নিরাপত্তার কারণে বালি ব্রিজ দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু সেখান দিয়েই শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতিতে পণ্যবাহী মিনিট্রাক যাচ্ছিল কলকাতা থেকে উত্তরপাড়ায়। সে গাড়িকে আটকানোর ‘অপরাধে’ কর্তব্যরত এক নিরাপত্তাকর্মীকে চড় মারার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী দোলা সেনের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বরাহনগর থানায় এমনই অভিযোগ করেছেন সেই কর্মী। ওই কর্মী একটি বেসরকারি সংস্থার পক্ষে সেতুতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। দোলাদেবী অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। বরং তাঁরা পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন, গাড়ি আটকে টাকা দাবি করছিলেন ওই কর্মী।
পুলিশ সূত্রে খবর, নিবেদিতা সেতুর টোলপ্রকল্পের অধীনে একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা বালি ব্রিজে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। বৃহস্পতিবার বেশি রাতে ওই ব্রিজে ওঠার চেষ্টা করে বাঁশ ভর্তি একটি গাড়ি। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি উপলক্ষে সেই গাড়িটি দক্ষিণেশ্বর থেকে উত্তরপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। শুক্রবার দুপুরের পরে বরাহনগর থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগ অনুযায়ী, সেতুতে কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীরা গাড়িটি আটকালে চালক ও আরোহীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা বাধে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন দোলা সেন। নিরাপত্তারক্ষী প্রভাস ঘুঘুকে চড় মারেন তিনি। |
থানায় দায়ের করা পাল্টা অভিযোগে দোলা সেনের তরফে উত্তরপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর সুমিত চক্রবর্তীর দাবি, বিয়ের প্রস্তুতির জন্য কলকাতা থেকে বিভিন্ন মালপত্র উত্তরপাড়ায় যাচ্ছিল। তিনিই ওই কাজের তদারকি করছিলেন। ওই নিরাপত্তকর্মীরা ওই গাড়িটিকে চার বার আটকায় এবং ৫০০ টাকা দাবি করে। তিনি আরও বলেন, “আজ দুপুরে সাড়ে তিনটের সময়ে বরাহনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।”
আর দোলাদেবী বলেন, “পূর্ণেন্দুদার মেয়ের বিয়ের আয়োজনে উত্তরপাড়ায় তাঁর বাড়িতে ছিলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটা থেকে আজ, শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত পূর্ণেন্দুদার বাড়িতেই ছিলাম। ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণেশ্বর এলাকায়। আর আমি ছিলাম উত্তরপাড়ায়।” দোলাদেবীরও অভিযোগ, “কাল রাত থেকেই বালি ব্রিজ দিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে আমাদের যে সমস্ত গাড়ি আসছিল, কিছু লোক সেই গাড়ি আটক করে টাকা-পয়সা চাইছিল। অবস্থা সামাল দিতে কখনও উত্তরপাড়ার কাউন্সিলর, কখনও পূর্ণেন্দুদার আপ্ত সহায়ককে ঘটনাস্থলে যেতে হচ্ছিল।” তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জমা পড়া নিয়ে দোলাদেবীর মন্তব্য, “উত্তরপাড়ার পুলিশ জানে, ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না। তবু অভিযোগ হলে আইন তার পথে চলবে।”
তবে প্রশ্ন উঠেছে, যে সেতু দিয়ে মালবাহী গাড়ি চলারই কথা নয়, সেখানে বাঁশ বা অন্যান্য মালপত্র বোঝাই মিনিট্রাক বারবার চলাচল করল কী করে? সংশ্লিষ্ট ট্রাফিককর্মীর ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ যদি ‘সত্যি’ হয়, তা হলে মন্ত্রীর মেয়ের বিয়ের আয়োজনের জন্য নিয়ম ভেঙে বালি ব্রিজ দিয়ে মিনিট্রাক যাওয়ার ‘সাজা’ই বা কী হবে?
স্বভাবতই এ প্রশ্নের জবাব পুলিশের কাছে মেলেনি। তবে ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বিশ্বজিৎ ঘোষ স্বীকার করেন, “বালি ব্রিজ দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি ও ভারী যান চলাচল করার কথা নয়। নিবেদিতা সেতু দিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত করার কথা।” থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পরে ট্রাফিককর্মী প্রভাসবাবুও আর এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। |