কাউকে আগেভাগে কিছু জানানো হয়নি। শুক্রবার হঠাৎই কলকাতা থেকে নিজেদের বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ উড়ান বাতিল করে দিল কিংফিশার। সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। রাত পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে অশান্তি চলে। কিংফিশারের আন্তর্জাতিক উড়ানগুলি অবশ্য যথারীতি চালু ছিল।
অভ্যন্তরীণ রুটে কলকাতা থেকে পাঁচটি উড়ান চলত কিংফিশারের। তার মধ্যে তিনটি উড়ানই এ দিন বাতিল করা হয়। সেগুলি চলত দিল্লি, ভুবনেশ্বর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রুটে। দেশের মধ্যে এ দিন শুধু মুম্বই ও বাগডোগরা রুটে উড়ান চালিয়েছে ওই সংস্থা। একসঙ্গে এত উড়ান বাতিল করলে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-কে আগে থেকে জানানোর কথা। কিন্তু এ দিন দুপুরের পরে কিংফিশারের কর্মীরা আচমকাই কাজ বন্ধ করে দেন। ফলে উড়ান বাতিল করে দিতে হয়। শুক্রবার কলকাতা থেকে কিংফিশারের ঢাকা ও ব্যাঙ্ককের উড়ান দু’টি চলেছে।
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা রাতে বলেন, “এ ভাবে কাউকে কিছু না-জানিয়ে উড়ান বাতিল করা যায় না। বিষয়টি আমি দিল্লির সদর দফতর এবং ডিজিসিএ-কে জানিয়েছি।” কিন্তু হঠাৎ কাজ বন্ধ করা হল কেন? কেনই বা বাতিল হল অভ্যন্তরীণ রুটের অধিকাংশ উড়ান?
কিংফিশার সূত্রের খবর, কয়েক মাস ধরে তাদের কলকাতার কর্মীরা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। কর্মীদের ক্ষোভ মূলত তা নিয়েই। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টায় বাগডোগরার উড়ান ছাড়ার সময় যাত্রীদের সঙ্গে গণ্ডগোল বাধে কর্মীদের। একই ভাবে রাতে মুম্বই ও ভুবনেশ্বরের উড়ান বাতিল ঘোষণা নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন কর্মীরা। অভিযোগ, কর্মীদের কাউন্টারে পাওয়া যাচ্ছিল না।
ব্যাপারটা শুধু এ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারের পরে কলকাতা থেকে তাদের সব অভ্যন্তরীণ উড়ানই তুলে নেওয়া হবে বলে কিংফিশারের তরফে মৌখিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রাত পর্যন্ত বারবার যোগাযোগ করা হলেও বিমান সংস্থার তরফে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু যাঁরা টিকিট কেটেছেন, তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। মঙ্গলবার অফিসের কাজে কিংফিশারের উড়ানে দিল্লি যাওয়ার কথা মৈনাক চট্টোপাধ্যায়ের। শুক্রবার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “উড়ান বাতিলের কথা আমাকে কেউ জানায়নি। বুঝতে পারছি না, কী করা উচিত। ওই দিন দিল্লিতে খুব জরুরি বৈঠক আছে।”
বেশির ভাগ ট্রাভেল এজেন্ট জানান, সোমবার থেকে কম্পিউটার সিস্টেমে কিংফিশার সংস্থার কলকাতা উড়ানের কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। লক্ষ্মীনারায়ণ ট্রাভেলের ম্যানেজার দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “অনেকে আমাদের কাছ থেকে টিকিট কেটে রেখেছেন। তাঁরা সমস্যায় পড়বেন।”
মার্চের ১৯ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত কলকাতা থেকে ঢাকা এবং ব্যাঙ্কক রুটেও উড়ান চলবে না বলেও ট্রাভেল এজেন্টদের তরফে জানানো হয়েছে। ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান অনিল পাঞ্জাবি বলেন, “কিংফিশার লিখিত ভাবে কিছু জানায়নি। আমরা কম্পিউটার থেকে জেনেছি। গ্রাহকেরা এসে আমাদের চেপে ধরছেন। টাকা ফেরত চাইছেন।” সব মিলিয়ে যাত্রী এবং ভ্রমণ সংস্থার প্রতিনিধিরা আতান্তরে। |