আপনার সাহায্যে ১...
দম মারো দম
তসী বা সুপ্রতিম, গাঁজায় টান দিলেও, আসক্ত হয়নি। সাময়িক আনন্দই থেকেছে।
সবাই অতসী বা সুপ্রতিম নয়। গাঁজা খাওয়াটা এক সময় ছিল ‘অ্যাডভেঞ্চার’। এখনও প্রথম ‘টান’টা তা-ই আছে। কিন্তু তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাঁজা সেবন সম্বন্ধে নানা ‘মিথ’। ফ্যাশন মডেলরা নাকি নিয়মিত গাঁজা সেবন করেন। সুতরাং ফিগার রাখতে গাঁজা খাওয়া দরকার। এটা যে কত বড় ভুল ধারণা
‘হরে রাম হরে কৃষ্ণ’
ছবিতে জিনতের সেই মুহূর্ত
সে কথাই বলছিলেন ডা. জয়রঞ্জন রাম। “এই তো সে দিন একটি ১৮-১৯ বছরের ছেলেকে নিয়ে এলেন তাঁর বাবা-মা। ভাল গান গায়, পড়াশোনায় ভাল। দোষের মধ্যে দিন-রাত গাঁজা খায়। আমি কিছু বলার আগেই ও কয়েকটা কাগজ ধরিয়ে দিল,” বললেন ডা. রাম, “দেখলাম গাঁজার উপকারিতা নিয়ে কয়েকটা প্রবন্ধ। বললাম, সুফলের কাগজ তো নিয়ে এসেছ, কুফল কী কী আছে জান? সে বলল, দেখুন, আপনার বা আমার বাবা-মায়ের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান মানুষেরা গাঁজা খেয়েছেন, এখনও খান। তাঁরা কেউ বোকাও হয়ে যাননি, অসুস্থ বলেও জানি না। তা ছাড়া, কিছু না করেই গত ৬ মাসে আমার ১৫কেজি ওজন কমেছে। কাজেই কোন যুক্তিতে গাঁজা ছাড়তে বলছেন?”
“ওকে বলি, ব্র্যাড পিটের খবর জান তো? ১৯৯০-এর শেষে প্রচণ্ড কাজের চাপ সামলাতে না পেরে চরম ডিপ্রেশনের মুখে পড়ে গাঁজার আশ্রয় নেন তিনি। তাঁর ধারণা ছিল এতে নেশা হয় না, চিন্তাভাবনায় ভারসাম্য থাকে। কিন্তু দিনে দিনে নেশায় ডুবতে ডুবতে একেবারে জুবুথবু হয়ে গেলেন তিনি। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে শেষমেশ নেশা ছাড়লেন। কিন্তু সব চেয়ে মজার কথা, ডিপ্রেশনের কবল থেকে বেরোনোর জন্য গাঁজা ধরলেও মনের অবস্থার হেরফের হল না।” বললেন ডা. রাম।
অলিম্পিয়ান সাঁতারু এবং ইউথ আইকন মাইকেল ফেল্পসের গাঁজা খাওয়ার ছবি, ব্র্যাড পিটের গাঁজা খাওয়ার গল্প দেখেশুনে আমার-আপনার ঘরের ছেলে-মেয়েরাও ভাবতে পারে, গাঁজা নেহাতই নিরীহ, খুব ট্রেন্ডি, খুব কুল একটা ব্যাপার।
কিন্তু পরিমিতিবোধ ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে। যেমন গাঁজা খেলে ওজন কমে শুনে উঠতি মডেল পর্ণা শুরু করল গাঁজা খাওয়া। প্রথম দিকে দারুণ সব ব্যাপার! ডায়েটিং ছেড়ে ভাল-মন্দ খাওয়া, প্রাণে ফুর্তি, সাঁতার জিমের হাত থেকে মুক্তি। কাজও মিলতে লাগল অঢেল। পর্ণাকে আর পায় কে!
কিন্তু কয়েক মাস বাদে কোমরে-পেটে আবার চর্বির রেশ। জিমে যাবে যাবে করেও শেষমেশ বন্ধুদের পরামর্শে গাঁজার ডোজ বাড়াল পর্ণা। হাতে হাতে ফল। ওজন কমতে শুরু করল। শুরু হল কিছু সমস্যাও। গাঁজা ছাড়া আর চলেই না। কাজের মাঝেও বেশ কয়েক টান চাই। ধীরে ধীরে তারও মাত্রা বাড়ল। আর কমতে শুরু করল কাজের মোটিভেশন। শুয়েবসে থাকতেই মজা। ফলে কাজকর্ম প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। এল ডিপ্রেশন, হাসিস, ব্রাউন সুগার, আত্মহত্যার চেষ্টা এবং মনোচিকিৎসকের চেম্বার।
হিসেব বলে, যতই সীমা রেখে খান, গাঁজায় ডিপ্রেশন এবং দুশ্চিন্তা কমার চাইতে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। ডা. রামের বক্তব্যের সারার্থ এই যে, একটু একটু করে গাঁজার নেশা বাড়ানো মানে হাল্কা নেশা থেকে বড় নেশার দিকে এগিয়ে যাওয়া। বেশি গাঁজা খেলে যে মনোযোগ কমে তা পরীক্ষিত সত্য। ফলে পড়াশোনা কাজকর্মে ব্যাঘাত হয়। হতাশা আসে। যা থেকে মানুষ আরও নেশার জালে জড়িয়ে পড়েন। মনোচিকিৎসকের সাহায্যে প্রবল লড়াই করে এর হাত থেকে বেরোনোর চেষ্টা করে চলেছেন তাঁরা। গাঁজা খেয়ে বন্ধ্যা হয়ে গেছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়।
তা হলে তো ছেড়ে দিতে হয় এই নেশা? কী করে ছাড়া যায়? উত্তরে চিকিৎসক বললেন, “ছাড়তে হলে এক দিনে একবারে ছাড়তে হবে। তার পর আর ফিরে তাকানো নয়। খুব কষ্ট হবে, যেটাকে বলে উইথড্রয়াল সিম্পটম। ঘুম আসবে না, অস্থিরতা, অমনোযোগের অভাব, সবই হবে, শরীরে অসহ্য উথালপাথাল হবে। তখন প্রয়োজন কাউন্সেলিং। সংযম। আর ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ওষুধবিষুধ।”
অতএব....!

