খনি থেকে কয়লা পরিবহণের সমস্যা মেটাতে এ বার নিজেই রেল লাইন পাতার সিদ্ধান্ত নিল রাষ্ট্রায়ত্ত কোল ইন্ডিয়া। এ জন্য ৬ হাজার কোটি টাকা লগ্নি করবে তারা।
দেশে কয়লার জোগানে ঘাটতি যাতে শিল্পোৎপাদন বাড়ার পথে বাধা না-হয়, তার জন্যই নিজের উদ্যমে পরিকাঠামো তৈরির এই সিদ্ধান্ত কোল ইন্ডিয়ার। বিশেষ করে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কয়লার আকাল সামাল দিতেই এই উদ্যোগ বলে শুক্রবার জানিয়েছেন সংস্থার নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জোহরা চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি খনি থেকে রেল লাইন পর্যন্ত আসার জন্য রাস্তাও তৈরি করবে তারা। মোট লগ্নির ৯০০ কোটি খরচ হবে রাস্তা তৈরিতে। জোহরাদেবী জানান, “লাইন পাতার জন্য একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। ২০১৬-১৭ সালে ৫৬ কোটি টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার কথা মাথায় রেখে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এই লগ্নির সিদ্ধান্ত। আর্থিক বৃদ্ধি বাড়াতে কেন্দ্রের লক্ষ্য পূরণের বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে ভাবা হয়েছে।”
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কোল ইন্ডিয়া নিজস্ব রেল পরিকাঠামো গড়লে শিল্পের পক্ষে কয়লা পাওয়াও সহজ হবে। বণিকসভা ফিকি-র পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা গৌরব স্বরূপ বলেন, “চাহিদা অনুযায়ী কয়লা-ভাণ্ডার দেশে যথেষ্টই। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবেই উত্তোলন ও জোগানে সমস্যা হয়।” একমত বেঙ্গল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হর্ষ ঝা ও শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সিএমডি হেমন্ত কানোরিয়াও। এতে কয়লা সরবরাহ সমস্যা অনেকটা মিটবে বলেই তাঁদের ধারণা। ঝা-র মতে, “প্রতিযোগিতার মুখে পড়লে ভারতীয় রেলের পরিষেবারও উন্নতি হবে।” তবে খরচের বোঝার বিষয়টিতেও তিনি কোল ইন্ডিয়াকে গুরুত্ব দিতে বলেন। কারণ, খরচ বাড়লে কয়লার দাম বাড়ার সম্ভাবনা।
যে সব অঞ্চলে লাইন পাতা হবে, তার মধ্যে আছে ওড়িশার ঝাড়সুগুডা, তালচের খনি সংলগ্ন আঙ্গুলা থেকে কলিঙ্গনগর, ছত্তীসগঢ়ের বারোধ থেকে অন্নুপুরা ও ভূদেবপুর, মান্ডরায়গড়, ঝাড়খণ্ডের উত্তর করণপুরা। পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা ও তা রূপায়ণে সেল-সহ আরও কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গড়া হবে বলে জানান জোহরাদেবী। সংস্থার ডিরেক্টর এ কে সিংহ জানান, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে শীঘ্রই কোল ইন্ডিয়া ও বাকি সংস্থাগুলি বৈঠকে বসবে।
বর্তমানে বেশ কিছু অঞ্চলে খনি থাকা সত্ত্বেও তা থেকে মূলত দু’টি কারণে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না কোল ইন্ডিয়া। প্রথমত, পরিবেশ দফতরের অনুমোদন পেতে দেরি। দ্বিতীয়ত, কয়লা তোলার পর তা পরিবহণের পরিকাঠামোর অভাব। পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় ওয়াগন পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে জোগান বাড়াতে কয়লা আমদানির বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে কোল ইন্ডিয়া। জোহরাদেবী বলেন, “আমদানি করা কয়লা কিনতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলে বিবেচনা করে দেখব। দাম সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দিতে হবে।” চলতি অর্থবর্ষে ৪৪ কোটি টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংস্থা। ২০১২-’১৩ সালের জন্য ৪৬ কোটি ৪০ লক্ষ টনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে। |