কৃষি ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকাই ঝাড়খণ্ডের অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে। এবং কৃষিতে পিছিয়ে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে, সুষ্ঠু সেচ ব্যবস্থা না-থাকাকেই চিহ্নিত করেছে রাজ্যের কৃষি পরিচালন ও প্রশিক্ষণ সংস্থা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মূলত সেচ না-থাকার কারণে দীর্ঘকাল ধরে রাজ্যের চাষযোগ্য উর্বর জমির প্রায় ৩৭ শতাংশ পড়ে থাকছে অব্যবহৃত অবস্থায়। অথচ রাজ্যের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি কৃষির উপরেই নির্ভরশীল। কৃষির এই বেহাল দশায় ওই বিশাল জনসমষ্টির দুরবস্থার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাহত হচ্ছে গোটা রাজ্যের সার্বিক আর্থিক অগ্রগতি।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ঝাড়খণ্ডের কৃষি ব্যবস্থার সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন। বিশেষত চাষযোগ্য জমির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার হচ্ছে না বলে তিনি প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেন। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর ওই অভিযোগকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আজ ঝাড়খণ্ডের স্টেট এগ্রিকালচার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এসএএমইটিআই) থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে ঝাড়খণ্ডে চাষযোগ্য উর্বর জমির পরিমাণ ৩৮ লক্ষ হেক্টর। চাষ হচ্ছে ২৪ লক্ষ হেক্টর, অর্থাৎ ৬৩ শতাংশ জমিতে। চাষযোগ্য উর্বর বাকি ১৪ লক্ষ হেক্টর অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ জমি চাষের কাজে লাগানো যাচ্ছে না মূলত সেচের অভাবেই। এসএএমইটিআই-এর অধিকর্তা জটাশঙ্কর চৌধুরীর কথায়, “রাজের সেচের অবস্থা সন্তোজনক নয়। চাষযোগ্য ৩৮ লক্ষ হেক্টর জমির মধ্যে এই মুহূর্তে সেচসেবিত জমির পরিমাণ হচ্ছে মাত্র ৩ লক্ষ হেক্টর, দশ শতাংশেরও কম। বাকি জমিতে চাষবাস একেবারেই বৃষ্টি নির্ভর।” অর্থাৎ একেবারেই ভাগ্য-নির্ভর। অতিবৃষ্টি কিংবা অনাবৃষ্টি, প্রতি বছরই কোনও না কোনও অঘটন ঘটেই চলেছে।
প্রসঙ্গত তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের যে জমিতে চাষ হয় তারও বেশির ভাগটাই হচ্ছে এক-ফসলি। যার পরিমাণ হচ্ছে ১৮ লক্ষ হেক্টর। বাকি ৬ লক্ষ হেক্টর জমি দোফসলি। জটাশঙ্করবাবু বলেন, “সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি এক-ফসলি জমির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর কাজও শুরু হয়েছে। প্রধানত বৃষ্টির জল সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।” রাজ্য কৃষি দফতর সূত্রের খবর, পাহাড় এবং জঙ্গল ঘেরা ঝাড়খণ্ডে একলপ্তে বিশাল চাষের জমি অন্য রাজ্যের মতো নেই। তবে রাঁচি, হাজারিবাগ, সরাইকেলা, পশ্চিম সিংভূম, গুমলা জেলা ও তার আশপাশ এলাকার অনুর্বর জমিকে চাষযোগ্য করে তোলার প্রক্রিয়াও চলছে। |