স দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। দোকানগুলি তুলে দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের।”
যেমন, দক্ষিণে দেশপ্রাণ শাসমল রোডের উপর জনাকীর্ণ টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের বাইরের ফুটপাথের দু’সারিতে রয়েছে নানা ধরনের খাবারের দোকান। সেখানে প্রায় প্রতিটি দোকানে রান্না চলছে বড় বড় গ্যাস ওভেনে। একই দৃশ্য রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট রোড থেকে শুরু করে আশুতোষ মুখার্জি রোড বা জওহরলাল নেহরু রোডের। শুধু তাই নয়, মেট্রো স্টেশনের প্রবেশপথগুলির বাইরে বা দেওয়াল ঘেঁষে এবং অফিস এলাকাগুলিতে দিনের পর দিন চলছে এই কারবার।
হাতিবাগান ক্যামাক স্ট্রিট
পাশাপাশি, ধর্মতলা বা গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়েও রয়েছে সারি সারি খাবারের দোকান। সেখানেও পরিস্থিতি এক রকম। একই দৃশ্য লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের উল্টো দিকের ফুটপাথ, লেনিন সরণি থেকে শুরু করে মানিকতলা মেন রোড, কাঁকুড়গাছি, হাতিবাগান, বাগবাজার প্রভৃতি এলাকার ফুটপাথের খাবারের স্টলগুলিতে।
তা হলে সমাধান কোথায়? কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে বলেন, “পুরসভার সে রকম পরিকাঠামো নেই যে, প্রতিটি জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে। তবে এই সমস্যার সমাধানে পুরসভা শীঘ্রই দমকলের সঙ্গে আলোচনায় বসবে।”
কী ভাবে রাস্তার দোকানে ব্যবহারের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে যাচ্ছে? ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তুষার সেন বলেন, “এটা ঠিক যে চড়া দামে গ্যাস সিলিন্ডার বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ডিস্ট্রিবিউটর এবং কোম্পানির নিজস্ব অফিসার আছে বিষয়টি দেখাশোনার জন্য। তাঁদের কাছে গ্রাহকদের তালিকাও রয়েছে। মূলত তাঁদের নজরদারির অভাবের জন্যই সিলিন্ডারগুলি বাইরে বেরোচ্ছে। এ ব্যাপারে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের আলাদা বিভাগ রয়েছে নজরদারির জন্য। দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের সঙ্গে কথাও হয়েছে এ বিষয়ে।”
শেক্সপিয়র সরণি শোভাবাজার
ইন্ডিয়ান অয়েলের এক আধিকারিকের কথায়: “ফুটপাথের খাবারের দোকানগুলিতে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহার পুরোটাই বেআইনি। আমাদের কাছে এ ব্যাপারে অভিযোগ এলে আমরা স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিয়ে সিলিন্ডার বাজেয়াপ্ত করি।” তাঁদের নিজস্ব বিভাগ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে নজরদারির আড়ালে সিলিন্ডার বাইরে বেরোচ্ছে? তিনি বলেন, “আমাদের গ্রাহক সংখ্যা বিপুল। গ্রাহকদের জন্য বরাদ্দ সিলিন্ডার কী ভাবে বাইরে বেরোচ্ছে তা দেখার জন্য পর্যাপ্ত অফিসার আমাদের নেই।”
বিষয়টি স্বীকার করে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, “ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা সিলিন্ডারে গ্যাস ঠিকঠাক রয়েছে কি না সেটা দেখি। ডোমেস্টিক গ্যাস ফুটপাথে ব্যবহার হচ্ছে কি না এটা পুরসভার দেখার বিষয়। তবে আমাদের কাছে অভিযোগ এলে বিষয়টি দেখব।”




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.