তুরীয় আনন্দ ১
টানা দু’দিন ট্রেনে চেপে বেঙ্গালুরুতে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছিল সুপ্রতিম। সঙ্গে আরও কয়েক জন বন্ধু। লম্বা যাত্রা। একঘেয়েমির এক শেষ। কী করি, কী করি! এক বন্ধুর কাছ থেকে সিগারেটে মোড়া গাঁজায় একবার দম নিতে ইচ্ছে হল। সেই প্রথম তুরীয় আনন্দ। তার পর নিজের কামরা থেকে টয়লেটের দিকে যেতে গিয়ে সোজা নাক বরাবর ধাক্কা খেল ড্রাইভারের কামরার দরজায়। গাঁজার ধুনকিতে নিজের কামরাটা যে কোথায় তাও বুঝতে পারছে না। যে কামরার দিকে তাকায় সেখানেই অন্য যাত্রী। ট্রেনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চলছে তো চলছেই। কিন্তু সুপ্রতিমের কাছে প্রথম বার গাঁজায় টান দেওয়ার এই কয়েক মুহূর্তের অভিজ্ঞতা যেন কয়েক প্রহর।
তুরীয় আনন্দ ২
যেমন অতসীর গল্পটা। বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করে। বিজ্ঞাপনের জগৎ এমনিতেই প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। সেখানকার রঙিন মনের সহকর্মীদের সঙ্গে অতসী যে ক’বার গাঁজা টেনেছে, মনে হয়েছে সব কিছু খুব অলৌকিক। কী রকম সেটা? অতসী বলছিল, “প্রথম বার গাঁজা খেয়ে দেখলাম, অদ্ভুত সব রং আর আলো চার দিকে। একটা হ্যালুসিনেশন। কী সুন্দর! কী সুন্দর! বলে বোঝাতে পারব না।”

যোগাযোগ: ৯৮৩১২১৬৩৪০


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.