মুখে একরাশ দাড়ি। মোটা ফ্রেমের চশমা। মাথায় টাক লুকোতে একটি কাশ্মীরি টুপি।
উত্তরপ্রদেশের ভোট ময়দানে নতুন ‘নেতাজি’। ঠাকুর নেতা অমর সিংহ।
বলিউডের রঙিন দুনিয়া নেই। রাজনীতির রূপকথা নেই। তিহাড়ে কারাবাসের পর মুখে সেই অনাবিল হাসিটাও নেই। ছড়া কেটে কেটে শানানো আক্রমণ নেই। পুরনো দল নেই। নিজের কিডনি নেই (দু’টিই প্রতিস্থাপিত)। জীবনের সেই ছন্দ নেই। তবুও ‘দিব্যি’ আছেন অমর সিংহ। শরীরের জোরে নয়। বুকের জোরে।
শরীর দেয় না। চিকিৎসকরা নিত্য শাসানি দেন। তবু উত্তরপ্রদেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন এই রাজপুত নেতা। ছায়াসঙ্গী জয়া প্রদা। সবাই দূরে সরে গিয়েছেন। ব্যতিক্রম জয়াই। দুর্দিনেও যিনি বন্ধুর হাত ছাড়েননি। অমর হাসপাতালে থাকতে সাংবাদিকদের সামনে যিনি চোখের জল লুকোতে পারেননি। অমরের নতুন দল লোকমঞ্চ। ৪০৩টি আসনের মধ্যে ৩৯২টিতেই প্রার্থী দিয়েছেন। যেখানেই যাচ্ছেন, হাজার মানুষের ভিড়। কিন্তু আসন পাবেন ক’টা? “দেখুন চল্লিশটা আসন পেলেও আমি উল্লসিত হব না। শূন্যে আটকে গেলেও দুঃখে ভেঙে পড়ব না। জীবনের সব ক’টি রঙ আমি পরখ করে নিয়েছি। আজও চাইলে ঢালাও প্রচার পেতে পারি। অণ্ণা হজারে নিয়ে কোনও মন্তব্য করলে বা চিকনি-চামেলির সঙ্গে দু’বার নাচলে গোটা দিন টেলিভিশন জুড়ে থাকব। সে সব রসায়ন আমার জানা। সে দুনিয়া আমি পিছনে ফেলে এসেছি। মিডিয়ার প্রচার এড়িয়েই আমি হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা করেছি। এই শরীরেই। সবাই বলল, পারব না। আমি করে দেখিয়েছি।” প্রচারের ফাঁকে বললেন অমর।
গো-বলয়ের সবচেয়ে বড় রাজ্যের ভোট পার্বণে এখন নিজেকে প্রমাণ করতে চান তিনি। নিন্দুকের মুখ বন্ধ করতে চান। দল ছাড়া, পুরনো বন্ধু ছাড়াও তিনি যে বাঁচতে পারেন, গোটা দুনিয়াকে দেখাতে চান। তাঁর এই আগ্রাসী মনোভাবে ভোটে থাবা পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে অমরের পুরনো দলও। সমাজবাদী পার্টির এক নেতা বললেন, “অমর সিংহ আসন না পান, প্রতিটি কেন্দ্রে ৩-৫ হাজার করে ভোট কাড়বেন। ‘নেতাজি’ মুলায়ম সিংহ কল্যাণ সিংহকে আলিঙ্গন করলেন, আজম খানকে তুষ্ট করলেন, অমর সিংহকে কেন ব্রাত্য করলেন জানি না।”
মঞ্চে মঞ্চে অমর অবশ্য ‘মামু’কে হারানোর কথা বলছেন। ‘মামু’ অর্থাৎ মায়াবতী ও মুলায়মের আদ্যক্ষর। দু’দল থেকেই ভোট কেটে একেবারে নিজস্ব রাজনৈতিক অস্তিত্ব তৈরি করার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু তাঁর আসল লক্ষ্য যে মুলায়মের পতন, হাবেভাবে তা লুকনো থাকছে না। “আমি যদি একার চেষ্টায় ৩-৬ শতাংশও ভোট পাই, তবে ভোটের ফল বেরোনোর পর রাজনৈতিক পণ্ডিতরা বিশ্লেষণ করবেন, অমর সিংহকে ছাড়া মুলায়মের ক্ষতি কত হল! আজ কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না, চন্দ্রশেখরকে প্রধানমন্ত্রী বানাতে আমার কতটা ভূমিকা ছিল, কালামকে কে রাষ্ট্রপতি বানাল, সনিয়া-মনমোহনও অস্বীকার করতে পারবেন না পরমাণু চুক্তির সময় তাঁদের পরিত্রাতা কে ছিলেন। গত ভোটেও জয়ললিতা, চন্দ্রবাবু নায়ডু, ফারুক আবদুল্লা, মুলায়মের হয়ে প্রচার করেছেন। এখন আসছেন না কেন?”
এখন না হয় জীবনের নির্বাসন পর্ব কাটাচ্ছেন। কিন্তু ভবিষ্যতের গুটিও সাজাচ্ছেন সন্তর্পণে। গোটা রাজ্যে প্রার্থী দিলেও দেননি রায়বরেলী, অমেঠীতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাঁকে প্রায় রাহুল গাঁধীর সমতুলই নিরাপত্তা দেয়। ভবিষ্যতে মুলায়মের সঙ্গে যাবেন না, কিন্তু কংগ্রেসে ‘না’ নেই।
এর পরেও যদি আরও ‘ধোঁকা’ খান, তাতেও বিচলিত নন। জীবন তাঁকে সেই ‘শিক্ষা’ই দিয়েছে। “রাজনীতিতে আমার আর নাম কেনার দরকার নেই। অবসরে বই পড়ি। বাড়ির নীচে অডিটোরিয়াম আছে। সিনেমা দেখি। দিব্যি আছি...,” প্রচার শেষে গোমতীনগরে বিলাসবহুল বাড়িতে বসে বললেন অমর। বাড়ির নাম ‘ঐশ্বর্যা’। বন্ধু অমিতাভ বচ্চনের পুত্রবধূর নামে। |