রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার হল এক স্কুলছাত্রীর মৃতদেহ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মোবাইল কানে অন্যমনস্ক ভাবে লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরীর। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে বাঘা যতীন রেল স্টেশনের কিছুটা দূরে আপ লাইনে।
পুলিশ জানায়, মৃতা দীপা হালদার (১৭) বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলি এলাকার বাসিন্দা। ওই রাতে কয়েক জন বন্ধু ও দূর সম্পর্কের এক বোনের সঙ্গে রেললাইন ধরে হাঁটছিল ওই কিশোরী। তার বোন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মনিকা নস্করের বয়ানের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল কানে কথা বলতে বলতে লাইন ধরে হাঁটছিল দীপা। আচমকা ট্রেন এসে যায়। মোবাইল কানে থাকায় ট্রেনের শব্দ শুনতে পায়নি ওই কিশোরী। ট্রেনের ধাক্কায় তার মাথার একাংশ থেঁতলে যায়। কয়েক টুকরো হয়ে যায় বাঁ-পায়ের হাড়। গুরুতর জখম দীপা ঘটনাস্থলেই মারা যায় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা। ওই রাতে সাড়ে ১০টা নাগাদ রেল লাইনের পাশের ঝোপ থেকে দীপার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে দীপার পরিজনেদের দাবি, মনিকা এই ঘটনার কথা প্রথমে পরিবারের কাউকে কিছু জানায়নি। খোঁজাখুঁজি শুরু হলে শেষমেশ এই দুর্ঘটনার কথা বলে সে। ট্রেনে ধাক্কার বিষয়ে নিশ্চিত হতে তাই ওই সময়ে উপস্থিত দীপার আরও তিন জন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
মনিকা বলে, “আমরা হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলাম। মোবাইলে কথা বলতে বলতে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল দীপা। ট্রেন আসতে দেখে আমরা লাইন থেকে নেমে যাই। দীপা মনে হয় তখনও মোবাইলে কথা বলছিল। একটা আওয়াজ শুনি। ট্রেন চলে যাওয়ার পরে আর দীপাকে দেখতে পাইনি।”
মৃত কিশোরীর কাকা সুভাষ হালদার বলেন, “বাঘা যতীনে পড়তে যাচ্ছে বলে বিকেল সাড়ে পাঁচটার সময়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল দীপা। সঙ্গে মনিকাও ছিল। সাধারণত আটটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসে দীপা। কিন্তু ওই দিন ন’টার পরেও বাড়ি ফেরেনি। ওর মোবাইলে ফোন করেও সাড়া মিলছিল না। মনিকাও আমাদের বাড়িতে রাতে এসেছিল। ওকেও জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন কিছুই বলতে চাইছিল না মনিকা। তার পরে দীপার এক বান্ধবীকে ফোন করে জানা যায়, কোচিং থেকে মনিকা ও কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিল দীপা।”
এর পরে মনিকাকে চেপে ধরা হলে সে ওই দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে বলে জানিয়েছেন সুভাষবাবু। যাদবপুর জিআরপি থানায় খবর দেওয়া হয়। রাতেই খোঁজ করে ওই ছাত্রীর মৃতদেহ মেলে। শুক্রবার সকালে দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ডিজি (রেল) দিলীপ মিত্র বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ওই ছাত্রী মোবাইল কানে লাইন পেরোতে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি।” আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে যাদবপুর জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে। |