প্রায় তিন দশক আগে যাতায়াতের সুবিধার জন্য নিভুজিবাজার থেকে হরিশঙ্করপুর পাকা রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল। বিটরা-মেমারি রোডের সঙ্গে যুক্ত করাও হয়েছিল। কিন্তু রাস্তা পাকা হলেও তা এখন এতটাই বেহাল যে চলতে চলতে গেলেই বিকল হচ্ছে যন্ত্রাংশ বা ছিটকে গর্তে পড়ে ফাটল ধরছে চাকায়। রাস্তাজুড়ে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্তও। বৃষ্টির সময়ে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গর্তগুলির মেরামতির জন্য মাস সাতেক আগে কিছু ইট ফেলা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাতেই এখন সেই সব ইটের অস্তিত্ব নেই। বিশেষ করে বামনাপাড়া থেকে হরিশঙ্করপুর অবধি প্রায় ৮ কিলোমিটার রাস্তাটির হাল সবচেয়ে খারাপ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তাটি তৈরির সময়ে স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করেছিল পূর্ত দফতর। জমি দিয়েছিলেন পাশের বেলেরহাট, হরিশঙ্করপুর, উপলতি, দেউলপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁরা এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। আর সেই জন্যই ব্যহত হচ্ছে রাস্তা সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া চাষিদের তরফে সঞ্জয় পাল, প্রদীপ পালদের বক্তব্য, “সরকারি ক্ষতিপূরণ চেয়ে বছরের পর বছর সরকারি দফতরে ঘুরেছি। লাভ হয়নি কিছুই।” |
কালনা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে রাস্তা সংস্কার ও সম্প্রসারণের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়। রাস্তার দু’পাশে মাটি ফেলে ঠিকাদার সংস্থা কাজও শুরু করে কিছুটা। হরিশঙ্করপুর থেকে কিছুটা রাস্তায় কাজ এগোনোর পরেই শুরু হয় বিপত্তি। ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় চাষিরা ঠিকাদারদের কাজে বাধা দিতে থাকে। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদার সংস্থার তরফে কাজ শুরু করার জন্য বারবার চিঠি পাঠানো হয় পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের। কিন্তু সদুত্তর মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে মহকুমাশাসক, জেলাশাসক ও পঞ্চায়েত সভাপতির বৈঠকে বারবার আলোচনা করলেও সমস্যার জট খোলেনি।
অন্য দিকে, রাস্তা সংস্কারের কাজ আটকে থাকায় হয়রান হচ্ছেন নিত্যযাত্রী ও বাসিন্দারা। কালনা-নিভুজিবাজার রোডের নিত্যযাত্রী অমল সেন বলেন, “এই রাস্তায় বাসে ওঠার পরেই প্রবল ঝাঁকুনিতে সারা শরীর ব্যথা করতে শুরু করে।” আবার বাসিন্দাদের অভিযোগ, যারা জমি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের ক্ষতিপূরণের সরকারি অর্থ বহু চেষ্টাতেও মেলেনি। বাসকর্মীরাও বিরক্ত। এক বেসরকারি বাসের কর্মী তপন ঘোষ বলেন, “রাস্তা সারানোর দাবিতে আগে দু’বার বাস বন্ধ হয়েছে। যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে হয়তো যে কোনও দিন আবার বাস বন্ধ রাকার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
কিন্তু রাস্তা সারানোর কাজ কবে শুরু হবে আবার? নিশ্চিত উত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন। পূর্ত দফতর (সড়ক), কালনা শাখার সহ-বাস্তুকার সুনীতি বিশ্বাস অবশ্য বলেন, “চাষিদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। ওরা বুঝলেই রাস্তার কাজ শুরু করা যাবে।”
মহকুমাশাসক (কালনা) সুমিতা বাগচি বলেন, “আগের দরপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে দরপত্র ডেকে রাস্তা সারানোর উদ্যোগ হয়েছে। জেলা পূর্ত দফতর চাষিদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। সেখান থেকে টাকা এলেই সেই টাকা চাষিদের দিয়ে দেওয়া হবে।” |