|
|
|
|
‘১০০ দিনের কাজে’ পুকুর কেটে বিপাকে শ্রমিকেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুবরাজপুর |
ঢোল পিটিয়ে মাস দুই আগে ‘একশো দিনের প্রকল্পে’ একটি পুকুর কাটা হয়েছে। কাজ করেছেন প্রায় ৭০০ জবকার্ডধারী। কিন্তু ওই কাজের টাকা পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে দুবরাজপুরের তাপাসপুর গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। সিপিএম পরিচালিত চিনপাই পঞ্চায়েতের দাবি, এই কাজে পঞ্চায়েতের কোনও শিলমোহর ছিল না। এক যুবক নিজের ইচ্ছায় ঢোল পিটিয়ে এই কাজ করিয়েছেন। বিডিও গোবিন্দ দত্ত বলেন, “প্রধান যেহেতু লিখিত অনুমতি দেননি, তাই এই কাজ বৈধ নয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।”
এ দিকে, মোট চার দিন কাজ করেও টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। টাকা না পেলে পঞ্চায়েত ও ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখাবেন বলে শ্রমিকেরা হুমকি দিয়েছেন। এই টানাপোড়েনের মধ্যে প্রধান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শ্যামসুন্দর মুখোপাধ্যায়।
একশো দিনের প্রকল্পে পুকুর কাটতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এক- বার্ষিক আর্থিক বাজেটে এই কাজের উল্লেখ থাকতে হবে। দুই- যদি দেখা যায় মাটি কাটার জন্য এককালীন ২ লক্ষ বা তার নীচে ব্যয় বরাদ্দ হয়, তা হলে সেই কাজ করানোর পুরো দায়িত্ব পঞ্চায়েত নিতে পারে। কিন্তু এর উপরে হলে বিডিওকে জানাতে হবে। তিন-যেখানেই কাজ হোক না কেন এলাকার জবকার্ডধারীরা আবেদন করতে পারেন। তবে এই কাজ করার আগে বেনিফিয়ারি (উপভোক্তা) কমিটি গঠন করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। চার-সুপারভাইজার যে কেউ হতে পারেন এবং কাজের দায়িত্ব পঞ্চায়েতের কোনও সদস্য বা এলাকার পরিচিত কাউকে দেওয়া যেতে পারে। কাজ করার জন্য শ্রমিকদের অবশ্যই ফর্ম পূরণ করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে, কোনও ফর্ম পূরণ করা হয়নি। সুপারভাইজারও ছিল না। |
|
এই পুকুর কাটাকে ঘিরে বিতর্ক। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত |
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তাপাসপুর গ্রামের ‘বামুনে’ পুকুর সংস্কারের জন্য দু’দফায় ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৭০ টাকা করে মোট ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৪০ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সদ্য প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “৩০ ডিসেম্বর বেনিফিসিয়ারি কমিটি (উপভোক্তা) গঠন করতে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। গ্রামের ৭০-৮০ জন বাসিন্দাকে নিয়ে উপভোক্তা কমিটি গঠনের চেষ্টা চালিয়েও সফল হয়নি।” তাঁর দাবি, “বলেছিলাম, উপভোক্তা কমিটি না করে কোনও ভাবেই ১০০ দিনের প্রকল্পে ওই কাজে হাত দেব না। ২ জানুয়ারি জানতে পারি রাজু বাগদি নামে এক যুবকের নির্দেশে কাজটি শুরু হয়েছে। বিডিওকে বিষয়টি জানাই। বিডিও নির্দেশ দিয়েছিলেন বেআইনি কাজের কোনও টাকা মিলবে না।”
যদিও অভিযুক্ত যুবক রাজু বাগদি নিজেকে তৃণমূল কর্মী দাবি করে বলেন, “প্রধানের নির্দেশে শুধু এই কাজটি নয়, এলাকার অন্যান্য কাজেও এ ভাবেই এগিয়েছি। হঠাৎ উনি অন্য কথা বললে আমার কিছু করার নেই।” তৃণমূলের অভিযোগ, এর আগেও প্রধান একাধিক নিয়মবহির্ভূত কাজ করেছেন। এ বারও সেই রকম কিছু করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তাই তিনি প্রধান পদ থেকে সরে পড়েছেন। সিপিএমের পাল্টা দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই এমনটা হয়েছে। তারা এলাকার মানুষকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে। ইস্তফা প্রসঙ্গে শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “গত কয়েক মাস থেকে শারীরিক সমস্যায় ভুগছি। তাই অব্যাহতি চেয়েছিলাম। দল মেনে দিয়েছে।”
কিন্তু এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন শ্রমিকেরা। শান্তি গড়াই, রাবন বাগদি, সুকুমার বাগদিদের ক্ষোভ, “আমরা পড়াশোনা জানি না। তাই কে ডেকেছে-না ডেকেছে জানি না। কাজ করেছি পয়সা চাই।” তৃণমূলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিত্রের দাবি, “এর আগেও পঞ্চায়েত ঘনিষ্ঠ ওই যুবক নানা কাজ করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই।” শ্যামসুন্দরবাবুর অভিযোগ, “বিষয়টি জানতে পেরে আমি প্রতিবাদ করেছিলাম। সে কারণে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে রাজু। তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি।” পুলিশ জানিয়েছে, একশো দিন প্রকল্পের কাজ কোথায়, কখন হবে, সে কাজ বৈধ না অবৈধ সেটা দেখার পুলিশের নয়। ওই যুবকের বিরুদ্ধে শুধু হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ছিল। তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।
|
|
|
|
|
|