পশ্চিমবঙ্গের ফুলিয়া স্টেশনে ‘লাল আলো’ পার হয়ে গিয়েছিলেন লোকাল ট্রেনের চালক। তাতে রেলের এক কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছিল। বিহারের সমস্তিপুর ডিভিশনে একই ভাবে দুর্ঘটনায় পড়েছিল একটি মাল গাড়ি। বেলাইন হয়ে পড়ায় ওই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কয়েকদিন।
রেলের ইতিহাসে ‘লাল আলো’ পেরিয়ে যাওয়ার এমন নজির আছে ভুরিভুরি। তাই রেল বোর্ড এবার সেই দুর্ঘটনা ঠেকাতে মানুষের উপর বিশেষ ভরসা না করে, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা দেশের ব্যস্ততম রুটগুলিতে এই প্রযুক্তির ব্যবস্থা করছে রেল কর্তৃপক্ষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দেশের প্রতিটি জোনের রেল কর্তৃপক্ষকে এই মর্মে রেলবোর্ডের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (সিগন্যাল ডেভেলপমেন্ট) রাজীব শর্মা।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখোমুখি রেল দুর্ঘটনা এবং ‘লাল আলো’ পেরিয়ে যাওয়া রোধ করবে এই প্রযুক্তি। রেল দাবি করছে, ‘ট্রেন প্রোটেকশন ওয়ার্নিং সিস্টেম’ (টিপিডব্লুউএস) নামে এই প্রযুক্তি চালকের ভুল করা ঠেকাবে। এই ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে সেই ব্যাপারে সমীক্ষা চালানোর জন্য ইতিমধ্যেই রেলের সংস্থা রাইটসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতি চালু হয়ে গেলে তা দেখভালের জন্য রেল একটি পৃথক সংস্থা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় এই সংস্থাটির নাম দেওয়া হয়েছে, সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর রেলওয়ে সেফটি সিস্টেম।
কী ভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করবে?
রেল বোর্ডের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে: এই প্রযুক্তিতে স্টেশনে ঢোকা এবং বেরনোর ক্ষেত্রে দু’টি সিগন্যালে একটি যন্ত্র বসানো থাকবে। তেমনই একটি যন্ত্র থাকবে রেলের ইঞ্জিনের সঙ্গে। লাল আলো থাকলে ট্রেনটি কোনও ভাবেই চালকের ভুলেও এগোবে না। কারণ লাল আলো থাকলে চালক যদি ভুল করে ট্রেনটি চালাতে যায় তখন এমার্জেন্সি ব্রেকটি আপনা থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠবে। ফলে ভুল করে চালক চালাতে চাইলেও ট্রেনটি চলবে না। একই ভাবে এক লাইনে দু’টি ট্রেন এসে গেলেও ইঞ্জিনের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সেনসর ব্যবস্থা তৎপর হয়ে এমার্জেন্সি ব্রেক
সক্রিয় হয়ে উঠবে। দু’টি ট্রেনই থেমে যাবে বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রথমে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার রুটে এই কাজ শুরু হবে। পরে শুরু হবে রুট ‘এ’ অর্থাৎ যেখানে সেমি-স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু আছে। যার মধ্যে হাওড়া এবং শিয়ালদহ আছে। প্রাথমিক ভাবে ওয়েস্টার্ন রেলের দু’টি রুটে এই ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। একটি ভাসিন-আরাকোনাম, দ্বিতীয়টি চেন্নাই-গুমদিপুণ্ডি। সারা দেশে ৩৩০০ কিলোমিটার রুটে এই ব্যবস্থা চালু করতে ২৫০ কোটি টাকা খরচ হবে রেল সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রথম দফায় ১৫০০ কিলোমিটার। পরবর্তী ধাপে ১৮০০ কিলোমিটার রাস্তায় এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। |